ঠাকুরগাঁওয়ে ‘আয়শা সিদ্দিকা’ মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ তিন ছাত্রীর সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজের ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। 

নিখোঁজ ছাত্রীরা হলো- দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মুরারিপূর গ্রামের শাহজালালের মেয়ে জুঁই (১৪), একই উপজেলার গণকপয়েনর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তামান্না বোরকা (১৬) এবং ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গোবিন্দ নগর এলাকার বাসিন্দা রবিউলের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা হাসি (১৩)। এদের মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা হাসি হাফেজিতে পড়ে, অপর দুজন পড়ে আলেমা বিভাগে।

এ বিষয়ে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছে আয়শা সিদ্দিকার পরিবার।

মাদ্রাসার পরিচালক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় সর্বশেষ মাদ্রাসায় দেখা যায় নিখোঁজ তিন ছাত্রীকে। ভোর ৫টার সময় তাদের রুমে ডাকতে গেলে তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে মাদ্রাসার দোতলার বারান্দায় মশারী ঝুলন্ত অবস্থায় বাঁধা দেখতে পেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ধারণা করেন মেয়ে তিনটি পালিয়ে গেছে।

শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সূত্রে জানাগেছে, নিখোঁজ তিন ছাত্রী রাত ১টার সময় প্রথমে একটি রিকশায় করে প্রথমে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়। তারপর রিকশা বদল করে তারা ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনে উপস্থিত হয়। তবে সেই রাতে কোনো রেলগাড়ি না পেয়ে রোড আবাসিক হোটেলে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে। পরে আবাসিক হোটেলের ম্যানেজারের সহায়তায় আবার তারা স্টেশনে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে রোড অটোস্ট্যান্ডে ফিরে আসে। পরে ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জের উদ্দেশ্যে একটি অটো নিয়ে রওনা হয়। 

এদিকে তিন কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তাদের পরিবার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করছে।

নিখোঁজ তামান্নার মা আখলিমা বেগম বলেন, “মাদ্রাসায় অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। তবুও কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা ভবনে কোনো প্রকার নিরাপত্তা প্রহরী রাখেনি। ভবনের বারান্দায় কোনো প্রকার গ্রিল নেই। ফলে সহজেই কেউ চাইলে ভবনের ভিতরে বা ভবন থেকে বাইরে যেতে পারছে। মাঝরাতে প্রায় রাত ১২টার পরে মাদ্রাসার ভবন থেকে নাবালিক মেয়েরা সকলের অগোচরে কীভাবে বের হয়ে যায়। আমরাতো আমাদের মেয়েদেরকে তাদের ভরসায় সেখানে রেখেছিলাম।”

নিখোঁজ কিশোরী আয়শার বোন লাবণী বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মারধর করে নির্যাতন করছে। আমার বোন নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে আমাদের এই নির্যাতনের কথা জানিয়েছিল এবং দ্রুতই সেখান থেকে নিয়ে আসতে বলেছিল। তবে আমরা নিয়ে আসিনি, যার ফলে আজ আমার বোনকে হারাতে হলো। আমি নিশ্চিত, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্যাতনের কারণে এই তিন মেয়ে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গেছেন।”

মাদ্রাসার ভবনে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার দায় স্বীকার করে আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসার পরিচালক মুসফিক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা বুঝতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে। আমার মাদ্রাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছিলাম। তবে আমার বিরুদ্ধে যে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা ভিত্তিহীন। ওরা হয়তো কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।”

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, “মেয়েগুলোর কাছে কোনো মোবাইল না থাকায় তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা আমাদের কাছে কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে শিগগিরই এই বিষয়ে অগ্রগতির দিকে পৌঁছাবে পুলিশ।”

ঢাকা/হিমেল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঠ ক রগ

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। 

রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আরো পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের

শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।” 

শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।

মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।

তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি।  ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ