নাম যার উদ্ভিদ, সে তো মাটি ভেদ করেই উঠবে, মাটিতে বাঁচবে, মাটি থেকে খাবার গ্রহণ করবে। কিন্তু পৃথিবীর প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়। মাটিতে না জন্মে বাতাস মানে শূন্যে ঝুলে ঝুলে গাছগুলো বাড়তে থাকে, আবার সেসব গাছে ফুলও ফোটে, ফল ধরে। বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প মানে পানি ও পুষ্টি নিয়ে সেসব গাছ বেঁচে থাকে। বাতাসে বসবাস, বাতাসেই বেঁচে থাকা— তাই উদ্ভিদবিদেরা এসব গাছের নাম রেখেছেন এয়ার প্ল্যান্ট। কখনো এদের মাটির কোনো দরকার হয় না। গাছটাকে একটা জিআই তারে বড়শির হুকের মতো আটকে গ্রিল, রেলিংয়ে বা ছাদের সঙ্গে শিকের মতো ঝুলিয়ে রাখলে দিব্যি সে বছরের পর বছর বেঁচে থাকে। মাঝেমধ্যে গাছে হালকা পানি স্প্রে করলেই হলো আর কিছু চায় না সে। গাছগুলোকে দেখে ভ্রম হয়, প্লাস্টিকের গাছ না তো! হাত দিয়ে গাছগুলো ছুঁয়ে দেখার পরও ওগুলোকে আসল জীবন্ত গাছ বলে মনে হচ্ছিল না।

এয়ার প্লান্ট ওর ইংরেজি বা সাধারণ নাম হলেও উদ্ভিদবিদেরা এ গাছগুলোকে উদ্ভিদ–জগতে তিলান্ডশিয়া গণের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ গণে সারা বিশ্বে প্রায় ৬৫০টি প্রজাতি রয়েছে। কয়েক বছর হলো তিলান্ডশিয়ার কয়েকটি প্রজাতির গাছ এ দেশে এসেছে। ঢাকার কলেজে গেটে কাশবন নার্সারি, ফ্যালকন নার্সারি, সাভারের বরিশাল নার্সারি, ডিসি নার্সারি ইত্যাদিতে এ গাছের দেখা পেলাম। এমনকি অনেক শৌখিন বাগানিদের অন্দরমহলে ঝুলছে এ গাছ। খুলনা শহরে শান্তিধাম মোড়ের কাছে ডেন্টাল সার্জন শেখ আবদুল্লাহ আল মামুনের বাড়ির ছাদবাগানে বছর দুয়েক আগে যখন একে প্রথম দেখি, তখনই তার ব্যতিক্রমী রূপ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আরও মুগ্ধ হয়েছিলাম গাছটির প্রতি মামুন ভাইয়ের মমতা দেখে। একটা ছোট্ট গাছ, যার পাতাগুলোও সরু, ফুলের কোনো শ্রী নেই, শূন্যে বাতাসে দুলছে—সে গাছটিকেই কেন তিনি এত যত্ন করে বড় করছেন? নিশ্চয়ই এর ভিন্ন কোনো আকর্ষণ আছে!

কলেজ গেটের কাশবন নার্সারিতে গিয়ে দেখা হলো তানভীরের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁরা এ গাছ এনেছেন থাইল্যান্ড থেকে। তাঁদের সংগ্রহে আছে তিলান্ডশিয়ার পাঁচ প্রজাতির গাছ। একটি প্রজাতির গাছের পাতা দেখলাম টকটকে লাল, একটির পাতা সবুজ, অন্যটির পাতা গোলাপি। আর এক প্রজাতির গাছ সেমাই সুতোর মতো জটলা পাকানো, নাম স্প্যানিশ মস (Tillandsia usneoides)। হালকা সবুজ রঙের এ গাছেরা অনেকটা স্বর্ণলতার মতো পরাশ্রয়ী স্বভাবের। গাছের অংশ ছিঁড়ে কোনো গাছের ডালে পেঁচিয়ে রেখে দিলে সেখানেই বাড়তে থাকে ও অজস্র শাখায়িত ডাল-পাতা নিচে ঝুলিয়ে দেয়।

Tillandsia ionantha প্রজাতির গাছের পাতাগুলোর গোড়া সবুজাভ, ওপরের অংশ লালচে, পাতার আগা নিচের দিকে কিছুটা বাঁকানো। লম্বা কাঠি বা নলের মতো পাকানো ঘন নীল বা বেগুনি পাপড়ির ফুল, হলদে সুতার মতা পুংকেশর ও পরাগধানী। গাছ ৬ থেকে ৮ সেন্টিমিটার লম্বা। গোড়া থেকে গুচ্ছাকারে আনারসগাছের মতো পাতা জন্মে। তিলান্ডশিয়া গাছ ও আনারসগাছ একই গোত্রের, গোত্রের নাম ব্রোমেলিয়েসি। পাতা ৪ থেকে ৯ সেন্টিমিটার লম্বা, শক্ত, সরু, অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ বা সুচাল। পুষ্পমঞ্জরি যৌগিক, অর্থাৎ মঞ্জরিতে কয়েকটা ফুল ফোটে। কিন্তু পুষ্পমঞ্জরির দণ্ডটি অনেক খাটো হওয়ায় তা পাতার আড়ালে থেকে যায়, ফুলের মাথাটা শুধু পাতার আড়াল থেকে উঁকি দেয়।

ফরাসি উদ্ভিদবিদ জুলিস এমিলি প্লাঙ্কচন ১৮৫৪-৫৫ সালে এ প্রজাতির বর্ণনা দেন। কার্ল লিনিয়াস সুইডিশ চিকিৎসক ও উদ্ভিদবিদ এলিয়াস তিলান্ডজের নামানুসারে তিলান্ডশিয়া গণের নামকরণ করেন। মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকো এ গাছের জন্মভূমি। এ গাছ অন্য সাধারণ গাছের চেয়ে আরও অনেক দিক থেকেই ব্যতিক্রম। যেমন গাছেরা সাধারণত দিনের বেলায় পাতার রন্ধ্র খোলা রাখে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ছাড়ে। আর এয়ার প্ল্যান্টগুলো করে এর উল্টো কাজ। ফুল থেকে ক্যাপসুলের মতো ফল হয়, ফলে বীজ হয়। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। এ গাছ বাঁচে প্রজাতি ও জাতভেদে ৩ থেকে ১৫ বছর। গাছ বাঁচিয়ে রাখতে বিশেষ কোনো যত্ন করতে হয় না। মাঝে–মধ্যে পানি দিয়ে গাছ-পাতা ভিজিয়ে দিতে হয়।

মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব

বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি

২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।

 তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।

কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন

সম্পর্কিত নিবন্ধ