ভারতে শিশুদের জন্য তৈরি তিনটি কফ সিরাপে দূষিত উপাদান শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সেগুলোর ব্যবহারে সতর্কতা জারি করেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষকে তাদের নিজ নিজ দেশে ওই তিনটি কফ সিরাপ ব্যবহারের বিষয়ে কোনো তথ্য পেলে তা জানাতে বলা হয়েছে।

ডব্লিউএইচও বলেছে, দূষিত ওই তিনটি কফ সিরাপ হলো স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের কোল্ডরিফ, রেডনেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের রেসপিফ্রেশ টিআর এবং শেপ ফার্মার রিলাইফ। এগুলোর নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাচের কফ সিরাপে মাত্রাতিরিক্ত দূষিত উপাদান পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, দূষিত পণ্যগুলো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং জীবনকে হুমিকর মুখে ঠেলে দিতে পারে।

ভারতের ওষুধ তদারক কর্তৃপক্ষ সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) ডব্লিউএইচও–কে জানিয়েছে, এই কফ সিরাপ পানে সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওরা জেলায় যে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সবার বয়স পাঁচ বছরের কম।

ওই কফ সিরাপে সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০০ গুণ বেশি ডাইথাইলিন গ্লাইকোল পাওয়া গেছে। ডাইথাইলিন গ্লাইকোল একটি বিষাক্ত দ্রাবক। এটির মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি কফ সিরাপগুলোকে দূষিত করেছে।

দূষিত এই ওষুধগুলো ভারত থেকে অন্য কোথাও রপ্তানি করা হয়নি। অবৈধ পথে দেশের বাইরে পাঠানোর কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি।সিডিএসসিও

সিডিএসসিও বলেছে, দূষিত এই ওষুধগুলো ভারত থেকে অন্য কোথাও রপ্তানি করা হয়নি। অবৈধ পথে দেশের বাইরে পাঠানোর কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি।

এর আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ভারতের মধ্যপ্রদেশের একটি জেলায় আচমকা একের পর এক শিশু মারা যেতে থাকে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা হন্যে হয়ে এর কারণ খুঁজতে থাকেন।

আরও পড়ুনগাম্বিয়ায় ৬৬ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ভারতীয় কোম্পানির কাশির সিরাপ নিয়ে তদন্ত০৬ অক্টোবর ২০২২

অন্তত ১৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল এবং সেটা হয়েছিল একটি চেনা কফ সিরাপ খাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। তখন বলা হয়েছিল, মারা যাওয়া শিশুদের বয়স এক থেকে ছয় বছরের মধ্যে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা খাওয়ার পানি থেকে শুরু করে মশার কামড়ের শঙ্কা পর্যন্ত সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন।

তারপর জানা গেল, এই শিশুদের সবারই কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল। তারা সবাই যে কফ সিরাপটি খেয়েছিল, সেটার নাম কোল্ডরিফ।

জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, দূষিত পণ্যগুলো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং গুরুতর অসুস্থতা প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

কর্মকর্তারা কফ সিরাপটি পরীক্ষা করতে চেন্নাইয়ে একটি সরকারি পরীক্ষাগারে পাঠান। সেখান থেকে কয়েক সপ্তাহ পর নিশ্চিত করা হয় যে কফ সিরাপটিতে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ ডাইথাইলিন গ্লাইকোল আছে। এই বিষাক্ত দ্রাবকটি শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হয়। এটি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে সচরাচর কিডনি বিকল হয়ে যায়।

শুধু মধ্যপ্রদেশে নয়, প্রতিবেশী রাজস্থান রাজ্যেও দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। অভিযোগ আছে, তারাও স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি কাশির সিরাপ খেয়েছিল।

আরও পড়ুনভারতীয় সিরাপ কেলেঙ্কারি: ভেজাল কোথায়, বলতে পারে আড়ালের ‘সূত্র’২৪ মে ২০২৩

ভারতে তৈরি কফ সিরাপে থাকা বিষাক্ত দ্রাবক ডাইথাইলিন গ্লাইকোল বছরের পর বছর ধরে বহু শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়েছে। ২০২৩ সালে গাম্বিয়ায় ৭০টি এবং উজবেকিস্তানে ১৮ শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ভারতের তৈরি কফ সিরাপের কথা এসেছিল।

তার আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে কফ সিরাপ খেয়ে অন্তত ১২ শিশুর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল।

তাদের সবার বয়স পাঁচ বছরের কম ছিল। সে সময় সেখানে কফ সিরাপ সেবনে আরও বেশি শিশুর মৃত্যুর হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন আন্দোলনকর্মীরা।

আরও পড়ুন ৯৯ শিশুর মৃত্যুর পর সব সিরাপ বন্ধ করল ইন্দোনেশিয়া২০ অক্টোবর ২০২২আরও পড়ুনমধ্যপ্রদেশে একের পর এক শিশুর মৃত্যু, আবারও কফ সিরাপের মরণফাঁদ০৯ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয় ছ ল বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের ৩ কাশির সিরাপ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভারতের তিনটি কাশির সিরাপের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছে। শিশুদের জন্য তৈরি এই ওষুধগুলোতে বিপজ্জনক মাত্রায় বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান থাকার খবর পাওয়া গেছে। 

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আরো পড়ুন:

তামান্নাকে নিয়ে আন্নু কাপুরের ‘অশ্লীল’ মন্তব্য

ভারতীয় ভ্যাকসিন-বীজ বিক্রি করায় ৪ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (১৩ অক্টোবর) ডব্লিউএইচও যে তিনটি কাশির সিরাপের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা জারি করেছে সেগুলো হলো- ভারতের শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি ‘কোল্ডরিফ’, রেডনেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি ‘রেসপিফরেশ টিআর’ এবং শেপ ফার্মার তৈরি ‘রিলাইফ’।

এই সিরাপগুলোতে ডায়াথিলিন গ্লাইকোল নামের একটি রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি ধরা পড়েছে, যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি। শিশুদের ওষুধ তৈরিতে এই উপাদানটি একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য হলেও মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা মারাত্মক বিষে পরিণত হয়।

সম্প্রতি ভারতের মধ্যপ্রদেশে শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপ খেয়ে ১৭ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। এরপরপরই এটি সহ আরো কয়েকটি কোম্পানির কাশির সিরাপের ব্যবহার বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। পাশাপাশি উৎপাদনও বন্ধ করা হয়েছে। 

ভারতের ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তাটি গ্রহণ করেছে এবং ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সিডিএসসিও আরো জানিয়েছে, বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত এই ওষুধগুলো ভারত থেকে রপ্তানি করা হয়নি এবং অবৈধ রপ্তানির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বিষাক্ত এই কাশির সিরাপগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ৩ কাশির সিরাপ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা