ডাকসু নির্বাচন: সকালেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন
Published: 9th, September 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল ৮টায় ভোট কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল ৪টার মধ্যে কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে চলবে এই ভোটগ্রহণ।
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থী ও তার মাকে পাশাপাশি দাফন
কুবি শিক্ষার্থী ও তার মা নিহতের ঘটনায় মামলা
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে তেমন ভিড় দেখা না গেলেও এখন কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। কার্জন হল কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থীদের ভিড় এখন লক্ষণীয়।
ঝামেলা এড়াতে অনেকেই সকাল সকাল কেন্দ্রে চলে এসেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, দুপুরের দিকে লাইন আরো দীর্ঘ হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী ২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী রুপক বলেন, “আগে এসে ভোট দেওয়া ভালো। এখন পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশ আছে। ভালোভাবে ভোট দিতে পারছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদের ভিপি প্রার্থী আবু জার গিফারি ইফাত বলেন, “আমি চাই নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু আর শান্তিপূর্ণ হোক। এতদিন পর ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে—আমাদের জন্য এটা বড় বিষয়।”
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ২০ হাজার ৮৭৩ জন ছাত্র এবং ১৮ হাজার ৯০২ জন ছাত্রী। ছাত্রী ভোটারদের শতকরা হার ৪৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, আর ছাত্রদের হার ৫২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ছাত্র ভোটারদের মধ্যে অমর একুশে হলে ১২৯৫ জন, কবি জসীমউদ্দিন হলে ১৩০৩ জন, জগন্নাথ হলে ২২২২ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৬০৬ জন, ড.
ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে রোকেয়া হলে ৫৬৪১ জন, শামসুন নাহার হলে ৪০৮৪ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২১০৩ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৪৩৪ জন এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২৬৪০ জন আছেন।
গত জানুয়ারিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শদান, নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়ন-সংশোধন এবং ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন-পরিমার্জন করার বিষয়ে পৃথক ৩টি কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব কমিটি সংশোধন-পরিমার্জনের কাজ করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়।
গঠনতন্ত্র সংশোধন-পরিমার্জন কমিটির সুপারিশে দেখা গেছে, এবার ২৮টি পদ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে নতুন ৪টি পদ তৈরি করা হয়েছে। আর পরিমার্জন করা হয়েছে তিনটির; এরমধ্যে দুটি আলাদা পদ থেকে একটি পদে নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক’ করা হয়েছে। কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদকে ‘রিডিং রুম’ যোগ করে ‘কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক’ পদ করা হয়েছে। আগে সাহিত্য সম্পাদক এবং সংস্কৃতি সম্পাদক দুটি আলাদা পদ ছিল। এখন সেটি ‘সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক’ পদ করা হয়েছে।
বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৪টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব পদ হচ্ছে: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক; ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক।
নিয়ম অনুযায়ী, ডাকসুর সভাপতি ক্ষমতাবলে উপাচার্যই থাকেন। আর তিনি একজন অধ্যাপককে কোষাধ্যক্ষ মনোনীত করেন। ফলে এ দুটি পদে কোনো ভোটগ্রহণ হবে না।
যেসব পদে নির্বাচন হচ্ছে, তার মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), সদস্য পদ ১৩টি এবং ৫টি সম্পাদক পদে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অপরিবর্তিত ৫টি সম্পাদক পদ হলো: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক; আন্তর্জাতিক সম্পাদক; ক্রীড়া সম্পাদক; ছাত্র পরিবহন সম্পাদক এবং সমাজসেবা সম্পাদক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ২৮ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১০ জন প্রার্থী আপিল না করায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে চূড়ান্তভাবে ৪৭১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ১৫ জন এবং সদস্য পদে লড়াই করছেন ২১৭ জন।
ঢাকা/সৌরভ/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ম র জন রহম ন হল
এছাড়াও পড়ুন:
বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি
এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন আরফান হোসেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।’’
আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।
আরফান হোসেন বলেন, ‘‘ফেলানী হত্যার পর সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকে ইচ্ছে ছিল; বিজিবিতে চাকরি করব। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’’
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘‘ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে, দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।’’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।
ঢাকা/সৈকত/রাজীব