মোটরসাইকেল বিক্রি ১৭ শতাংশ বেড়েছে
Published: 27th, July 2025 GMT
দীর্ঘ সময় খারাপ অবস্থা কাটানোর পর দেশে মোটরসাইকেলের বাজার আবার চাঙা হয়ে উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোটরসাইকেল বিক্রি ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
মোটরসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর হিসাবে, গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজারের আশপাশে।
বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার শাহ মোহাম্মদ আশেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে একটি আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কয়েক মাস ধরে বাজারে বিক্রির হার ধীরে ধীরে বাড়ছে; অর্থাৎ গ্রাহক চাহিদায় একটি সুস্পষ্ট ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের কোম্পানিও বেশ ভালো করছে।’
আশেকুর রহমানের মতে, ভালো বিক্রির কারণ চারটি—মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আসা, ডলারের বাজার স্থিতিশীল হওয়া, কৃষি অর্থনীতি ভালো করায় গ্রামে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি এবং প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়া।
এর বাইরে আরেকটি কারণের কথা বলছে কোম্পানিগুলো। সেটি হচ্ছে, দেশে গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন ক্রেতা তৈরি হয়েছে, যাঁরা মূলত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী।
২০১৮ সালের পর থেকে দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে ৯টির মতো কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের ইয়ামাহা, হোন্ডা ও সুজুকি এবং ভারতের উত্তরা মোটরস, টিভিএস অটো ও হিরোর মতো প্রতিষ্ঠান। দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে রয়েছে রানার অটোমোবাইলস। গত বছর বাজারে এসেছে যুক্তরাজ্যের রয়েল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল।
কোম্পানিগুলোর তৈরি করা হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাজারে বরাবরের মতো ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে বাজাজ। এসিআই মোটরস বলছে, তারা দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে তারা ৮৬ হাজার ১২৫টি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে জাপানের ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের একমাত্র পরিবেশক এসিআই মোটরস। ২০১৬ সাল থেকে তারা ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে।
এসিআই মোটরসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সুব্রত রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন শুরু করি, তখন দেশে মাত্র কয়েক হাজার ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। সেখান থেকে আমরা এখন বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জাপানি পণ্য কিনতে পছন্দ করেন। তাঁরা মোটরসাইকেলে খোঁজেন স্বাচ্ছন্দ্য, নির্ভরতা, গুণগত মান ও উন্নত ব্রেকিং–ব্যবস্থা। এ কারণেই ইয়ামাহা ভালো করছে।
বাজারে বাজাজ ও ইয়ামাহার পর রয়েছে সুজুকি, হিরো, হোন্ডা, টিভিএস, রয়েল এনফিন্ড, রানার এবং আরও কিছু ব্র্যান্ড।
বিগত অর্থবছরে বেশি ভালো করা অন্য দুই প্রতিষ্ঠান হলো হিরো ও হোন্ডা। এর মধ্যে হিরোর বিক্রি ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর হোন্ডার বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। হিরো জানিয়েছে, তারা গত অর্থবছরে ৮০ হাজারের কিছু বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে। অন্যদিকে হোন্ডা সূত্রে জানা গেছে, তাদের বিক্রীত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৭৩ হাজারের বেশি।
দেশে ২০২১ ও ২০২২ সালের প্রতিবছর ছয় লাখের কাছাকাছি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। এরপরই মূলত বাজারে বিক্রি কমতে থাকে। মার্কিন ডলারের দামের কারণে মোটরসাইকেলের দর অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিতে ভাটা পড়ে।
২০২২ সালের শুরুর দিকে এক মার্কিন ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা, যা এখন ১২২ টাকার আশপাশে। ডলারের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজনের খরচ বেড়ে যায়। কারণ, মোটরসাইকেলের বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। তবে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দাম স্থিতিশীল আছে। দাম কিছু কমেছে। বাজারে ডলারের সরবরাহও বেড়েছে। ফলে পণ্য আমদানিতে ডলার–সংকট কেটেছে।
মূল্যস্ফীতি গত জুনে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা একসময় ১২ শতাংশের বেশি ছিল। কৃষিতে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ধানের ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। ফলে গ্রামে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে।
কোম্পানিগুলো বলছে, বিগত অর্থবছরে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়লেও সার্বিকভাবে বাজার পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। ২০১৮ সালে মোটরসাইকেল নীতিমালায় ২০২৭ সাল নাগাদ বার্ষিক উৎপাদন ১০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। সে হিসাবে ২০২৫ সালে অন্তত আট লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু খাতটি সেখান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বিজয় কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৩ সালের শুরু পর্যন্ত মোটরসাইকেলের বাজার এগোচ্ছিল। তারপর বিক্রি কমে যায়। এর বড় কারণ, ডলারের দাম বেড়ে খরচ বেড়ে যাওয়া এবং মূল্যবৃদ্ধি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ২০২৫–২৬ অর্থবছর ভালো যাবে। এ অর্থবছরে বাজারে ১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল