পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি শক্তিশালী করার তাগিদ
Published: 31st, July 2025 GMT
ঢাকা স্থিতিশীল না হলে কূটনীতির জন্য বিদেশে বাংলাদেশের মিশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তাই দেশের পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। রাজনৈতিক সহমতের চর্চা করতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত দেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এ আলোচনার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আলোচনা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে সরকার। আমাদের কূটনীতির সবচেয়ে বড় বাধা হলো ঢাকা। ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার শুরু ও শেষ হয়। ঢাকা স্থিতিশীল না থাকলে মিশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো সহমতের অভাব। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে সহমত থাকতে হবে। আইডেন্টিটি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতি—এই তিনটিকে নিয়ে এবং এর সঙ্গে মানুষের চাহিদা যুক্ত করতে পারলে পররাষ্ট্রনীতি ভালো ও শক্তিশালী হবে।’
‘বিপ্লবের’ যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বেশি করে থাকি। আমরা অনেক বেশি ঋণনির্ভর হয়ে গিয়েছি। সাইবার সিকিউরিটিকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। সার্ক ছাড়া আর বিকল্প নেই আমাদের জন্য। আঞ্চলিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য সার্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখন যুক্তরাষ্ট্র বা চীন বা ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়া অনেক জটিল। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে আমাদের ভারসাম্য আনতে হবে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আমাদের নৈতিক অবস্থান নিতে হবে। যেখানে তথ্য ও সত্যের ওপর ভিত্তি করে কারও কোনো পদক্ষেপ ভালো হলে সেটা গ্রহণ করব আর খারাপ হলে তা স্পষ্ট করে অগ্রাহ্য করব।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ঘাটতি আছে। আমাদেরকে প্রবাসীবান্ধব নীতি করতে হবে। আমাদের দেশের সব নীতি আমরা নির্ধারণ করব।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সময়ে নানা পক্ষের মতামতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। এখন আবার সেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সংকটে আছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো এখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। আমরা এখানে বাজেভাবে ফেঁসে গেছি। রাশিয়া ও আফগানিস্তান সংকটের সময় পাকিস্তান মানবিক করিডর করে দিয়েছিল, যার জন্য এখনো পাকিস্তানে সমস্যা হচ্ছে, যেমন অবাধে মাদক ও অস্ত্র সরবরাহ। আমাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
সাবেক কূটনীতিক মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য থাকা দরকার। পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ শক্তির ওপর। এর জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ঠিক করতে হবে।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের জবাবদিহি থাকতে হবে। ভারত, আমেরিকা বা চীনের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির ভারসাম্য আনতে হবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের নতুন সম্পর্কটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।’
পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি উল্লেখ করে বিআইপিএসএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো সাফকাত মুনির বলেন, ‘গত ১৬ বছর কোনো পররাষ্ট্রনীতি ছিল কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান।’ তিনি আরও বলেন, কূটনীতিবিদদের বেতন অন্য দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেক কম। রাষ্ট্রের অন্য ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য যেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে রকম উদ্যোগ পররাষ্ট্রনীতিতে নেওয়া হয়নি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের এখন জাতীয় স্বার্থের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য একটা রাজনৈতিক কাঠামো ঠিক করতে হবে।’
গণ–অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতির আগে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি শক্ত করতে হবে। আমাদের কি ২৫টি বোয়িং কেনার ক্ষমতা আছে? এটি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছোটখাটো একটা সংঘাত হবে, যেমনটি হচ্ছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াতে।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজের সভাপতি জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি আমাদের নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে এখনো টানাপোড়নে আছে। চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কেও ভারসাম্য আনাটা অনেক জরুরি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক কূটনীতিক এম শফিউল্লাহ, সাবেক কূটনীতিক শহীদুল ইসলাম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম, নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সেন্টার ফর নন–রেসিডেন্ট বাংলাদেশিজের চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরী এবং এবি পার্টির সহকারী সদস্যসচিব নাসরীন সুলতানা মিলি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র স ন ট র ফর পরর ষ ট র র জন ত ক ক টন ত আম দ র র জন য ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
গল্প যখন জাহাজের রহস্যময় খুন, তখন সবার আগে মাথায় আসে ১৯৭৮ সালের ‘ডেথ অন দ্য নাইল’-এর কথা। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য লাস্ট অব শিলা’ সিনেমাটিও এগিয়ে থাকবে এদিক দিয়ে।
তবে রুথ ওয়ারের উপন্যাসভক্তদের জন্য নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি হতে পারত এমনই এক অভিজ্ঞতা। রুথের উপন্যাস ‘দ্য ওমেন ইন কেবিন ১০’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নেটফ্লিক্সে এসেছে একই নামের নতুন সিনেমা। তবে সাইমন স্টোন পরিচালিত সিনেমাটির শুরুটা আশা জাগানিয়া হলেও শেষপর্যন্ত রোমাঞ্চ ধরে রাখতে পারেনি।
লন্ডনের এক খ্যাতিমান অনুসন্ধানী সাংবাদিক লরা ব্ল্যাকলক (কিরা নাইটলি)। তিনি একটি হাইপ্রোফাইল অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করছিলেন। কিন্তু তাঁর সোর্সকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জন্য তিনি কাজে ফিরে এসেও ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি হঠাৎই তিন দিনের সমুদ্রযাত্রার আমন্ত্রণ পান। নরওয়েজীয় এক বিলিয়নিয়ার দম্পতি অ্যান লিংস্টাড (লিসা লোভেন কংসলি) ও তাঁর স্বামী রিচার্ডের (গাই পিয়ার্স) দাতব্য সংস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কাভার করার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। কাজ ও ছুটি কাটানোর এমন দারুণ সুযোগ লুফে নেন লরা।
‘দ্য ওমেন ইন কেবিন ১০’ –এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স