গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের মামলায় দেবগৌড়ার নাতি সাবেক এমপি প্রজ্বলের যাবজ্জীবন
Published: 2nd, August 2025 GMT
ভারতের সংসদ সদস্যদের বিচারের জন্য গঠিত বেঙ্গালুরুর একটি বিশেষ আদালত ধর্ষণ মামলায় জনতা দলের (সেক্যুলার) সাবেক সংসদ সদস্য প্রজ্বল রেভান্নাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাঁর বয়স ৩৪ বছর।
২০২৪ সালে কর্ণাটকের হাসান জেলায় প্রজ্বলের বিরুদ্ধে চারটি ধর্ষণ মামলা হয়। আজ শনিবার একটি মামলার রায় দেন বিশেষ আদালত। বাকি তিনটি মামলার বিচার চলছে।
আজ বিশেষ অধিবেশনে আদালতের বিচারক সন্তোষ গজনান ভাট প্রজ্বলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। গতকাল শুক্রবার তিনি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন।
প্রজ্বল ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি এবং কর্ণাটকের সাবেক মন্ত্রী এইচ ডি রেভান্নার ছেলে। চাচা এইচ ডি কুমারস্বামী কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।
এক গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রজ্বলের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী ওই নারী প্রজ্বলের পরিবারের মালিকানাধীন একটি ফার্ম হাউস বা অবকাশযাপন কেন্দ্রে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ‘ক্ষমতা বা প্রভাব বিস্তারকারী অবস্থানে’ থেকে এই অপরাধ করেছেন।
প্রজ্বল ২০২৪ সালের ৩১ মে থেকে কারাগারে রয়েছেন। জার্মানি থেকে ফেরার সময় ওই দিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। একাধিক নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর তিনি জার্মানিতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এই ভিডিওগুলো প্রজ্বল নিজের মুঠোফোনে ধারণ করেছিলেন। ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল হাসান আসনে লোকসভা নির্বাচনের আগে ভিডিওটি ফাঁস হয়। ওই নির্বাচনে প্রজ্বল জনতা দল (সেক্যুলার)—জেডিএস ও বিজেপি জোটের প্রার্থী ছিলেন।
প্রজ্বলের কেলেঙ্কারি তদন্ত করতে কর্ণাটক পুলিশ একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছিল। তারা সাবেক এই এমপির যৌন নিপীড়নের ভিডিওর পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও বিশ্লেষণ করে দেখেছে। তদন্ত দল ভুক্তভোগীর রোমকূপ এবং তাঁর জামায় লেগে থাকা শরীরের অবশিষ্ট তরলের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখেছে। প্রাপ্ত ডিএনএ নমুনা ও প্রজ্বলের ডিএনএর মধ্যে মিল পাওয়া গেছে।
যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটার পর ভুক্তভোগী নারীকে কর্মস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু চলে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর কাপড় সেই ফার্ম হাউসের গৃহপরিচারিকাদের থাকার ঘরে ফেলে গিয়েছিলেন।
এসআইটির তদন্তের সময় ওই কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয় এবং সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা হয়। ভুক্তভোগীর একটি পেটিকোট থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে অভিযুক্তের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে।
প্রজ্বলের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলাটি শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ২ মে। ধর্ষণের শিকার নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করার মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। মামলাটির অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। অভিযোগ গঠন করা হয়েছে গত ৩ এপ্রিল।
মধ্যবয়সী এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছিল। ওই নারীকে কর্ণাটক রাজ্যের মহিশূর শহরের কাছাকাছি একটি ফার্ম হাউস থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রজ্বলের ফাঁস হওয়া ভিডিওতে ওই নারীর পরিচয় বেরিয়ে পড়লে সেখানে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল।
প্রজ্বলের এক সাবেক গাড়িচালক এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তিনিই সাবেক এই এমপির ফোনের তথ্য ফাঁস করেন। তাঁর নাম কার্তিক এন। বিচার চলাকালে ৩৪ বছর বয়সী ব্যক্তি আদালতে সাক্ষ্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, প্রজ্বলের মুঠোফোনে তিনি যৌন ঘটনার ২ হাজারের বেশি স্পষ্ট ছবি এবং প্রায় ৫০টি ভিডিও পেয়েছিলেন।
প্রজ্বলের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের দ্বিতীয় মামলায় জনতা দলের এক জেলা পঞ্চায়েত কর্মীকে হুমকি ও জবরদস্তির অভিযোগ করা হয়েছে। এই মামলার বিচার চলছে। এই মামলায় ভুক্তভোগীর স্বামী সম্প্রতি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ব্যক্তিও জনতা দলের কর্মী।
প্রজ্বলের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের আরও একটি মামলা রয়েছে। এতে রেভান্না পরিবারে কাজ করে এমন এক রাঁধুনি ও তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রজ্বল রেভান্নার পরিবারের অভিযোগ, এসব মামলা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এসব মামলার পেছনে কর্ণাটকের বর্তমান শাসক দল কংগ্রেসের হাত রয়েছে। এসব যৌন নিপীড়নের অভিযোগের কারণে গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে হাসান আসনে প্রজ্বল হেরে যান। অথচ এটি রেভান্না পরিবারের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ হপর চ র ক ২০২৪ স ল র হয় ছ ল ওই ন র পর ব র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ