দীর্ঘ সময় খারাপ অবস্থা কাটানোর পর দেশে মোটরসাইকেলের বাজার আবার চাঙা হয়ে উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোটরসাইকেল বিক্রি ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

মোটরসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর হিসাবে, গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজারের আশপাশে।

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার শাহ মোহাম্মদ আশেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে একটি আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কয়েক মাস ধরে বাজারে বিক্রির হার ধীরে ধীরে বাড়ছে; অর্থাৎ গ্রাহক চাহিদায় একটি সুস্পষ্ট ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের কোম্পানিও বেশ ভালো করছে।’

আশেকুর রহমানের মতে, ভালো বিক্রির কারণ চারটি—মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আসা, ডলারের বাজার স্থিতিশীল হওয়া, কৃষি অর্থনীতি ভালো করায় গ্রামে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি এবং প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়া।

এর বাইরে আরেকটি কারণের কথা বলছে কোম্পানিগুলো। সেটি হচ্ছে, দেশে গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন ক্রেতা তৈরি হয়েছে, যাঁরা মূলত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী।

২০১৮ সালের পর থেকে দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে ৯টির মতো কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের ইয়ামাহা, হোন্ডা ও সুজুকি এবং ভারতের উত্তরা মোটরস, টিভিএস অটো ও হিরোর মতো প্রতিষ্ঠান। দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে রয়েছে রানার অটোমোবাইলস। গত বছর বাজারে এসেছে যুক্তরাজ্যের রয়েল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল।

কোম্পানিগুলোর তৈরি করা হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাজারে বরাবরের মতো ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে বাজাজ। এসিআই মোটরস বলছে, তারা দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে তারা ৮৬ হাজার ১২৫টি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশে জাপানের ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের একমাত্র পরিবেশক এসিআই মোটরস। ২০১৬ সাল থেকে তারা ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে।

এসিআই মোটরসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সুব্রত রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন শুরু করি, তখন দেশে মাত্র কয়েক হাজার ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। সেখান থেকে আমরা এখন বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জাপানি পণ্য কিনতে পছন্দ করেন। তাঁরা মোটরসাইকেলে খোঁজেন স্বাচ্ছন্দ্য, নির্ভরতা, গুণগত মান ও উন্নত ব্রেকিং–ব্যবস্থা। এ কারণেই ইয়ামাহা ভালো করছে।

বাজারে বাজাজ ও ইয়ামাহার পর রয়েছে সুজুকি, হিরো, হোন্ডা, টিভিএস, রয়েল এনফিন্ড, রানার এবং আরও কিছু ব্র্যান্ড।

বিগত অর্থবছরে বেশি ভালো করা অন্য দুই প্রতিষ্ঠান হলো হিরো ও হোন্ডা। এর মধ্যে হিরোর বিক্রি ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর হোন্ডার বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। হিরো জানিয়েছে, তারা গত অর্থবছরে ৮০ হাজারের কিছু বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে। অন্যদিকে হোন্ডা সূত্রে জানা গেছে, তাদের বিক্রীত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৭৩ হাজারের বেশি।

দেশে ২০২১ ও ২০২২ সালের প্রতিবছর ছয় লাখের কাছাকাছি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। এরপরই মূলত বাজারে বিক্রি কমতে থাকে। মার্কিন ডলারের দামের কারণে মোটরসাইকেলের দর অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিতে ভাটা পড়ে।

২০২২ সালের শুরুর দিকে এক মার্কিন ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা, যা এখন ১২২ টাকার আশপাশে। ডলারের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজনের খরচ বেড়ে যায়। কারণ, মোটরসাইকেলের বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। তবে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দাম স্থিতিশীল আছে। দাম কিছু কমেছে। বাজারে ডলারের সরবরাহও বেড়েছে। ফলে পণ্য আমদানিতে ডলার–সংকট কেটেছে।

মূল্যস্ফীতি গত জুনে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা একসময় ১২ শতাংশের বেশি ছিল। কৃষিতে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ধানের ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। ফলে গ্রামে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে।

কোম্পানিগুলো বলছে, বিগত অর্থবছরে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়লেও সার্বিকভাবে বাজার পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। ২০১৮ সালে মোটরসাইকেল নীতিমালায় ২০২৭ সাল নাগাদ বার্ষিক উৎপাদন ১০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। সে হিসাবে ২০২৫ সালে অন্তত আট লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু খাতটি সেখান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বিজয় কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৩ সালের শুরু পর্যন্ত মোটরসাইকেলের বাজার এগোচ্ছিল। তারপর বিক্রি কমে যায়। এর বড় কারণ, ডলারের দাম বেড়ে খরচ বেড়ে যাওয়া এবং মূল্যবৃদ্ধি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ২০২৫–২৬ অর্থবছর ভালো যাবে। এ অর্থবছরে বাজারে ১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা  সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার। 

সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।

এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার