‘আমাদের পরিবারের মা, ভাই–বোন সবাইকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব, আমাদের আর নিঃস্ব করবেন না। আমরা বাঁচতে চাই। দয়া করে আমাদের একটু বাঁচতে দিন।’ এভাবেই বাঁচার আকুতি জানান রুমা আক্তার।
গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক বেচাকেনার অভিযোগে এক নারী ও তাঁর দুই ছেলে-মেয়েকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই নারীর আরেক মেয়ে এই রুমা আক্তার। তিনিই আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরম খাঁ হলে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩) ও তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। ঘটনার দিনই রাতেই রোকসানার বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। রাত ১২টার দিকে সেটি মামলা হিসেবে নেয় পুলিশ।
আজ সংবাদ সম্মেলন রুমা আক্তার জানান, বাদী রিক্তাসহ তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে অসহায় জীবন পার করছেন। তাঁদের মেরে ফেলার জন্য খোঁজা হচ্ছে। তিনিও পালিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রাণভয়ে তাঁরা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে বর্তমানে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
ঘটনার দিন পুলিশের যথাযথ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে রুমা আক্তার বলেন, ‘আমার মাথায় ৭২টি সেলাই দিতে হয়েছে। ঘটনার সময় একাধিকবার স্থানীয় পুলিশ এবং ৯৯৯ সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি; বরং তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।’
হত্যার কারণ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে রুমা বলেন, ‘বাবা ও এক ভাইয়ের বিদেশ থেকে পাঠানো টাকায় মা রোকসানা বাড়িতে একটি ভবন নির্মাণ করেন। এ থেকেই মূলত স্থানীয়দের প্রতিহিংসা শুরু হয়। শিমুল বিল্লাহ চেয়েছিলেন, তাঁর পছন্দের লোক দিয়ে আমাদের ভবনের কাজটি করাতে। কিন্তু মা তা করেননি। শিমুল বিল্লাহ পরে আনু মেম্বারের মাধ্যমে তাঁর লোকজনকে চাঁদার জন্য পাঠালেও তাঁদের মা (রোকসানা) দেননি। এরপর মাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। বাড়ির কাচ ও বিদ্যুতের মিটার ভেঙে ফেলা হয়। এ নিয়ে সে সময় ডিবিতে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে শিমুল চেয়ারম্যানের ছত্রচ্ছায়ায় একটি কিশোর গ্যাংকে আমাদের পরিবারের পেছনে লেলিয়ে দেওয়া হয়।’
রুমা আক্তার আরও বলেন, তাঁর মা বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে দুইবার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। বিএনপি–সমর্থিত হওয়ায় তাঁকে জিততে দেওয়া হয়নি। উল্টো জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হওয়ায় তখন থেকে হয়রানি করতে তাঁর মায়ের নামে বিভিন্ন মামলা দিয়েছিলেন। এমনকি মানহানির জন্য তাঁর মাকে মাদকের মামলায় জড়ানো হয়।
হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে রুমা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঘটনার আগের দিন রাতে কড়ইবাড়ি গ্রামে তরু মিয়ার বাড়িতে শিমুল বিল্লাহ চেয়ারম্যান, আনু মেম্বার, মধু ও মতিনের উপস্থিতিতে বাচ্চা মেম্বার, রবিউল ও শরিফের আহ্বানে এক গোপন বৈঠক হয়। সেখানে প্রথমে রোকসানকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। পরে তাঁদের পরিবারের সবাইকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে টাকার লেনদেন হয় ও খুনি ভাড়া করা হয়।
এ ঘটনায় রুমার বড় বোন রিক্তা আক্তার মামলার বাদী হলেও আসামিদের তালিকা পুলিশ ‘সাজিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন রুমা। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত র্যাব কয়েকজন আসামি ধরলেও পরে আর কোনো আসামিকে ধরা হয়নি। এ ছাড়া মামলা নিয়ে পরিবারের আপত্তি থাকলেও পুলিশ সেটা কর্ণপাত করছে না। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে থাকলেও প্রধান আসামি হিসেবে তাঁর নাম বাদ গেছে।’
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার মদদেই এই হত্যাকাণ্ডে শিমুল চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দেন বলে দাবি করেন রুমা আক্তার। তিনি বলেন, কিন্তু শিমুল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিছু আসামির জামিনও হয়েছে। অন্য আসামিরা প্রকাশ্যেই এলাকায় ঘুরছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের দাবিসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার, মামলার পুনর্বিন্যাস ও নতুন আসামির নাম যোগ করা, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ভুক্তোভোগী পরিবারের সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রোকসানা আক্তারের স্বামী খলিলুর রহমান, মামলার বাদী রিক্তা আক্তার, নিহত রাসেলের স্ত্রী মিম আক্তার এবং নিহত জোনাকি আক্তারের তিন শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে এসব অভিযোগ সম্পর্কে কথা বলতে বিল্লাল হোসেনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। এমনকি খুদে বার্তাও পাঠানো হয়। তবে তিনি এতে সাড়া দেননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র পর ব র র আম দ র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে ঈদগাহ মাঠে ‘মেলা’ আয়োজন ঘিরে উত্তেজনা, সংঘর্ষের আশঙ্কা
রূপগঞ্জে ঈদগাহ মাঠে বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে ফুসে উঠেছে স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসী। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা মুসল্লিদের মানববন্ধন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি।
দীর্ঘদিনের ধর্মীয় পবিত্রতার প্রতীক দড়িকান্দি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে গান-বাজনা, আনন্দমেলা আর অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ায় ধর্মপ্রাণ মানুষদের মাঝে নেমে এসেছে চরম ক্ষোভ। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছেন এই পবিত্র স্থানে মেলা নয়, যেন চলছে ধর্মের উপর প্রকাশ্য আঘাত।
ঈদগাহের পবিত্রতা রক্ষায় অবিলম্বে মেলা বন্ধ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে শুক্রবার (১ আগস্ট) জুমার নামাজের পর ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেছে শতাধিক মুসল্লি ও স্থানীয় এলাকাবাসি। এসময় দ্রুত মেলা বন্ধের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃক্ষ মেলা নাম দিয়ে প্রচার চালানো হলেও পহেলা আগস্ট মাঠে শুরু হয় তথাকথিত “রূপগঞ্জ কৃষি ও কুটির শিল্প মেলা। অথচ ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র না আছে কৃষি, না আছে কুটির শিল্প। চোখে পড়ে বাহারি সাজসজ্জা, বেপরোয়া গান-বাজনা, উচ্ছৃঙ্খল যুবক-যুবতী, প্রেমিক যুগলের অবাধ বিচরণ এবং দোকানপাটে চলছে বাণিজ্যিক বিনোদনের নামে নানা অপকর্ম।
স্থানীয়রা বলেন, এমন পরিবেশ শুধু ঈদগাহের পবিত্রতাকেই অপমান করছে না, বরং ইসলামি সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধকেও চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
মেলার প্রতিবাদে মানববন্ধনের আগে এক মুসল্লির জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পাশের মাদ্রাসা মাঠে। ঈদগাহ দখল থাকায় মুসল্লিদের স্থান সংকট ও বিশৃঙ্খলার শিকার হতে হয়। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন উপস্থিত জনতা।
অভিযোগ রয়েছে, এই মেলার জন্য কোনো বৈধ অনুমতি নেই। তবুও একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে আয়োজকরা। মেলার পেছনে উপজেলার শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কনক ও তার অনুসারীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করা হলে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠবে। তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অবিলম্বে মেলা বন্ধ করে মাঠের পবিত্রতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
এই ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু বলেন, ঈদগাহে মেলার ব্যাপারে কনক নামে এক ব্যক্তি আমার কাছে এসেছিলো । কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ঈদগাহ্ মাঠে মেলা হবে শুনে আমি কোন সমর্থন করিনি মেলার সাথে আমি এবং আমার দলের জড়িত না। কেউ যদি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে করে থাকে তাহলে এই বিষয়ে আমার জানা নেই।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, মেলার অনুমতির জন্য আমার কাছে আবেদন নিয়ে আসছিল কনক নামে এক ব্যক্তি।
আমি আবেদনটি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে মেলা বন্ধের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুসল্লীরা মানববন্ধন করেছে বলে আমি শুনেছি বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি ।