৫৫-তে পা দিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Published: 12th, January 2025 GMT
আজ ১২ জানুয়ারি, এই দিনে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। দেশের এই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর পেরিয়ে ৫৫ তে পদার্পণ করেছে।
এ উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে দিবস উদযাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
জানা গেছে, ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এতে অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা ও শিক্ষিতজন একটি আবাসিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। পাকিস্তান সরকার বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তৈরি করে।
১৯৬৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যকরী সংসদ পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার সালনায় স্থান নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
১৯৬৭ সালে ঢাকা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাভারের নতুন স্থান নির্বাচন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ড.
১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হলেও ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এটি একটি প্রকল্প আকারে পরিচালিত হয়। প্রকল্পের শুরুতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট চারটি বিভাগে (অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান) ১৫০ জন ছাত্র ও ২৩ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের শুরু দিকে বিশ্ববিদ্যালয় আবার নবরূপে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরন করা হয় ‘জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয়’। বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর দিকে জমির পরিমাণ ছিল ৭৪৮.১৪ একর। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ৫০ একর জমি দিয়ে দেওয়ায় বর্তমানে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ৬৯৭.৫৬ একর।
বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ চালু আছে। এছাড়া ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ), ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং, তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট এবং ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। এতে প্রায় ১৪ হাজার ৩৭৯ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী ও ৭১৭ শিক্ষক রয়েছেন। তবে শতাধিক শিক্ষক ছুটিতে রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটবড় স্থাপনায় ভরপুর। চেতনার বজ্রদীপ্ত কণ্ঠে ঠায়ে দাড়িয়ে আছে ‘অমর একুশ’, অকুতোভয় ‘সংশপ্তক’, সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ, জহির রায়হান অডিটোরিয়াম এবং দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার। এমন কি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘বিপ্লব চব্বিশ’ নির্মিত হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়াও এখানে রয়েছে ছোটবড় প্রায় ২৬টি লেক। যেগুলো শীতকালে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে।
পুরোদস্তুর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণায় রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল মাইলফলক। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে শিক্ষক ও গবেষকদের রয়েছে নানা অর্জন।
বিভিন্ন জাতীয় ও অভ্যন্তরীণ আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। এরশাদ সরকারের আমলে শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলন, ১৯৯৮ সালে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মানিক ও তার সঙ্গীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিতাড়িত হয়। পুনরায় প্রত্যাবর্তন করলে ১৯৯৯ সালে শিক্ষার্থীদের এক অভ্যুত্থানে ওই অভিযুক্তরা পুনরায় বিতাড়িত হয়। এই আন্দোলন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন বলে পরিচিত এছাড়াও ১৮'র কোটা আন্দোলন, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন এবং ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে রেখেছে অবিস্মরণীয় অবদান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতার পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা।
সুদীর্ঘ ৫৪ বছরের পথপরিক্রমায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণাসহ অন্যান্য শিক্ষা কর্মকাণ্ডে গৌরব রচনা করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে দেশের একমাত্র আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরিতে অবদান রাখছে আপন মহিমায়।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটি উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তেলন করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ ড. মো. আবদুর রব উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. এবিএম আজিজুর রহমান।
এরপর উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এতে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং শুভানুধ্যায়ীরা অংশগ্রহণ করেন।
আনন্দ শোভাযাত্রা সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুস্থতা এবং শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ, পুতুল নাচ, মহিলা ক্লাব পরিচালিত রাগিনী সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রীতি ফুটবল, নারী শিক্ষার্থীদের প্রীতি হ্যান্ডবল ম্যাচ, সন্ধ্যায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে পিঠা মেলা এবং চারুকলা বিভাগের আয়োজনে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আল্পনা ও গ্রাফিতি প্রদর্শন করা হয়।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।
শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।