শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি বা বিএটিবিসির মুনাফায় ধস নেমেছে। গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটির মুনাফা অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। যদিও এ সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির সিগারেট বিক্রি ৫ শতাংশ বা এক হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ রোববার কোম্পানিটি তাদের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করে। সেই আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিএবিটিসির মুনাফা, আয়, ব্যয় ও করসংক্রান্ত নানা বিষয়ে জানা যায়।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো সিগারেট বিক্রি করে আয় করেছে ২৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় ছিল ২২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সিগারেট বিক্রি করে আয় বেড়েছে ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা বা ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৪১৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯২৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর মুনাফা অর্ধেকের বেশি বা ৫১০ কোটি টাকা কমে গেছে।

আয় বৃদ্ধির পরও মুনাফা এতটা কমে গেল কেন? আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে সেই তথ্য পাওয়া গেছে। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট, পরিচালন খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। এসব কারণে আয় বাড়লেও সেই তুলনায় মুনাফা বাড়েনি। উল্টো গত বছরের বাড়তি খরচ সংকুলান হয়নি বাড়তি আয়ে। তাতে টান পড়েছে মুনাফায়।

কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে আজ ডিএসিতে জানানো হয়েছে, গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সিগারেট বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। বিক্রি না বাড়লেও মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত বছরের চেয়ে আয় বেড়েছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার কারণে চলতি বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির পরিচালন খরচও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। যার কারণে শেষ পর্যন্ত মুনাফায় টান লাগে।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই থেকে বিএটির কারখানা রাজধানীর মহাখালী থেকে সরিয়ে আশুলিয়ায় নেওয়া হয়।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পরিচালন বাবদ খরচ হয়েছে ৬৫৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৮৪ কোটি টাকা।

এ ছাড়া গত জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে বিএটিবিসি সরকারকে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ পরিশোধ করেছে ১৯ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি এই বাবদ সরকারকে দিয়েছিল ১৭ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার মতো কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে।

এদিকে মুনাফা কমে যাওয়ার খবরে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার ঢাকার বাজারে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ২৬ টাকা বা ৮ শতাংশের মতো কমে গেছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে এক দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন। লেনদেন শেষে ডিএসইতে এটির শেয়ারের দাম কমে দাঁড়ায় ২৯৬ টাকা ২০ পয়সায়। চেয়ারের দাম কমলেও গতকাল ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছিল কোম্পানিটি। এদিন ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির প্রায় ৩৯ কোটি টাকার সমমূল্যের সোয়া ১৩ লাখের বেশি শেয়ারের হাতবদল হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র ট শ আম র ক ন ট ব য ক র বছর র প রথম ছয় ম স বছর র প রথম র ধ র ব যবধ ন বছর র ব পর ম ণ প রক শ উল ল খ

এছাড়াও পড়ুন:

হামাসকে অস্ত্রত্যাগে ও গাজার শাসন ছাড়তে সৌদি, কাতার, মিসরের আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধে এ ভূখণ্ডে হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব ও মিসরসহ একাধিক আরব দেশ।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বি–রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব পুনরুজ্জীবিত করতে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্যোগে নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদর দপ্তরে একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানেই  গৃহীত সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ।

ঘোষণায় বলা হয়, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে অবশ্যই তার শাসন (এ উপত্যকায়) শেষ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। এটি একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

আগের দিন, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদল ইসরায়েল ও হামাস উভয়কে গাজা ত্যাগ করার আহ্বান জানায়; যাতে সাগর উপকূলবর্তী এ অঞ্চলটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।

আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণপ্রত্যাশী ৯৩ জনকে হত্যা ইসরায়েলি বাহিনীর, যুদ্ধের বর্বরতার নিন্দায় পোপ২১ জুলাই ২০২৫

ঘোষণায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলারও নিন্দা জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়নি। সম্মেলনের সহআয়োজক ফ্রান্স ঘোষণাপত্রটিকে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুনগাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ১৮ ঘণ্টা আগে

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।’

প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।জ্যাঁ-নোয়েল বারো, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

আরও পড়ুনগাজায় ‘এখনই যুদ্ধ থামাতে’ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের আহ্বান২২ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েলের স্নাইপাররা এমনভাবে গুলি ছুড়ছিলেন, যেন পশু শিকার করছেন: গাজার বাসিন্দা২১ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ