চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানতে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবে স্থাপিত জেলা বিএনপির বক্সে অন্তত চারটি অভিযোগ জমা পড়েছে গত এক সপ্তাহে। 

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে বক্সটি খুলে অভিযোগ পড়ে শোনান কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার।

গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের মধ্যে ছিল- কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার ট্রাক শ্রমিক অফিস থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়। লালন একাডেমির সাপ্তাহিক সেবার নামে অনিয়ম, দুর্নীতি প্রতারণার সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে আবেদন। জিয়ারখী ইউনিয়নের মঠপাড়া মাঠের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আবেদন, বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নাম ভাঙিয়ে শহরের ধোপাপাড়া, মধ্য মিলপাড়া কলোনীতে চাঁদা দাবির অভিযোগ সাজু বাহিনীর বিরুদ্ধে।

আরো পড়ুন:

সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান

ঠাকুরগাঁওয়ে ২ বিএনপি নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দাবিতে বিক্ষোভ

চিঠিপাঠ শেষে জাকির হোসেন সরকার বলেন, “মানুষ অভিযোগ জানাতে শুরু করেছেন। আমরা দ্রুতই অভিযোগগুলোর বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে আমরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছি, তা গণমাধ্যম কর্মীদের অবহিত করা হবে। যেগুলো আইনি বিষয়, সেটা আদালত কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেখবে।”

বক্স খুলে চিঠি পড়ার সময় কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, সেক্রেটারি আবু মনি জুবায়েদ রিপন, সিনিয়র সভাপতি  সাংবাদিক লুৎফর রহমান কুমার, কোষাধ্যক্ষ এম লিটন-উজ-জামান, দপ্তর সম্পাদক মোকাদ্দাস হোসেন সেলিমসহ গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। 

গত ২১ জুলাই কুষ্টিয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, চাঁদাবাজী, দখলবাজী ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে জানতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ বক্স স্থাপন করে জেলা বিএনপি। কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের নিচে ফটকের পাশে এটি স্থাপন করেন বিএনপির কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক কুতুব উদ্দীন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। 

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ কর ম দ র ব এনপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি কি মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ বদলে দেবে

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফ্রান্সের সাহসী সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার ধরন পাল্টে দিতে পারে। যদিও এটি গাজায় চলমান সংঘর্ষ বা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ওপর তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্র যে সময় নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিতে সামরিক শক্তির আশ্রয় নিচ্ছে, যেমন রাশিয়া ইউক্রেনে কিংবা সম্প্রতি ইরান ও তাদের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের হামলা; সেই সময় কূটনৈতিক সমাধান এবং ‘যুদ্ধ নয়, শান্তির’ বার্তাই দিতে চাইছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।

নিজের দ্বিতীয় ও শেষ মেয়াদের আর দুই বছরের কম সময় বাকি থাকা মাখোঁর জন্য এ বিষয় ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির সঙ্গেও জড়িত। ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের সময় কার্যকরভাবে এগিয়ে না এলে ইতিহাসের পাতায় তা কালিমা হয়ে থাকতে পারে।

পারমাণবিক শক্তিধর, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি দেশের নেতা হিসেবে মাখোঁর হাতে বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহে প্রভাব রাখার অনেক উপায় রয়েছে।

জি-৭ গোষ্ঠীর প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া মাখোঁর জন্য নিজ দেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। ইউরোপে সবচেয়ে বড় ইহুদি ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস ফ্রান্সে। এমন এক দেশে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি জনমতের ভারসাম্যে হাঁটছেন।

তাঁর ঘোষণায় কিছু মানুষ আনন্দিত হবেন, আবার কেউ ক্ষুব্ধ। গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া তাঁর ঘোষণার পর ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়ায় এর প্রতিফলন পাওয়া গেছে।

এমন পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত এবং গাজা যেভাবে ইরানের প্রক্সিতে পরিণত হয়েছে, সেভাবে আরেকটি প্রক্সি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হবে।বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী

তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করার পরও এখন মাখোঁ ইঙ্গিত দিচ্ছেন—এ সমর্থনেরও একটা সীমা রয়েছে।

ফ্রান্সের এ অবস্থান বদলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘এমন পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত এবং গাজা যেভাবে ইরানের প্রক্সিতে পরিণত হয়েছে, সেভাবে আরেকটি প্রক্সি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হবে।’

এটি একটি পদক্ষেপ, কিন্তু তা কোনো জাদুর কাঠি নয়

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের নিজ নিজ রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা আজকের বাস্তবতায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দূরাশার বলেই মনে হচ্ছে। কেননা, ইসরায়েলের তাণ্ডবে ফিলিস্তিনের গাজা একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপন ক্রমেই বাড়ছে।

এ অবস্থায় শুধু মাখোঁর বক্তব্যেই বাস্তবতা বদলাবে না। তবুও তাঁর বার্তা স্পষ্ট, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে ‘দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ কূটনৈতিক পথে অর্জন করার আশা কখনো হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না, তা আজ যতই অসম্ভব মনে হোক।

তথাকথিত ‘পি-৫’ রাষ্ট্রগুলো নানা ইস্যু, যেমন ইউক্রেন, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পরস্পর বিভক্ত। ফলে শুধু ফ্রান্সের অবস্থান বদলে হঠাৎই ফিলিস্তিনিদের জন্য পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে, এমন আশা করাটা ঠিক হবে না। তবে গাণিতিক অর্থে হলেও ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এখন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনায় বড় শক্তিগুলোর মধ্যে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়তে পারে।

মাখোঁ এক চিঠিতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে লেখেন, ‘এ সমাধানই একমাত্র পথ, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষার জবাব দিতে পারে। এখন যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

মাখোঁ আরও লেখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে। আমি এটা মেনে নিতে পারি না।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

সম্পর্কিত নিবন্ধ