দেশে সর্বজনীন পেনশন চালুর আগে থেকেই জীবনবিমা কোম্পানিগুলো অবসর-পরবর্তী আর্থিক নিরাপত্তার পরিকল্পনা দিয়ে আসছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য এই বিমাভিত্তিক পেনশন ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বিমা সম্পর্কে মানুষের অনীহা ও অজ্ঞতার কারণে এই সুবিধা তেমন পরিচিতি পায়নি।

আজীবন কঠোর পরিশ্রমের পর অবসরজীবনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আর্থিক নিরাপত্তা। এই বিমা পরিকল্পনা সেই নিশ্চয়তা দেয়—বিশেষ করে তাঁদের জন্য, যাঁরা দীর্ঘ সময় প্রিমিয়াম দিতে চান না, কিন্তু অবসরের পর নিয়মিত পেনশন সুবিধা পেতে চান।

এই পরিকল্পনার আওতায় নির্দিষ্ট সময় প্রিমিয়াম দিলেই গ্রাহক অবসর-পরবর্তী সময়ে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশন পাবেন। যদি পলিসি চলাকালে দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কারণে গ্রাহক স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে বাকি মেয়াদের প্রিমিয়াম দিতে হবে না। অর্থাৎ পলিসিটি চালু থাকবে।

এ ছাড়া পেনশন শুরুর আগে মৃত্যু হলে মনোনীত (নমিনি) ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিমার অঙ্ক পাবেন। এ ছাড়া পেনশন গ্রহণকালীন মৃত্যুর ক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তি বাকি মেয়াদের পেনশন পাবেন। কেউ যদি পেনশনের মেয়াদ অতিক্রম করেও জীবিত থাকেন, মৃত্যুর আগপর্যন্ত একই হারে পেনশন পাবেন তিনি।

মেটলাইফ, ডেলটা লাইফসহ দেশের বিভিন্ন বিমা কোম্পানির এই পেনশন পরিকল্পনা আছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) পেনশন বিমা পলিসির নাম ছিল ‘ব্যক্তিগত পেনশন বিমা পলিসি’। কিন্তু সর্বজনীন পেনশন চালু হওয়ার পর এই পলিসি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগপর্যন্ত এটিই ছিল জীবন বীমা করপোরেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পলিসি।

মূল বৈশিষ্ট্য

১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে এই পেনশন বিমা পলিসি নেওয়া যায়। কিন্তু যত বেশি বয়সে এই বিমা নেওয়া হবে, প্রিমিয়াম ততই বেড়ে যাবে। সে জন্য গ্রাহকদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, বয়স কম থাকতেই পেনশন বিমা নেওয়া।

গ্রাহককে মেয়াদ পর্যন্ত নিয়মিত প্রিমিয়াম দিতে হবে। এর বিনিময়ে অবসরজীবনের প্রায় পুরোটা সময় এই বিমার ছায়ায় থাকা যায়। প্রিমিয়াম দিতে হয় নির্ধারিত সময়ে—১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত, নিজের সামর্থ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী। পেনশন দেওয়া হয় ন্যূনতম ১০ বছর। এরপর সর্বোচ্চ ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত গ্রাহক পেনশন পাবেন।

কত টাকা পেনশন পাওয়া যায়

এই বিমা নেওয়ার আগে গ্রাহকদের প্রথমেই ঠিক করতে হয়, তিনি ঠিক কত টাকার পেনশন নিতে চান। এটা নির্ভর করবে যিনি বিমা পলিসিটি নিতে চাইছেন, তার প্রয়োজনের ওপর। যেমন কেউ যদি মাসে ৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম চান, তাহলে তার ওপর ভিত্তি করে প্রিমিয়াম গণনা করা হবে।

প্রিমিয়াম পদ্ধতি

প্রিমিয়াম দেওয়ার পদ্ধতিও বেশ নমনীয়—চাইলে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক বা বার্ষিক—যেভাবে সহজ মনে হয়, সেভাবেই প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যায়। সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পলিসি নেওয়া যায়।

মৃত্যুর ক্ষেত্রে কী হয়

পেনশন বিমা পলিসির টাকা দেওয়া শুরুর ১০ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় বিমাগ্রহীতা মারা গেলে ১০ বছরের বাকি সময়ের জন্য পেনশনভোগীর নমিনি (মনোনীত) পেনশন পাবেন। পেনশন দেওয়া শুরুর নির্ধারিত তারিখের আগে বিমাগ্রহীতার স্বাভাবিক মৃত্যু হলে নমিনি চাইলে এককালীন অর্থও নিতে পারবেন।

সহযোগী বিমা

এই বিমায় অন্যান্য বিমার মতো দুর্ঘটনা বিমার সুবিধা থাকে। এই বিমা সুবিধা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত কার্যকর থাকে, অথবা যত দিন প্রিমিয়াম দেওয়া হয়, তার মধ্যে যেটি আগে শেষ হবে, তত দিন এটি কার্যকর থাকে। সেই সঙ্গে এই বিমা পলিসি থেকে ঋণ নেওয়া যায়।

বিমা করার আগে মনে রাখা দরকার, বিমা সাধারণ সঞ্চয় নয়, বরং বিমা হলো একধরনের নিরাপত্তা। মানুষকে নির্দিষ্ট কিছু অনিশ্চয়তার বিপরীতে নিশ্চয়তা দেয় বিমা। সেই সঙ্গে আছে সঞ্চয়। অর্থাৎ এটি কার্যত নিরাপত্তা ও সঞ্চয়ের মিশ্রণ। সেই সঙ্গে বাড়তি সুবিধা হলো, বিমা আয়করমুক্ত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প নশন প ব ন প নশন ব ম র জন য এই ব ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: গাঠনিক ক্ষমতারূপে গণভোট

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে প্রায় বছরব্যাপী দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর জুলাই সনদ প্রণয়নে সক্ষম হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো। রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তির বিলোপ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর আনয়নে এই সনদ কতটা সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে বসে লম্বা আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক, প্রশাসনিক ও আইনি রূপরেখা প্রণয়নে ভূমিকা রাখছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এর মূল্য কম নয়।

জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, এখনকার মূল বিতর্ক এটাই। এ নিয়ে বেশ কিছুটা বিভ্রান্তি কাজ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। বর্তমান নিবন্ধে আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের ভূমিকা ও জরুরত বিশ্লেষণ করব।

একটি মতামত দেখা যাচ্ছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছে। বর্তমান সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই, তাহলে কীভাবে কোন আইনি প্রক্রিয়ায় গণভোট আয়োজন করা যাবে?

খেয়াল রাখতে হবে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত গণভোট আর বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখিত সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় গণভোট এক নয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছিল। এই সংশোধনীকে অসাংবিধানিক সাব্যস্ত করে গণভোট পুনর্বহাল করা হলেও এখনো কার্যকর হয়নি।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের সাংবিধানিক ও আইনি চ্যালেঞ্জগুলো কী০৬ অক্টোবর ২০২৫

সংবিধানের বিশেষ কিছু অনুচ্ছেদসহ মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হয়। তবে সংবিধান যেহেতু জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের দলিল, গণভোটে জনগণের সরাসরি মতামত যাচাই করা ছাড়া এর কোনো ধরনের পরিবর্তন করা উচিত নয়।

তবে অনেক ক্ষেত্রে নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা পত্তন করার ক্ষেত্রেও গণভোটের দ্বারস্থ হওয়ার নজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। সে ক্ষেত্রে গণভোট জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রত্যক্ষ বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই গণভোটকে জনগণের গাঠনিক ক্ষমতা (কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার: সংবিধান প্রণয়ন, রহিতকরণ ও মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষমতা) হিসেবে গণ্য করা হয়। বিদ্যমান সংবিধানে এমন বিধান না থাকলেও গণ-সার্বভৌমত্বের অভিব্যক্তিরূপে নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থার পত্তন অথবা বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনে গণভোট প্রযোজ্য হয়।

জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা বর্তমান সময়ের সর্বাধিক জরুরি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সরকার একটি ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করতে পারে, যার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত হবে।

আদেশ নাকি অধ্যাদেশ

উল্লেখ করা শ্রেয়, আদেশ ও অধ্যাদেশ এক ব্যাপার নয়। অধ্যাদেশের এখতিয়ার ও কর্তৃত্ব সীমিত; এর মাধ্যমে সাংবিধানিক পরিবর্তনের বিহিত করা যায় না। কারণ, সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন (সুপ্রিম ল), অন্যদিকে অধ্যাদেশের ক্ষমতা সাধারণ আইনের (প্রাইমারি ল) সমতুল্য। সাধারণ আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আইনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অসাংবিধানিক। আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন, এমনকি সংবিধান বহাল থাকা অবস্থাতেও রাষ্ট্রপতি চাইলে আদেশ (অর্ডার) জারি করতে পারেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন একাধিক নজির রয়েছে। কাজেই আদেশ জারি করা মানেই সংবিধান বাতিল হয়ে যাওয়া—এই ধারণার ভিত্তি নেই।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ: প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শে রাষ্ট্রপতি একটি আদেশ দেবেন, যার নাম হবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’, যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে, সাধারণ নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে জনগণ সরাসরি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে রায় দেবেন। পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জনপ্রতিনিধিদের সভা জুলাই সনদে আনীত এবং গণভোট কর্তৃক অনুমোদিত মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পূর্ণ কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা পাবে।

ডুয়েল রোল বা দ্বৈত ভূমিকা: ওই নির্বাচিত সভার একই সঙ্গে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের গাঠনিক ক্ষমতা এবং সরকার পরিচালনার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে। জুলাই সনদে আনীত মৌলিক সংস্কার সংবিধানে গ্রহণ সম্পন্ন হলে ওই নির্বাচিত সভার গাঠনিক ক্ষমতা তথা গণপরিষদীয় ভূমিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে।

জনগণ রায় দেবে জুলাই সনদের ওপর। সে ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টকে ভিন্নমতসহ একমত, এভাবে বিবেচনা করার বিকল্প নেই। এ ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার সময় জুলাই সনদের বাস্তবায়নপদ্ধতি হিসেবে গণভোট আলোচনায় ছিল না; কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি হিসেবে গণভোট গৃহীত হওয়ার পর দলীয় নোট অব ডিসেন্ট আর প্রাধান্য পেতে পারে না।

সময়সীমা নির্ধারণ: আদেশে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে কত দিনের মধ্যে ওই নির্বাচিত সভা জুলাই সনদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে, যাতে সংস্কারপ্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকাল বিলম্বিত না হয়। যেমন ৯০ দিন বা প্রথম অধিবেশন।

গণরায়ের অনুমোদন: যদি গণভোটে জনগণ জুলাই সনদের পক্ষে মত দেন, তবে জুলাই সনদ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে বলে বিবেচিত হবে। পরবর্তী নির্বাচিত সভা তখন সাংবিধানিকভাবে অনুমোদিত ক্ষমতা অনুযায়ী জুলাই সনদের বিষয়বস্তু সংবিধানে সংযোজন ও সংস্কার সম্পন্ন করবে।

এ প্রক্রিয়ায় আনীত সংস্কার টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণভিত্তিক সাংবিধানিক সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করবে। তাই সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও জাতীয় চিন্তাশীল মহলকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের এই রূপরেখায় ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে গণ-অভিপ্রায়ই হয় রাষ্ট্রের নতুন দিকনির্দেশনা।

নোট অব ডিসেন্টের কী হবে?

জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট করা যাবে না, সংবিধানে এমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। কাজেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মতো ঐতিহাসিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গণভোট আয়োজনে কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টের মীমাংসা জরুরি। জনগণ রায় দেবে জুলাই সনদের ওপর। সে ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টকে ভিন্নমতসহ একমত, এভাবে বিবেচনা করার বিকল্প নেই। এ ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার সময় জুলাই সনদের বাস্তবায়নপদ্ধতি হিসেবে গণভোট আলোচনায় ছিল না; কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি হিসেবে গণভোট গৃহীত হওয়ার পর দলীয় নোট অব ডিসেন্ট আর প্রাধান্য পেতে পারে না।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হওয়ায় নোট অব ডিসেন্ট মানা বাধ্যতামূলক নয়। নোট অব ডিসেন্ট মানেই হচ্ছে ভিন্নমত সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া। গণভোট হবে জুলাই সনদের ওপর। একটি বা দুটি দলের ভিন্নমতের চেয়ে জনগণের অভিপ্রায় অনেক ঊর্ধ্বে। গণভোটের ফলাফল অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়নে পরবর্তী সংসদ বাধ্য থাকবে।

শুধু সংসদে মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন সাধন করা যায় না

বিএনপি একসময় বলেছে, সংসদই সাংবিধানিক সংস্কারের একমাত্র জায়গা। আমরা বারবার যুক্তিতর্ক হাজির করেছি, সংসদের কাছে স্রেফ সংশোধনীর ক্ষমতা (অ্যামেন্ডিং পাওয়ার) থাকে। এমনকি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আনীত সংশোধনীও পরবর্তী সময়ে আদালত বাতিল করে দিতে পারেন, যদি তা সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার বা মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন করে। অর্থাৎ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা যায় না।

জুলাই সনদে এমন অনেক সাংবিধানিক পরিবর্তন সুপারিশ করা হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে পরিবর্তন করে। হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সীমা, মূলনীতির পরিবর্তনসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে যা বিদ্যমান সংবিধানের অধীন গঠিত সংসদের এখতিয়ারবহির্ভূত। এ কারণে জনগণের গাঠনিক ক্ষমতার ওপর ভর করেই এ পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আদালত পরিবর্তিত গণ-অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে নতুন মৌলিক কাঠামোর আলোকে বিচারিক সিদ্ধান্ত নেবেন।

জুলাই সনদ গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হলে পরবর্তী সংসদ কিছু সময়ের জন্য (প্রথম অধিবেশন পর্যন্ত) দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে। গণভোটের রায়কে সংবিধানে গ্রহণ করার লক্ষ্যে গাঠনিক এখতিয়ারসম্পন্ন গণপরিষদ তার কাজ সম্পন্ন করে বাকি মেয়াদ সাধারণ আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে আইনসভার ভূমিকা পালন করবে। এ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অধিকতর স্থিতিশীল ও কার্যকর হবে।

জাবেদ রাসিন যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য, সংস্কার সমন্বয় কমিটি, এনসিপি

সারোয়ার তুষার যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রধান, সংস্কার সমন্বয় কমিটি, এনসিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এই সংস্কারের কোনো আইনগত বৈধতা নেই, মানুষের সমর্থন নেই: জি এম কাদের
  • গাজায় যেভাবে ইসরায়েলের পরাজয় আর ফিলিস্তিনের পুনর্জন্ম হলো
  • হামাসকে নিরস্ত্র করার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের, কিন্তু কীভাবে তা বললেন না
  • শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ
  • মাউশির মহাপরিচালককে ওএসডি
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত, কারণ অনিবার্য
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: গাঠনিক ক্ষমতারূপে গণভোট