অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি ঘিরে উত্তেজনা এখন চূড়ান্তে। ২-১ ব্যবধানে সিরিজে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও পঞ্চম ও শেষ টেস্টটি একটি পরিণতির লড়াই হিসেবে সমাসন্ন। তবে ঠিক এই সময়েই বড় দুঃসংবাদ এসে আঘাত হেনেছে ইংলিশ ড্রেসিংরুমে। ইনজুরিতে পড়ে সিরিজ নির্ধারণী ওভাল টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক বেন স্টোকস।

বুধবার (৩০ জুলাই) ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ওভালে মাঠে নামা হচ্ছে না স্টোকসের। ম্যানচেস্টারে চতুর্থ টেস্টে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী স্টোকস ছিলেন দলের ভারসাম্য ধরে রাখার অন্যতম স্তম্ভ। তার অনুপস্থিতি তাই শুধু একজন খেলোয়াড়কে হারানো নয়, বরং একটি জয়ের প্রত্যয়ের বড় চ্যাপ্টারও হারানো।

এই ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব সামলাবেন ওলি পোপ। যিনি প্রথমবারের মতো সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় দলের।

আরো পড়ুন:

শেষ ম্যাচের আগে ভারতের শিবিরে ধাক্কা, বিশ্রামে বুমরাহ

ওভাল টেস্টের ইংল্যান্ড দল ঘোষণা, ওভারটনের প্রত্যাবর্তন

স্টোকস ছাড়াও ওভাল টেস্টে দেখা যাবে না জোফরা আর্চার, ব্রাইডন কার্স ও লিয়াম ডসনকে। চোট ও ফিটনেস ইস্যুর কারণে তারা বাদ পড়েছেন স্কোয়াড থেকে।

অবশ্য একাদশে ফিরেছেন দুই পরিচিত মুখ জশ টাঙ ও জেমি ওভারটন। বিশেষ নজর কেড়েছেন গাস অ্যাটকিনসন। যিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মে মাসে খেলার পর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ছিলেন মাঠের বাইরে। সারে কাউন্টির হয়ে ফের মাঠে ফিরে জায়গা পেয়েছেন জাতীয় দলে। ইংল্যান্ডের পেস বিভাগে তার উপস্থিতি বাড়াবে গতি ও ধার।

চলতি সিরিজে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন বেন স্টোকস। চার ম্যাচে তার ঝুলিতে ১৭ উইকেট। ম্যানচেস্টার টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার ও ব্যাটে সেঞ্চুরি করে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছিলেন। লর্ডসেও দুই ইনিংস মিলিয়ে রান করেছেন ৭৭, নিয়েছেন আরও পাঁচ উইকেট।

তাই ইংলিশ শিবির শুধু একজন ব্যাটার বা একজন বোলার হারায়নি, তারা হারিয়েছে একজন পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ উইনারকে। স্টোকসের মতো একজন অলরাউন্ডার যিনি প্রয়োজনের সময় ছায়ার মতো আক্রমণে নেতৃত্ব দেন এবং ব্যাট হাতে গড়েন ম্যাচের ভিত, তার অভাব যে দলকে নাড়া দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ:
জ্যাক ক্রাউলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ (অধিনায়ক), জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জ্যাকব বেথেল, জেমি স্মিথ (উইকেটকিপার), ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন, জেমি ওভারটন ও জশ টাঙ।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে