ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল ৮টায় ভোট কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল ৪টার মধ্যে কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে চলবে এই ভোটগ্রহণ।

আরো পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থী ও তার মাকে পাশাপাশি দাফন

কুবি শিক্ষার্থী ও তার মা নিহতের ঘটনায় মামলা

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে তেমন ভিড় দেখা না গেলেও এখন কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। কার্জন হল কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থীদের ভিড় এখন লক্ষণীয়।

ঝামেলা এড়াতে অনেকেই সকাল সকাল কেন্দ্রে চলে এসেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, দুপুরের দিকে লাইন আরো দীর্ঘ হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী ২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী রুপক বলেন, “আগে এসে ভোট দেওয়া ভালো। এখন পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশ আছে। ভালোভাবে ভোট দিতে পারছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদের ভিপি প্রার্থী আবু জার গিফারি ইফাত বলেন, “আমি চাই নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু আর শান্তিপূর্ণ হোক। এতদিন পর ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে—আমাদের জন্য এটা বড় বিষয়।” 

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ২০ হাজার ৮৭৩ জন ছাত্র এবং ১৮ হাজার ৯০২ জন ছাত্রী। ছাত্রী ভোটারদের শতকরা হার ৪৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, আর ছাত্রদের হার ৫২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ছাত্র ভোটারদের মধ্যে অমর একুশে হলে ১২৯৫ জন, কবি জসীমউদ্দিন হলে ১৩০৩ জন, জগন্নাথ হলে ২২২২ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৬০৬ জন, ড.

মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ১৯৯৮ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১৭৬২ জন, বিজয় একাত্তর হলে ২০২৭ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১৭৫১ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১৯৫৭ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬৬৪ জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ১৪৯৯ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৩৭৭ জন এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১৪০২ জন রয়েছেন।

ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে রোকেয়া হলে ৫৬৪১ জন, শামসুন নাহার হলে ৪০৮৪ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২১০৩ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৪৩৪ জন এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২৬৪০ জন আছেন।
গত জানুয়ারিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শদান, নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়ন-সংশোধন এবং ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন-পরিমার্জন করার বিষয়ে পৃথক ৩টি কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব কমিটি সংশোধন-পরিমার্জনের কাজ করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়।

গঠনতন্ত্র সংশোধন-পরিমার্জন কমিটির সুপারিশে দেখা গেছে, এবার ২৮টি পদ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে নতুন ৪টি পদ তৈরি করা হয়েছে। আর পরিমার্জন করা হয়েছে তিনটির; এরমধ্যে দুটি আলাদা পদ থেকে একটি পদে নিয়ে আসা হয়েছে। 

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক’ করা হয়েছে। কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদকে ‘রিডিং রুম’ যোগ করে ‘কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক’ পদ করা হয়েছে। আগে সাহিত্য সম্পাদক এবং সংস্কৃতি সম্পাদক দুটি আলাদা পদ ছিল। এখন সেটি ‘সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক’ পদ করা হয়েছে।

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৪টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব পদ হচ্ছে: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক; ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক।
নিয়ম অনুযায়ী, ডাকসুর সভাপতি ক্ষমতাবলে উপাচার্যই থাকেন। আর তিনি একজন অধ্যাপককে কোষাধ্যক্ষ মনোনীত করেন। ফলে এ দুটি পদে কোনো ভোটগ্রহণ হবে না।

যেসব পদে নির্বাচন হচ্ছে, তার মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), সদস্য পদ ১৩টি এবং ৫টি সম্পাদক পদে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অপরিবর্তিত ৫টি সম্পাদক পদ হলো: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক; আন্তর্জাতিক সম্পাদক; ক্রীড়া সম্পাদক; ছাত্র পরিবহন সম্পাদক এবং সমাজসেবা সম্পাদক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ২৮ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১০ জন প্রার্থী আপিল না করায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে চূড়ান্তভাবে ৪৭১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ১৫ জন এবং সদস্য পদে লড়াই করছেন ২১৭ জন।

ঢাকা/সৌরভ/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ম র জন রহম ন হল

এছাড়াও পড়ুন:

পলিটিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্টের চেয়ে দেশ অনেক বড়

ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম

সম্পর্কিত নিবন্ধ