মুন্সিগঞ্জে নিজ ঘরে আগুনে দগ্ধ হয়ে অসুস্থ নারীর মৃত্যু
Published: 16th, October 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে ঘরে আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়নের গাদিঘাট গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সামেলা বেগম (৬৮) গাদিঘাট গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন এবং হাঁটাচলা করতে পারতেন না।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে সামেলা বেগমের বোনের স্বামী মারা যান। সামেলার স্বামী আবদুর রাজ্জাকসহ পরিবারের সদস্যরা তাঁর বাড়িতে দাফনকাজ সম্পন্ন করতে যান। এ সময় সামেলা বেগম বাড়িতে একা ছিলেন। রাত ১১টার দিকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হঠাৎ তাঁদের বসতঘরে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। অসুস্থতার কারণে সামেলা বেগম ঘরের ভেতরেই আটকা পড়ে যান।
খবর পেয়ে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে আবদুর রাজ্জাকের বসতবাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। প্রথমে স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘর থেকে সামেলা বেগমের পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর একটি দিন। এদিন, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের ন্যাশনাল জুট মিলস রক্তাক্ত হয়। মিলের ভেতর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী সন্দেহে আটক ১০৬ জন নিরীহ বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
সেই থেকে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর শহীদদের স্মরণে কালীগঞ্জ গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহ শহীদদের গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তারা দোয়া ও মোনাজাত করেন শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায়।
আরো পড়ুন:
‘১৭ বছরে ৯৪ হাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা আড়াই লাখ করা হয়েছে’
১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল
কালীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম হুমায়ুন মাস্টার সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের সেই সকালে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা নাস্তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই পাশের ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে নদী পার হয়ে হানাদার বাহিনী মিল চত্বরে প্রবেশ করে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে অভিযান চালানোর নামে সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ধরে জড়ো করে।
সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে চলে ব্রাশফায়ার। প্রাণহীন হয়ে পড়ে একের পর এক শরীর। ন্যাশনাল জুট মিলে নেমে আসে নীরবতা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গণহত্যা শেষে পাকবাহিনী মিলের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। শহীদদের মরদেহ পড়ে ছিল মিলের সুপারি বাগানে। ভয় ও আতঙ্কে কেউ কাছে যাওয়ার সাহস পাননি। মরদেহগুলো শেয়াল-শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এলাকাবাসী মিল চত্বরে প্রবেশ করে বিকৃত অবস্থায় ১০৬ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করেন। তারপর মিলের দক্ষিণ পাশে কবর খুঁড়ে একসঙ্গে শহীদদের সমাহিত করেন তারা।
শহীদদের স্মরণে মিল কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’। গণকবরের পাশেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে একটি পাকা মসজিদ-যেখানে প্রতিনিয়ত দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া হয়।
কালীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, “খলাপাড়ার সেই ১০৬ শহীদের রক্তগাথা কেবল অতীত নয়-এটি জাতির কাছে এক চিরন্তন দায়বদ্ধতার স্মারক। নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস পৌঁছে দেওয়া আর শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি ন্যায্য সম্মান জানানোই হোক আমাদের প্রতিদিনের অঙ্গীকার।”
ঢাকা/মাসুদ