জুলাই সনদ ঘোষণায় শুরু হচ্ছে নতুন অধ্যায়
Published: 4th, August 2025 GMT
দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলন আর আস্থাহীনতার পথ পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন দাঁড়িয়ে এক সম্ভাবনাময় সন্ধিক্ষণে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর কয়েক মাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল একসঙ্গে চূড়ান্ত করেছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’। এর ওপর ভিত্তি করেই ৫ আগস্ট ঘোষিত হবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি কেবল একটি রাজনৈতিক দলিল নয়, বরং তা হতে পারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও সংলাপভিত্তিক ভবিষ্যতের নতুন সূচনা।
আলোচনা ও ঐকমত্যের কাঠামো
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মার্চ ২০২৫ থেকে দুই দফায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে। প্রথম পর্যায় (২০ মার্চ–১৯ মে): ৩৩টি দলের সঙ্গে পৃথক আলোচনা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায় (২ জুন–৩১ জুলাই): ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন ২৩ দিনব্যাপী ধারাবাহিক বৈঠকে। এ প্রক্রিয়ায় মোট ১৯টি সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কার ইস্যুতে সম্মতির ভিত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ খসড়া প্রস্তুত হয়।
সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ দফা
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতামতের সুযোগ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ১০ বছর নির্ধারণ,
নির্বাচনকালীন সরকারে বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব, উচ্চকক্ষ গঠন ও ইলেক্টোরাল কলেজ চালু, দুদক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও পিএসসির নিয়োগে স্বচ্ছতা, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ
আংশিক মতভেদ:
সব দল একযোগে সনদের সব দফা মানছে না। দলভেদে মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি বলেছে, তারা ১৯টির মধ্যে ১৫টি সংস্কারে একমত, তবে চারটি দফায় তারা সই দেবে না:
১.
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) :উচ্চকক্ষে ক্ষমতা বণ্টনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিকে অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলে মনে করছে।
২. প্রধানমন্ত্রীর দ্বৈত পদ বিলুপ্তি: একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান ও সরকারপ্রধান না থাকার প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।
৩. দুদক ও পিএসসি নিয়োগে কমিটি গঠন: এটি ক্ষমতার ভারসাম্য ভাঙবে বলে তাদের মত।
৪. তত্ত্বাবধায়ক প্রধান নির্বাচনে র্যাঙ্কড চয়েস: বিএনপি ‘সহজ গঠনমূলক নির্বাচন’ চায়, এই পদ্ধতিকে অকার্যকর বলে মনে করছে।
তবে তারা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনে আংশিক সমর্থন দিয়েছে, বিশেষ করে ‘আস্থা ভোট, নিরাপত্তা ও সংবিধান সংশোধন’ এ দলীয় অবস্থান বজায় রাখার শর্তে।
বাস্তবায়ন ছাড়া সই নয়
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্মত হয়েছে বেশিরভাগ সংস্কারে, তবে আইনি ভিত্তি না থাকলে তারা ঘোষণাপত্রে সই দেবে না।
জামায়াত চায় নারী সরাসরি মনোনয়ন বাতিল করে সংসদে ১০০টি নারী আসন বাড়িয়ে প্রোপোরশনাল নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা হোক।
এনসিপি নারী প্রতিনিধিত্ব ৭% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা চায় গণপরিষদ ভিত্তিক সাংবিধানিক সংশোধন কাঠামো। দুই দলই জোর দিয়েছে আইনি রূপ ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ছাড়া সনদ কোনো অর্থ বহন করবে না।
জুলাই ঘোষণাপত্র
সরকার জানিয়েছে, ৫ আগস্ট বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ চত্বরে এক বিশেষ আয়োজনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা বলেছেন, ঘোষণাপত্র রাজনৈতিক দলিল হবে, নাকি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসম্পন্ন সাংবিধানিক রেফারেন্স হিসেবে গণ্য হবে।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “এ ঘোষণাপত্রটি যদি কেবল রাজনৈতিক অনুচ্চার প্রতিশ্রুতি হয়, তবে এর সাংবিধানিক গুরুত্ব থাকবে না। আমরা চাই, এটি সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হোক।”
ঘোষণাপত্রে কী আছে
খসড়া ঘোষণাপত্রে মোট ২৬টি দফা রয়েছে।
প্রথম ২১টি দফা: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান, গণআন্দোলনের ঐতিহাসিকতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিবরণ
শেষ ৫টি দফা: গুম-খুনের বিচারের অঙ্গীকার, মানবাধিকার রক্ষা, আইনের শাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি
এতে ২০২১–২০২৪ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের স্বীকৃতি রাখা হয়েছে।
বিকল্প পথে বাস্তবায়ন: আইন, অধ্যাদেশ, গণভোট?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘোষণাপত্র কার্যকর করতে হলে থাকতে হবে একটি আইনি ভিত্তি। সম্ভাব্য ৩টি পথ:
১. রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ: জরুরি ভিত্তিতে এটি রূপান্তর করা যায়
২. সংসদীয় বিল: আলোচনা শেষে সংসদে প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে স্বীকৃতি
৩. গণভোট: জনগণের প্রত্যক্ষ রায়ের মাধ্যমে সাংবিধানিক অনুমোদন
তবে এর কোনটি হবে, এখনো পরিষ্কার নয়। সরকার বা কমিশন এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়নি।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থাহীনতা কাটাতে জুলাই সনদ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তবে তা বাস্তবায়নে একটি স্পষ্ট রূপরেখা দরকার।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “সবার জন্য রাজনৈতিক ক্ষেত্র উন্মুক্ত করতে হবে। যারা বর্তমানে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ, তাদের বিষয়েও ভাবতে হবে। তাহলেই গণতন্ত্র প্রকৃত অর্থে শক্তিশালী হবে।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “এটি ইতিহাসের এক মোড়লগ্ন মুহূর্ত। আমরা ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে যে সনদ চূড়ান্ত করেছি, তা ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর বাস্তবায়ন কাঠামো নির্ধারণ।”
৫ আগস্টের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। এতে থাকবেন ছাত্র আন্দোলনের নেতা, নিহতদের পরিবার, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে এই ঘোষণা কি কেবল অতীত স্মরণে একটি আয়োজিত মুহূর্ত, নাকি বাস্তব রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রথম ধাপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রাশিদুল হক বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ ও তার ভিত্তিতে প্রস্তুত ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হতে পারে। যতি এটি আইনি কাঠামোতে প্রণীত হয়। সব রাজনৈতিক দল সম্মত হয়ে স্বাক্ষর করে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তব বাস্তবায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। অন্যথায়, এই সনদ কেবল ঐতিহাসিক একটি প্রতীক, কিন্তু বাস্তব রাজনৈতিক পরিবর্তনের বাহক হয়ে উঠবে না।”
ঢাকা/এএএম/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক স স ক র র র জন ত ক প রস ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লিপস্টিক ইফেক্ট: মন্দায় প্রসাধনীর চাহিদা কেন বাড়ে?
চলতি অর্থবছরে আমদানি করা প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজের ওপর কাস্টমস শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে এবং তা কার্যকরের পথে। সরকারি নীতিনির্ধারকেরা হয়তো ভাবছেন এতে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বাজারপ্রবণতা বলছে, বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও প্রসাধনসামগ্রীর চাহিদা কমে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে বাড়ে। এ ঘটনাকে অর্থনীতিবিদেরা ‘লিপস্টিক ইফেক্ট’ নামে অভিহিত করেছেন।
লিপস্টিক ইফেক্ট একটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব, যা ব্যাখ্যা করে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় মানুষ কেন কম দামি বিলাসবহুল পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
২০০১ সালে এস্তে লডারের চেয়ারম্যান লিওনার্ড লডার ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তিনি লক্ষ করেন, মন্দার সময়েও লিপস্টিকের বিক্রি বেড়েছে। জেপি মরগান প্রাইভেট ব্যাংকের আচরণগত বিজ্ঞানের প্রধান জেফ ক্রিসলার বলেন, ‘মানুষ ১০ ডলারের ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি সহ্য করতে পারে, কিন্তু বাড়ির ক্ষেত্রে তা অসম্ভব।’
২০০৮-১০ সালের বিশ্বমন্দার সময় ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা যায়, ১৮-৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রসাধনীর ব্যয় গড়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এই প্রবণতা বিবাহিত ও অবিবাহিত—সব নারীর মধ্যেই দেখা গেছে।
বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত পরিচর্যা বাজার দ্রুত বাড়ছে।
২০২৩ সালে এর বাজার ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৭ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫৫ বিলিয়নে পৌঁছাতে পারে। আধুনিক যুগে বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব ক্রমবর্ধমান। ২০২৪ সালে ওরভেওন ব্র্যান্ডগুলোর ডিজিটাল বিক্রি ২০২২ সালের ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইউটিউব ও টিকটকের নতুন ইনফ্লুয়েন্সাররা কোম্পানিগুলোর ২০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রয় চালাচ্ছেন।
গবেষণায় লিপস্টিক ইফেক্টের তিনটি প্রধান তত্ত্ব পাওয়া গেছে। সবচেয়ে শক্তিশালী হলো মনোবৈজ্ঞানিক প্রতিস্থাপন তত্ত্ব, যেখানে মানুষ ব্যয় সংকোচন করে দামি পোশাক বা অলংকার না কিনে কম খরচে ‘নিজেকে ভালো রাখার’ উপায় খোঁজে।
বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত পরিবারে উৎসবে নতুন পোশাকের পরিবর্তে প্রসাধনী কেনার প্রবণতা এই তত্ত্বকে সমর্থন করে।
দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, আর্থিক অনিশ্চয়তায় নারীরা নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনসঙ্গী খোঁজার সম্ভাবনা বাড়াতে চান। বাংলাদেশের সমাজেও এ প্রবণতা দেখা যায়। তবে গবেষণা বলছে, বিবাহিত নারীরাও একই কারণে প্রসাধনী কেনেন।
আরও পড়ুনপ্রসাধনীতে উচ্চ ভ্যাট বসালে আসলেই কি রাজস্ব বাড়বে০৩ জুন ২০২৫তৃতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, চাকরি পাওয়ার জন্য বা রক্ষার লক্ষ্যে প্রসাধনীর ব্যবহার বাড়ে। তবে এ বিষয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মজীবী ও বেকার উভয় নারীর প্রসাধনী ব্যয়ে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি।
সরকার যদি প্রস্তাবিত শুল্ক বৃদ্ধি বাস্তবায়ন করে, তাহলে কয়েকটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমত, অবৈধ আমদানি বাড়বে, সরকার রাজস্ব হারাবে এবং সাধারণ ভোক্তা নিম্নমানের পণ্যের ঝুঁকিতে পড়বে। অনেক অনলাইন উদ্যোক্তা আমদানি করা প্রসাধনী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই শুল্কবৃদ্ধি তাঁদের জন্য ক্ষতিকর হবে।
উচ্চ শুল্ক দেশীয় উৎপাদকদের প্রতিযোগিতাহীন একটি স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবেশ তৈরি করবে, যা মানোন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই পটভূমিতে কিছু বাস্তবসম্মত বিকল্প ভাবা জরুরি। যেমন দেশীয় শিল্পের উন্নয়নে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ তৈরি এবং কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস। পাশাপাশি হালাল সার্টিফিকেশন অর্জনের মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলোয় রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ানো যেতে পারে।
আরও পড়ুনকর ফাঁকি না ধরে ভ্যাট বাড়ানোর সহজ রাস্তা কেন? ০৫ জানুয়ারি ২০২৫প্রসাধনীকে সাধারণভাবে একটি ‘নরমাল গুড’ ধরা হয়। আয় বাড়লে এর চাহিদা বাড়ে। কিন্তু মন্দার সময়ও এর চাহিদা কমে না। জেপি মরগানের দীপ্তি নাগুলাপল্লি বলেন, ‘যখন বড় কিছু আপনার নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন আপনি ছোট কিছুতে সান্ত্বনা খুঁজে নেন।’
আন্তর্জাতিক বাজারে এর বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিলাসবহুল ব্র্যান্ড এলভিএমএইচের পারফিউম ও প্রসাধনী বিভাগের মুনাফা ৩ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে চার মাসেই বিউটি স্টোরে গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশের বাজারেও প্রসাধনী খাতে ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ দেশীয় কোম্পানির হাতে। তাদের বার্ষিক কারবার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন টাকা এবং এতে প্রায় ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। তবে এই খাতে কাঁচামালের ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর, প্রযুক্তিগত দক্ষতা কম এবং ব্র্যান্ডিং দুর্বল।
লিপস্টিক ইফেক্ট একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা, যা বাংলাদেশেও প্রযোজ্য। মন্দার সময় মানুষ প্রসাধনী কেনার মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ের একধরনের প্রতীক খোঁজে। এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা—তিন পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধিপত্য প্রসাধনী ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভার্চ্যুয়াল মেকআপ ট্রাই-অন অ্যাপ, ইউটিউব-ইনস্টাগ্রাম রিভিউ, রেটিং ও ‘সোশ্যাল শপিং’ এখন ক্রয়ের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখছে।
অর্থনৈতিক চাপে থাকা মার্কিনরা ৩০ ডলারের ডিওর লিপ প্লাম্পার কিনলেও বাড়ি বা গাড়ি কেনার কথা ভাবেন না। এই ক্ষুদ্র বিলাসিতা মানসিক চাপ প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এবারের বাজেটে প্রসাধনী আমদানিকারকেরা এক গুরুতর বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এনবিআর আমদানি করা কসমেটিকসে নতুন মিনিমাম ভ্যালু নির্ধারণের মাধ্যমে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়েছে, যেখানে আগেই এই পণ্যে মোট করভার (টিটিআই) ছিল ১৫৮ থেকে ১৮৩ শতাংশ। অথচ রোলস-রয়েসের (ইলেকট্রিক) ওপর টিটিআই মাত্র ৮৯ শতাংশ।
এমনকি স্যামন, টুনা মাছ, কাপড় ও জুতার ওপর কর হ্রাস করা হয়েছে এবারের বাজেটে। এসব তথ্যই প্রমাণ করে, আমদানি করা কসমেটিকস ব্যবসায়ীরা জাতীয় বাজেটে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
লিপস্টিক ইফেক্ট একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা, যা বাংলাদেশেও প্রযোজ্য। মন্দার সময় মানুষ প্রসাধনী কেনার মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ের একধরনের প্রতীক খোঁজে। এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা—তিন পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে।
প্রতিযোগিতা উৎকর্ষের জন্ম দেয়। প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি মানে গুণগত উন্নয়নের অনুপস্থিতি। তাই সরকারের উচিত সুরক্ষাবাদী নীতির পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবনী পরিবেশ সৃষ্টি করা, যা সত্যিকার অর্থেই দেশীয় শিল্পের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে।
নির্মল রায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ