১৫ দিন বয়সী শিশু মরিয়ম জান্নাতকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মা মার্জিনা আক্তার। জন্মের পর থেকেই নিউমোনিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত সে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালে ভর্তি করালেও মরিয়মের চিকিৎসা চলছে মেঝেতে।

ফেনীতে হঠাৎ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ কারণে ভিড় বেড়েছে জেলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক-নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসা দিতে গিয়ে। নির্ধারিত শয্যায়ও স্থান হচ্ছে না সবার।

গত শুক্রবার ফেনী জেলা শহরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় মার্জিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর ফাজিলপুর গ্রাম থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মেঝের এক কোণে বিছানা পেতে শিশুকে নিয়ে থাকছেন তিনি। এতে আরও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

গত অক্টোবর থেকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুরা এখানে ভর্তি হতে শুরু করেছে। তবে নভেম্বরে সেটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। শিশুদের নিরাপদে রাখা ও সঠিক চিকিৎসা দেওয়ায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ।—বনানী বিশ্বাস, জ্যেষ্ঠ নার্স, ফেনী জেনারেল হাসপাতাল।

অবশ্য শুধু মরিয়ম নয়, তার মতো অন্তত দেড় শ শিশুর জায়গা হয়েছে মেঝের বিছানায়। সব মিলিয়ে হাসপাতালটিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রতিদিনই হাসপাতালের ধারণক্ষমতার অন্তত পাঁচ গুণ শিশু এ হাসপাতালে আসছে। তারা নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি ও শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ঋতু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। জায়গা না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল অথবা অন্য শহরে শিশুদের নিয়ে যাচ্ছেন। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন থেকে আসা আব্রাহাম ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত সাড়ে তিন মাস বয়সী শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। টানা তিন দিন মেঝেতে থাকলেও শয্যা পাচ্ছেন না। এমনকি কোনো রকম ওষুধও হাসপাতাল থেকে পাচ্ছেন না।

হাসপাতালে জায়গা নেই

২৫০ শয্যা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় শিশুদের ওয়ার্ড। এতে শয্যা রয়েছে ২৬টি। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত এতে ভর্তি ছিল ১২৫টি শিশু। প্রতিদিনই গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন নতুন রোগী এখানে ভর্তি হচ্ছে। জেলার ছয় উপজেলা ছাড়াও নোয়াখালীর সেনবাগ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, চট্টগ্রামের বারইয়ার হাট ও খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে শিশুরা এ হাসপাতালে আসছে। রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা দিতে সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ওয়ার্ডে ১০ জন নার্স ও ৩ জন কনসালট্যান্ট পালাক্রমে চিকিৎসা দেন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স বনানী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত অক্টোবর থেকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু এখানে ভর্তি হতে শুরু করেছে। তবে নভেম্বরে সেটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। শিশুদের নিরাপদে রাখা ও সঠিক চিকিৎসা দেওয়ায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স রওনক জাহান বলেন, ‘রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে ১৬ থেকে ১৭ জন নার্স প্রয়োজন। কিন্তু এখানে রয়েছে মাত্র ১০ জন। প্রতিটি রোগীর বিপরীতে একাধিক স্বজন থাকায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বিঘ্ন ঘটছে।’

যা বলছেন চিকিৎসকেরা

জানতে চাইলে হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ মো.

ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বল্প জনবল দিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মেঝে ও বারান্দায় ভর্তি হওয়া রোগীদের স্যালাইন ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া শেষে কিছুটা উন্নতি হলে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘হাসপাতালে জনবলসংকট রয়েছে। এরপরও সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। যত দ্রুত সম্ভব রোগীদের সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলে রোগী কমে যাবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঠ ন ড জন ত র গ চ ক ৎসক

এছাড়াও পড়ুন:

ঘাড়ের সমস্যায় হাসপাতালে ভারত অধিনায়ক, বোলিং কোচ বললেন ঘুমের সমস্যা

ঘাড়ে টান লাগায় ভারত অধিনায়ক শুবমান গিলকে শনিবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রোববার সকালেও তিনি হাসপাতালে আছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। কলকাতায় চলমান ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে তিনি আর মাঠে ফিরছেন না।

বিসিসিআইয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘(গতকাল) দিনের খেলা শেষে গিলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি এখন সেখানে পর্যবেক্ষণে আছেন। এই টেস্টে তিনি আর খেলতে পারবেন না। বিসিসিআইয়ের মেডিকেল দল তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখবে।’

শনিবার রাতেই গিলের মাঠে ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। ক্রিকেটবিষয়ক পোর্টাল ইএসপিএনক্রিকইনফো জানায়, ঘাড়ে টান লাগার পর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁকে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে বের করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখন তাঁর গলায় নেক ব্রেস ছিল এবং দলের চিকিৎসক সঙ্গে ছিলেন।

গতকাল ব্যাটিংয়ের সময় ঘাড়ে ব্যথা পান গিল। সাইমন হারমারের বলে সুইপে বাউন্ডারি মারার পরই অস্বস্তি অনুভব করে ঘাড়ের পেছনে হাত রাখেন, এরপর ফিজিওকে ডাকেন। পরে দ্রুত মাঠ ছেড়ে যান। গিল এরপর আর ব্যাট করতে নামেননি। ভারত প্রথম ইনিংসে ১৮৯ রানে অলআউট হয়।

ইএসপিএনক্রিকইনফো তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, গতকাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু হওয়ার আগে সম্প্রচারকরা গিলকে কোচিং স্টাফ এবং মেডিকেল দলের একজন সদস্যের সামনে ঘাড়ের ব্যায়াম করতে দেখেন। এর আগেও ২০২৪ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘাড়ে ব্যথার কারণে একটি টেস্ট খেলতে পারেননি তিনি।
ভারতের বোলিং কোচ মরনে মরকেল অবশ্য এটিকে গুরুতর হিসেবে দেখছেন না।

শনিবার দিনের খেলা শেষে তিনি বলেছেন, ‘গিল খুব ফিট খেলোয়াড়। নিজেকে খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে তাঁর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, এটা দুঃখজনক। আমার মনে হয়, আগে আমাদের বুঝতে হবে ঘাড়ের জড়তা কীভাবে হয়েছে। হয়তো আগের রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। আমি মনে করি না এটা ওর ওপর খেলাজনিত চাপের কারণে হয়েছে।'

গিলের অনুপস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঋষভ পন্ত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ