ভারতের সংসদ সদস্যদের বিচারের জন্য গঠিত বেঙ্গালুরুর একটি বিশেষ আদালত ধর্ষণ মামলায় জনতা দলের (সেক্যুলার) সাবেক সংসদ সদস্য প্রজ্বল রেভান্নাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাঁর বয়স ৩৪ বছর।

২০২৪ সালে কর্ণাটকের হাসান জেলায় প্রজ্বলের বিরুদ্ধে চারটি ধর্ষণ মামলা হয়। আজ শনিবার একটি মামলার রায় দেন বিশেষ আদালত। বাকি তিনটি মামলার বিচার চলছে।

আজ বিশেষ অধিবেশনে আদালতের বিচারক সন্তোষ গজনান ভাট প্রজ্বলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। গতকাল শুক্রবার তিনি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন।

প্রজ্বল ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি এবং কর্ণাটকের সাবেক মন্ত্রী এইচ ডি রেভান্নার ছেলে। চাচা এইচ ডি কুমারস্বামী কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।

এক গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রজ্বলের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী ওই নারী প্রজ্বলের পরিবারের মালিকানাধীন একটি ফার্ম হাউস বা অবকাশযাপন কেন্দ্রে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ‘ক্ষমতা বা প্রভাব বিস্তারকারী অবস্থানে’ থেকে এই অপরাধ করেছেন।

প্রজ্বল ২০২৪ সালের ৩১ মে থেকে কারাগারে রয়েছেন। জার্মানি থেকে ফেরার সময় ওই দিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। একাধিক নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর তিনি জার্মানিতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এই ভিডিওগুলো প্রজ্বল নিজের মুঠোফোনে ধারণ করেছিলেন। ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল হাসান আসনে লোকসভা নির্বাচনের আগে ভিডিওটি ফাঁস হয়। ওই নির্বাচনে প্রজ্বল জনতা দল (সেক্যুলার)—জেডিএস ও বিজেপি জোটের প্রার্থী ছিলেন।

প্রজ্বলের কেলেঙ্কারি তদন্ত করতে কর্ণাটক পুলিশ একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছিল। তারা সাবেক এই এমপির যৌন নিপীড়নের ভিডিওর পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও বিশ্লেষণ করে দেখেছে। তদন্ত দল ভুক্তভোগীর রোমকূপ এবং তাঁর জামায় লেগে থাকা শরীরের অবশিষ্ট তরলের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখেছে। প্রাপ্ত ডিএনএ নমুনা ও প্রজ্বলের ডিএনএর মধ্যে মিল পাওয়া গেছে।

যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটার পর ভুক্তভোগী নারীকে কর্মস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু চলে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর কাপড় সেই ফার্ম হাউসের গৃহপরিচারিকাদের থাকার ঘরে ফেলে গিয়েছিলেন।

এসআইটির তদন্তের সময় ওই কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয় এবং সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা হয়। ভুক্তভোগীর একটি পেটিকোট থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে অভিযুক্তের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে।

প্রজ্বলের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলাটি শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ২ মে। ধর্ষণের শিকার নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করার মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। মামলাটির অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। অভিযোগ গঠন করা হয়েছে গত ৩ এপ্রিল।

মধ্যবয়সী এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছিল। ওই নারীকে কর্ণাটক রাজ্যের মহিশূর শহরের কাছাকাছি একটি ফার্ম হাউস থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রজ্বলের ফাঁস হওয়া ভিডিওতে ওই নারীর পরিচয় বেরিয়ে পড়লে সেখানে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল।

প্রজ্বলের এক সাবেক গাড়িচালক এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তিনিই সাবেক এই এমপির ফোনের তথ্য ফাঁস করেন। তাঁর নাম কার্তিক এন। বিচার চলাকালে ৩৪ বছর বয়সী ব্যক্তি আদালতে সাক্ষ্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, প্রজ্বলের মুঠোফোনে তিনি যৌন ঘটনার ২ হাজারের বেশি স্পষ্ট ছবি এবং প্রায় ৫০টি  ভিডিও পেয়েছিলেন।

প্রজ্বলের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের দ্বিতীয় মামলায় জনতা দলের এক জেলা পঞ্চায়েত কর্মীকে হুমকি ও জবরদস্তির অভিযোগ করা হয়েছে। এই মামলার বিচার চলছে। এই মামলায় ভুক্তভোগীর স্বামী সম্প্রতি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ব্যক্তিও জনতা দলের কর্মী।

প্রজ্বলের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের আরও একটি মামলা রয়েছে। এতে রেভান্না পরিবারে কাজ করে এমন এক রাঁধুনি ও তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রজ্বল রেভান্নার পরিবারের অভিযোগ, এসব মামলা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এসব মামলার পেছনে কর্ণাটকের বর্তমান শাসক দল কংগ্রেসের হাত রয়েছে। এসব যৌন নিপীড়নের অভিযোগের কারণে গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে হাসান আসনে প্রজ্বল হেরে যান। অথচ এটি রেভান্না পরিবারের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ হপর চ র ক ২০২৪ স ল র হয় ছ ল ওই ন র পর ব র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ

ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।

বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।

ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’

আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগে

পরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।

খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।

জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনী

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।

খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লিপস্টিক ইফেক্ট: মন্দায় প্রসাধনীর চাহিদা কেন বাড়ে?
  • যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের পরিবর্তে উচ্চশিক্ষায় ভারতীয়রা কেন ঝুঁকছেন বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুর–উজবেকিস্তান–রাশিয়ার দিকে
  • ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
  • পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
  • নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
  • ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
  • এ দেশে খুচরা ব্যাংকিং বন্ধ করে দিচ্ছে এইচএসবিসি