ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে সিটি ব্যাংকের ১,৬৩২ কোটি টাকা মুনাফা
Published: 28th, July 2025 GMT
সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক ছয় মাসে ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৫৫১ কোটি টাকার চেয়ে ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা বা প্রায় ২০০ শতাংশ বেশি। এ বছরের জুনের শেষে ব্যাংকটির কর–পরবর্তী মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০২ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৪০ কোটি টাকা। এর মানে, এক বছরে এই খাতে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা।
সিটি ব্যাংকের আর্থিক পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সিটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট সুদ আয় দাঁড়ায় ১৭৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৮০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকটির প্রকৃত সুদ আয় ৬২৯ কোটি টাকা বা সোয়া ৭৮ শতাংশের বেশি কমেছে।
মূলত ঋণ ও আমানতের সুদের সীমা উঠে যাওয়ার পর থেকে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত সুদ আয় কমতে শুরু করে। সাধারণত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে তার বিপরীতে নির্ধারিত একটি সময়ে যে সুদ পায়, তা থেকে ওই সময়ের আমানত বাবদ সুদ ব্যয় বাদ দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, সেটিই প্রকৃত সুদ আয়। এটিই ব্যাংকের মূল ব্যবসা।
তবে ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে মূল ব্যবসার বাইরে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছে। এতে তাদের মুনাফায় ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকাররা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ঊচ্চ মূল্যস্ফীতি, গ্যাস ও ডলার–সংকট এবং সর্বশেষ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় উৎপাদন ও সেবা খাতে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যাংকের ঋণের চাহিদা কমে গেছে। ফলে ভালো ভালো ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে। উদ্বৃত্ত সে অর্থই তারা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে খাটিয়ে ভালো মুনাফা করছে। অর্থের সংকটের কারণে সরকার ট্রেজারি বিল–বন্ডের মাধ্যমে চড়া সুদে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে তারল্য উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংকগুলো।
সিটি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি–জুন) প্রতিষ্ঠানটি ঋণের সুদ বাবদ আয় করেছে ২ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। একই সময়ে তারা আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় করেছে ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। ঋণের সুদ আয় থেকে আমানতের সুদ ব্যয় বাদ দেওয়ার পর গত ছয় মাসে ব্যাংকটির প্রকৃত সুদ আয় দাঁড়ায় ১৭৪ কোটি টাকা। প্রকৃত সুদ আয় গত বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও এ সময়ে ব্যাংকটি সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে বিপুল মুনাফা করেছে। ফলে অর্ধবার্ষিক শেষে ব্যাংকটির মুনাফাও বেড়েছে। গত ছয় মাসে সিটি ব্যাংক প্রকৃত যে সুদ আয় করেছে, তার ৯ গুণের বেশি আয় করেছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে।
এদিকে মুনাফা বৃদ্ধির খবরে আজ সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ৮০ পয়সা বা সোয়া ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এতে ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ২৪ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনেরও শীর্ষে ছিল সিটি ব্যাংক। এদিন ব্যাংকটির প্রায় দুই কোটি শেয়ারের হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকের মোট পরিচালন আয়ের মধ্যে ১ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা এসেছে সরকারি সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ থেকে, যা মোট পরিচালন আয়ের ৭৩ শতাংশ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। কারণ, আয়-ব্যয় বিবরণীতে বিনিয়োগ থেকে আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুদ ব্যয় মোট সুদ ব্যয়ের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেই প্রদর্শন করা হয়। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিনিয়োগ থেকে আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুদ ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। তাতে আমার হিসাবে আয়ের বিভাজন দাঁড়ায় ঋণের সুদ থেকে ৫০ শতাংশ, বিনিয়োগ থেকে ২২ শতাংশ, বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে ফি বাবদ ২০ শতাংশ এবং সরকারের সহযোগিতায় দুর্বল ব্যাংকে তহবিল সরবরাহ বাবদ আয় ৮ শতাংশ। এই হিসাবে বছরের প্রথম ছয় মাসে সিটি ব্যাংকের আয়ের ৭৮ শতাংশই এসেছে মূল ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ব ল ও বন ড গত বছর র একই সময় র প রক ত ছয় ম স ক বছর সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।