উগান্ডায় মামদানির বিয়ের অনুষ্ঠানে জমকালো আয়োজন, ছিল মুখোশধারী নিরাপত্তারক্ষী
Published: 28th, July 2025 GMT
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় অভিজাত এলাকা বুজিগা হিল। গত সপ্তাহে এলাকাটিতে নজর কেড়েছিল বিলাসবহুল একটি বাড়ি। তিন দিন ধরে অতিথি আগমন, পানাহার আর গভীর রাত পর্যন্ত আনন্দ–ফুর্তিতে মেতে ছিল বাড়িটি। চলছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। যাঁর বিয়ে তিনিও মানুষটি যেনতেন কেউ নন—জোহরান মামদানি। নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
মামদানির বয়স ৩৩ বছর। ডেটিং অ্যাপে তাঁর পরিচয় হয়েছিল ২৭ বছর বয়সী রামা দুয়াজির সঙ্গে। সেখান থেকেই প্রেম। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে দুবাইয়ে বাগদান। ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কে ছোট পরিসরে একটি অনুষ্ঠানে বিয়ে করেন তাঁরা। এবার কাম্পালায় হলো বিশাল আয়োজন। গত মঙ্গলবার থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে চলেছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এর আগে রোববার উগান্ডা যান মামদানি।
এত জায়গা থাকতে উগান্ডায় বিয়ের অনুষ্ঠান কেন? মামদানির জন্ম আসলে আফ্রিকার এ দেশটিতেই। মাত্র সাত বছর বয়সে জন্মভূমি ছেড়ে নিউইয়র্কে চলে যান তিনি। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। কাম্পালার বুজিগা হিলের অভিজাত বাড়িটি তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানির (৭৮)। পেশায় তিনি অধ্যাপক। আর মামদানির মা মীরা নায়ার (৬৭) একজন খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা।
বুজিগা হিলে উগান্ডার ধনী ব্যক্তিদের বসবাস। বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে মামদানিদের বাড়িটিকে জমকালো রূপ দেওয়া হয়। বাগানের গাছগুলো সাজানো হয় রঙিন বাতি দিয়ে। ভেসে আসছিল সংগীতের সুর। মঙ্গলবার অনুষ্ঠানের শুরুর দিনে বাড়িটিতে হাজির হতে শুরু করে মার্সিডিজ ও রেঞ্জ রোভারের মতো নামীদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি।
এদিন বাড়িটিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল কড়া। সচরাচর নিরাপত্তা নিয়ে এলাকাটিতে এতটা তৎপরতা দেখা যায় না। প্রত্যক্ষদর্শী একজনের ভাষায়, ‘বাড়ির বাইরে ২০ জনের বেশি বিশেষ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাঁদের অনেকের মুখে ছিল মুখোশ। মুঠোফোন জ্যাম করার ব্যবস্থা ছিল। এ সবকিছুই করা হয়েছিল মামদানির বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য। বাড়ির একটি ফটকেই ছিলেন নয়জন নিরাপত্তারর্ক্ষী।’
বৃহস্পতিবারের আয়োজন ছিল আরও জমকালো। ভারতীয় ধাঁচের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয় ফলের জুস। নাচ–গান মিলিয়ে অনুষ্ঠান গড়ায় মধ্যরাত পর্যন্ত। এর আগে অতিথিদের উদ্দেশে মাইক্রেফোনে কথা বলেন মামদানি। তিন দিনের অনুষ্ঠান শেষে শুক্রবার মামদানিদের বাড়ি থেকে অনুষ্ঠানের তাঁবুগুলো খুলে নেওয়া হয়। আর অনুষ্ঠানের ফুলগুলো স্তূপ করে রাখা হয় ফটকের বাইরে।
মামদানির বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা এতটাই জোরদার ছিল যে রাজধানীর অনেকে জানতেও পারেননি বাড়ির ভেতরে কী হচ্ছে। এ কথা কাম্পালার এক বাসিন্দারই। শহরের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা শুনেছি মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র হতে যাচ্ছেন। জানতে চাই—এখন কি আমরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ভিসা পাব? মামদানি যেভাবে নিউইয়র্কে গেছেন, সেভাবে যেতে পারব?’
এদিকে মামদানির বিয়ের উৎসবের সময় তাঁর প্রতিবেশী অনেকেই পালন করছিলেন শোক। কারণ, ১৪ জুলাই মারা গেছেন উগান্ডার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জর্জ কানইয়েইহামবা। তাঁর বাড়ি মামদানির বাড়ির একেবারে কাছে। একজন বলেন, ‘তাঁকে এখনো সমাহিত করাও হয়নি। আগামী সপ্তাহে সমাহিত করার আগে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর স্বজনেরা আসছেন। ঠিক এই সময়ে তিন দিন ধরে বিয়ে উদ্যাপন করলেন মামদানি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য় র অন ষ ঠ ন ম মদ ন র ব য় র অন ষ ঠ ন র ন উইয়র ক ন ম মদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে