জাতির সামনে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ব্যস্ত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত দুটি বিষয় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। এ দুটি বিষয় একই বা কাছাকাছি মনে হলেও আসলে তা নয়। ঘোষণাপত্র ও সনদ দুটি পুরোপুরি আলাদা বিষয়।

সহজভাবে বলা যায়, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হলো ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের একটি দলিল। যার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। অন্যদিকে জুলাই জাতীয় সনদ হলো—রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ঐকমত্যের একটি রাজনৈতিক দলিল।

গত বছরের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পর থেকেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র, তরুণেরা অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলে আসছেন। তাঁরা একাধিকবার নিজেরা এ ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে সরকার বিষয়টি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠক করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শুরু থেকেই এই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সোচ্চার। দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, এই ঘোষণাপত্র না হলে ভবিষ্যতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল’ হিসেবে দেখিয়ে এতে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা বা এর মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে এ অভ্যুত্থানের একটি স্বীকৃতি দরকার। এ কাজটিই জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী থাকছে

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী কী থাকছে তার একটি খসড়া সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে। খসড়ায় মোট ২৬টি দফার উল্লেখ আছে। এর মধ্যে প্রথম ২১টিতে সংক্ষেপে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েমের সমালোচনা করা হয়েছে। ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’ ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যা’র বিষয়েও এখানে উল্লেখ আছে।

খসড়া ঘোষণাপত্রের একটি দফায় বলা হয়েছে, জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।

বাকি দফাগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে।

খসড়ার একটি দফায় বলা হয়েছে,‘ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪—এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।’

খসড়ায় যেভাবে বলা আছে সেভাবে এটি গৃহীত হলে জুলাই ঘোষণাপত্র ভবিষ্যতে সংবিধানের অংশ হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বিএনপির কিছুটা ভিন্নমত আছে। তারা জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় না রেখে চতুর্থ তফসিলে রাখার পক্ষে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।

জুলাই সনদ কী

গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তৈরি করা হবে একটি সনদ। এটিই ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। এই সনদেরও একটি খসড়া তৈরি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

মোটাদাগে, জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার উল্লেখ। আর তৃতীয় অংশে থাকছে, সনদ তথা সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। সেখানে বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।

তবে এই অঙ্গীকারের বিষয়ে কোনো কোনো দলের আপত্তি আছে। শুধু এ ধরনের অঙ্গীকার করা হলে শেষ পর্যন্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অনেকের শঙ্কা আছে। তারা চায় জুলাই জাতীয় সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক।

সংস্কার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে এখন আবার রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর চূড়ান্ত করা হবে জুলাই জাতীয় সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশ নেয়। সনদে এই দলগুলোর সই করার কথা রয়েছে। আগামী দিনের সংবিধান কেমন হবে, তার রূপরেখা থাকবে এই জাতীয় সনদে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স স ক র প রস ত ব জ ল ই জ ত য় সনদ উল ল খ র একট খসড় য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলকে অস্ত্র দেবে না কানাডা

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অবনতির প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলে সমরাস্ত্র রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেছে কানাডা। রবিবার (৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

শনিবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিতা আনন্দ এক বিবৃতিতে জানান, গাজায় ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে- এমন সামগ্রী রপ্তানির জন্য ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কোনো নতুন লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়নি।

তিনি বলেন, “গাজায় ব্যবহৃত হতে পারে- এমন সামরিক পণ্যের লাইসেন্স আমরা ২০২৪ সালের শুরুতেই স্থগিত করেছি এবং এখনও তা স্থগিতই রয়েছে। কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।”

আরো পড়ুন:

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল আরো ৬৮ ফিলিস্তিনির

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি: কানাডার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুুঁশিয়ারি

গত ২৯ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কানাডা থেকে ইসরায়েলে এখনও অস্ত্র যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আনন্দ বলেন, ‘প্রতিবেদনের বেশ কিছু দাবি বিভ্রান্তিকর এবং বাস্তবতা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “প্রতিবেদনে যেগুলোকে গুলি বলা হয়েছে, সেগুলো আসলে পেইন্টবল ধাঁচের। এগুলোর সঙ্গে এমন যন্ত্রও ছিল, যা আগ্নেয়াস্ত্রকে সাধারণ গোলাবারুদ ব্যবহারে অকার্যকর করে তোলে। এগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী নয়। যদি কেউ এমন কিছু ব্যবহারের চেষ্টা করে, তা হলেও সেটির জন্য লাইসেন্স লাগবে- আর সেই লাইসেন্স কখনোই দেওয়া হতো না।”

তিনি আরো নিশ্চিত করেন, “লাইসেন্স স্থগিত হওয়ার আগ থেকেই কোনো কানাডীয় প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলে মর্টার সরবরাহ করেনি- সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোনও ভাবেই নয়।”

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে আরো বলেন, “বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কেউ সামরিক পণ্য রপ্তানি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে জরিমানা, মালামাল জব্দ এবং ফৌজদারি মামলা।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা কখনোই কানাডায় তৈরি অস্ত্রকে এই সংঘাতে ব্যবহৃত হতে দেব না।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পুনর্নির্বাচ
  • জুলাই সনদ ঘোষণায় শুরু হচ্ছে নতুন অধ্যায়
  • চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ
  • জুলাই মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৯%
  • জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৮ কোটি ডলার
  • ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • এখন আমার মোবাইলে ওর কোনো ফোন আসে না
  • ইসরায়েলকে অস্ত্র দেবে না কানাডা
  • গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের মামলায় দেবগৌড়ার নাতি সাবেক এমপি প্রজ্বলের যাবজ্জীবন