নরসিংদীতে কৃষিজমি-জলাশয় ভরাট, প্রশাসন নীরব
Published: 31st, August 2025 GMT
নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে বর্ষা মৌসুম এলেই শুরু হয় অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি, খাল, পুকুর এবং জলাশয় ভরাটের মহোৎসব। নদীর স্রোতের সঙ্গে এসে মিশে যায় মাটি ও বালু, আর সেই সুযোগকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে এক শ্রেণির প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ ও হাড়িধোয়া নদীর শাখা-প্রশাখায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বেপরোয়াভাবে ফসলি জমি ও জলাশয় ভরাটে লিপ্ত হচ্ছে। জেলা শহর থেকে শুরু করে পলাশ, শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও রায়পুরা— প্রতিটি উপজেলায় একই চিত্র।
রীতিমতো রাস্তার ওপর পাইপ বসিয়ে সরকারি আইন উপেক্ষা করে ভরাট করা হচ্ছে দুই ও তিন ফসলি জমি, পুকুর ও জলাশয়।
যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এ জলাশয় ও ফসলি জমি ভরাটের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, যেকোনো প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন বা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করলে জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তবুও এসব আইন যেন কাগজেই সীমাবদ্ধ।
সদর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক ও মৎস্যজীবী আরিফুর, সবুজ মিয়া, মো.
এসব কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা দৃষ্টিকটূ হয়ে উঠেছে। অজ্ঞাত কারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না তারা। বরং প্রশাসনের নাকের ডগায় এই দখলবাজি চলে আসছে বছরের পর বছর।
এই ভরাটের কারণে যেমন জেলায় জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশের ওপরও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল হাসান বলেন, “আবাদি জমি বা জলাশয় ভরাট করা আইনত দণ্ডনীয়। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বদরুল হুদা জানান, “আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। রেকর্ড অনুযায়ী যদি এটি জলাশয় বা পুকুর হয়, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/হৃদয়/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ