বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশে সংগঠনটির সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা করেছে। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশীদ। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ব্যানার ব্যবহার করে কোনো ধরনের অপকর্ম করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে রিফাত রশীদ বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে গতকালকের (শনিবার) ঘটনা এবং এর মাঝেও অনেকগুলো ঘটনা আমরা দেখতে পেয়েছি, সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে নামে-বেনামে অনেক ধরনের অপকর্ম, অপকাণ্ড করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে।.

..আমরা যেদিন আত্মপ্রকাশ করেছিলাম, সেদিনই আমরা সতর্ক করেছিলাম—এই ধরনের কোনো কিছু বরদাশত করা হবে না।’

রিফাত রশীদ বলেন, ‘এই কমিটিগুলো যখন গঠন করা হয়েছিল, এই কমিটি গঠনের দায়িত্বে যারা ছিল, তারা যেহেতু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মতের ভিতরে চলে গিয়েছে এবং তখন দেখা গিয়েছে যে তাদেরই শেল্টার (আশ্রয়) বা অন্য ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর শেল্টারে বা অনেক সময় তারাও বিপথগামী হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধা যারা, তাদের অনেকে বিপথগামী হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে তাদের মাঝে কিছু করাপশনের (দুর্নীতি) ব্যাপারগুলো আমরা লক্ষ করছি। এবং যেটা এই মুহূর্তে ভিজিবলি কন্ট্রোল (দৃশ্যমান নিয়ন্ত্রণ) করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এমন পরিস্থিতিতে জরুরি সভা করার কথা জানান রিফাত রশীদ। তিনি বলেন, সভায় সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশে সংগঠনের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সূত্র জানায়, সারা দেশে সংগঠনের শতাধিক কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে আছে ৪৫টি। মহানগর কমিটি আছে ৭টি, থানা কমিটি আছে ২৩টি। এ ছাড়া ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কমিটি আছে। এর বাইরে উপজেলা পর্যায়েও বেশ কিছু কমিটি রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো স্থানীয় উদ্যোগে হয়েছে।

গত শনিবার রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) একজন সাবেক নারী সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরা পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। সেখানে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদেরও (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত) একজন নেতা ছিলেন। ওই চাঁদাবাজির ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে সারা দেশের সব কমিটি (কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া) স্থগিত করার কথা জানালেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান রিফাত রশীদ। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে যারা অপকর্ম করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অভ্যুত্থানের পর গত বছরের অক্টোবরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। প্রথম আহ্বায়ক ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনিসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির বেশির ভাগ নেতার নেতৃত্বে গত ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম সেভাবে ছিল না। সর্বশেষ গত জুন মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশীদ) সভাপতি ও মো. ইনামুল হাসান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম বলেন, অনেক দিন ধরেই সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে নানা ধরনের অপকর্ম, চাঁদাবাজি হয়ে আসছে। পরাজিত শক্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধনে এবং নামে-বেনামে সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে কলুষিত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সংগঠন হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো ধরনের অপকর্ম, চাঁদাবাজি বরদাশত করে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় কম ট র জন ত ক ব কম ট গঠন র স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতদের ছাড় নয়: রিজভী 

বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্মে জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, “সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। যদি কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্মে করে তাদের কোন ছাড় নয়। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। একটি অসত্য সংবাদ রাষ্ট্র ও সমাজের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।”

শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রিজভী।

কোনো কিছু ঘটলেই বিএনপির ওপর দায় চাপানো যেন কারো কারো অভ্যাসে পরিনণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “সমাজবিরোধী কাজে যেই জড়িত হবে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকার কেনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং সরকারের মাঝে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “রাউজানে কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। অথচ, কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হলো এই অস্ত্রধারীরা বিএনপির লোক! কোনো প্রমাণ ছাড়া এগুলো লেখা দুঃখজনক। এই রাউজানে নানান অভিযোগে অনেক সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” 

বিএনপি ১৫ বছরের অত্যাচার-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। জুলাই-আগস্টে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। মানুষ হয়ত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু এখনও আত আতঙ্কমুক্ত নয় বলেও জানান রিজভী।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববাজারে যখন গমের দাম কমেছে তখন বাংলাদেশে এর দাম বেড়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্র এতে ব্যর্থ হলে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে সামাজিক অস্থিরতা।” 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতদের ছাড় নয়: রিজভী