রোডম্যাপকে স্বাগত জানাই, তবে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি: এবি পার
Published: 29th, August 2025 GMT
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। তবে নির্বাচনি রোডম্যাপে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছে দলটি।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এ মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন:
রোডম্যাপ গতানুগতিক ও বিভ্রান্তিকর, জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি: জামায়াত
নির্বাচন সামনে রেখে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য ঘোষিত রোডম্যাপকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা প্রথম থেকেই প্রফেসর ইউনূসের প্রতি আস্থাশীল ছিলাম। তবে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই নির্বাচন কমিশন এই রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, আলোচনা করে রোডম্যাপটি আরো ভালো হতো।”
নির্বাচনি রোডম্যাপে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনসহ ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও ভোটার সচেতনতা এবং নির্বাচনি ব্যয়ভার প্রসঙ্গে কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে জানিয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রটোকল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারণার কিছু ব্যয় রাষ্ট্র বা নির্বাচন কমিশন বহন করবে, কিন্তু রোডম্যাপে তেমন কিছু দেখা যায়নি। কালো টাকার ছড়াছড়ি রোধে কমিশনের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ অনুপস্থিত।”
তিনি অভিযোগ করেন, “জুলাইয়ের গণআন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তরুণদের আকাঙ্ক্ষা বিবেচনায় নিয়ে ভোটার বয়স ১৭ বছরে নামানোর যে প্রস্তাব এসেছিল, সেটিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এছাড়া ভোটের দিন পর্যন্ত যাদের বয়স ১৭/১৮ হবে, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা তেমন কোনো কঠিন বিষয় ছিল না।”
তিনি বলেন, “সমাবেশ ও প্রচারণায় কমন পোস্টার-ফেস্টুন ব্যবহারের প্রস্তাব দিলে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয়ের বড় অংশ রাষ্ট্র বহন করলে কালো টাকার প্রভাবও অনেকাংশে কমে যেত। এছাড়া বুথভিত্তিক ভোটের পরিবর্তে খোলা মাঠে ভোট আয়োজন করলে সবার কাছে নির্বাচন আরো গ্রহণযোগ্য হবে।”
নির্বাচন কমিশন এখনও ট্র্যাডিশনাল নির্বাচনি পদ্ধতিই বজায় রেখেছে অভিযোগ করে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রশাসনের ওপর সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারায় জনগণের মধ্যে সংশয় রয়েছে।”
তিনি বলেন, “গত ২৪ বছরে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন করার মতো ভালো কমকর্তাও আমাদের নাই।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে.
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ