নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে বর্ষা মৌসুম এলেই শুরু হয় অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি, খাল, পুকুর এবং জলাশয় ভরাটের মহোৎসব। নদীর স্রোতের সঙ্গে এসে মিশে যায় মাটি ও বালু, আর সেই সুযোগকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে এক শ্রেণির প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ ও হাড়িধোয়া নদীর শাখা-প্রশাখায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বেপরোয়াভাবে ফসলি জমি ও জলাশয় ভরাটে লিপ্ত হচ্ছে। জেলা শহর থেকে শুরু করে পলাশ, শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও রায়পুরা— প্রতিটি উপজেলায় একই চিত্র। 

রীতিমতো রাস্তার ওপর পাইপ বসিয়ে সরকারি আইন উপেক্ষা করে ভরাট করা হচ্ছে দুই ও তিন ফসলি জমি, পুকুর ও জলাশয়।

যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এ জলাশয় ও ফসলি জমি ভরাটের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 

আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, যেকোনো প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন বা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করলে জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তবুও এসব আইন যেন কাগজেই সীমাবদ্ধ।

সদর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক ও মৎস্যজীবী আরিফুর, সবুজ মিয়া, মো.

ফয়সাল বলেন, বর্ষাকাল এলেই একদল লোক রাজনৈতিক পরিচয় ও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে জমি ও পুকুর দখলে নেমে পড়ে। এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভজনক প্রকল্পের প্রলোভনে ফেলে কৃষিজমি ভরাট করে ফেলে। অনেক জমি মালিক ভরাটে অনিচ্ছা জানালে তাদেরকে নানা হয়রানি ও হুমকির মুখে পড়তে হয়।

এসব কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা দৃষ্টিকটূ হয়ে উঠেছে। অজ্ঞাত কারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না তারা। বরং প্রশাসনের নাকের ডগায় এই দখলবাজি চলে আসছে বছরের পর বছর। 

এই ভরাটের কারণে যেমন জেলায় জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশের ওপরও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল হাসান বলেন, “আবাদি জমি বা জলাশয় ভরাট করা আইনত দণ্ডনীয়। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বদরুল হুদা জানান, “আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। রেকর্ড অনুযায়ী যদি এটি জলাশয় বা পুকুর হয়, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/হৃদয়/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি 

এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন আরফান হোসেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।’’

আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।

আরফান হোসেন বলেন, ‘‘ফেলানী হত্যার পর সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকে ইচ্ছে ছিল; বিজিবিতে চাকরি করব। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’’

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘‘ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে, দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।’’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।

ঢাকা/সৈকত/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ