সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক ছয় মাসে ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৫৫১ কোটি টাকার চেয়ে ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা বা প্রায় ২০০ শতাংশ বেশি। এ বছরের জুনের শেষে ব্যাংকটির কর–পরবর্তী মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০২ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৪০ কোটি টাকা। এর মানে, এক বছরে এই খাতে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা।

সিটি ব্যাংকের আর্থিক পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সিটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট সুদ আয় দাঁড়ায় ১৭৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৮০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকটির প্রকৃত সুদ আয় ৬২৯ কোটি টাকা বা সোয়া ৭৮ শতাংশের বেশি কমেছে।

মূলত ঋণ ও আমানতের সুদের সীমা উঠে যাওয়ার পর থেকে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত সুদ আয় কমতে শুরু করে। সাধারণত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে তার বিপরীতে নির্ধারিত একটি সময়ে যে সুদ পায়, তা থেকে ওই সময়ের আমানত বাবদ সুদ ব্যয় বাদ দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, সেটিই প্রকৃত সুদ আয়। এটিই ব্যাংকের মূল ব্যবসা।

তবে ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে মূল ব্যবসার বাইরে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছে। এতে তাদের মুনাফায় ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকাররা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ঊচ্চ মূল্যস্ফীতি, গ্যাস ও ডলার–সংকট এবং সর্বশেষ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় উৎপাদন ও সেবা খাতে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যাংকের ঋণের চাহিদা কমে গেছে। ফলে ভালো ভালো ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে। উদ্বৃত্ত সে অর্থই তারা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে খাটিয়ে ভালো মুনাফা করছে। অর্থের সংকটের কারণে সরকার ট্রেজারি বিল–বন্ডের মাধ্যমে চড়া সুদে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে তারল্য উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংকগুলো।

সিটি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি–জুন) প্রতিষ্ঠানটি ঋণের সুদ বাবদ আয় করেছে ২ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। একই সময়ে তারা আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় করেছে ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। ঋণের সুদ আয় থেকে আমানতের সুদ ব্যয় বাদ দেওয়ার পর গত ছয় মাসে ব্যাংকটির প্রকৃত সুদ আয় দাঁড়ায় ১৭৪ কোটি টাকা। প্রকৃত সুদ আয় গত বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও এ সময়ে ব্যাংকটি সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে বিপুল মুনাফা করেছে। ফলে অর্ধবার্ষিক শেষে ব্যাংকটির মুনাফাও বেড়েছে। গত ছয় মাসে সিটি ব্যাংক প্রকৃত যে সুদ আয় করেছে, তার ৯ গুণের বেশি আয় করেছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে।

এদিকে মুনাফা বৃদ্ধির খবরে আজ সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ৮০ পয়সা বা সোয়া ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এতে ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ২৪ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনেরও শীর্ষে ছিল সিটি ব্যাংক। এদিন ব্যাংকটির প্রায় দুই কোটি শেয়ারের হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকের মোট পরিচালন আয়ের মধ্যে ১ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা এসেছে সরকারি সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ থেকে, যা মোট পরিচালন আয়ের ৭৩ শতাংশ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। কারণ, আয়-ব্যয় বিবরণীতে বিনিয়োগ থেকে আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুদ ব্যয় মোট সুদ ব্যয়ের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেই প্রদর্শন করা হয়। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিনিয়োগ থেকে আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুদ ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। তাতে আমার হিসাবে আয়ের বিভাজন দাঁড়ায় ঋণের সুদ থেকে ৫০ শতাংশ, বিনিয়োগ থেকে ২২ শতাংশ, বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে ফি বাবদ ২০ শতাংশ এবং সরকারের সহযোগিতায় দুর্বল ব্যাংকে তহবিল সরবরাহ বাবদ আয় ৮ শতাংশ। এই হিসাবে বছরের প্রথম ছয় মাসে সিটি ব্যাংকের আয়ের ৭৮ শতাংশই এসেছে মূল ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ব ল ও বন ড গত বছর র একই সময় র প রক ত ছয় ম স ক বছর সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগে গত ১০ বছর বাধা দেওয়া হয়েছিল: চীনের রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বিগত সরকারের শেষ ১০ বছরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি চীন। এই দুই দলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সে সময়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছিল।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন চীনের রাষ্ট্রদূত। ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল চীন সফর করেছে। এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, খোলাখুলিভাবে বললে, গত ১০ বছরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে, তাই তাঁরা পুনঃযোগাযোগ চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা এ ধরনের সফর বিনিময় ও যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে চান।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতে কীভাবে বাধা দেওয়া হতো, জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, গত কয়েক বছরের পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেটি এখানে উপস্থিত সাংবাদিকেরা অনুধাবন করতে পারেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে চান না। তিনি কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেটা উপস্থিত সাংবাদিকেরা বোঝেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত মাসে চীন সফর করে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে এই সফর হয়। অন্যদিকে চলতি মাসে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে।

ডিকাব সভাপতি এ কে এম মঈনউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ