ঝটিকা মিছিলের আগে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
Published: 19th, October 2025 GMT
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলের আগে ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। তাঁর নাম দস্তগীর ইসলাম (২৩)। তিনি নাটোরের এন এস সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া মো. জাহিদ সরকার (৫৫) নামে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির এক সদস্যকেও গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি।
আজ রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সিটিটিসির বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে সিটিটিসির একটি দল গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দস্তগীর ইসলাম সজীবকে গ্রেপ্তার করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি নাটোর থেকে ঢাকায় এসে আত্মগোপন করেন এবং ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিতে লিপ্ত ছিলেন। বিশেষ করে মিছিলে অংশ নেওয়ার আগে ককটেল বানানোর বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে নিজে ককটেল বানাতেন এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়াতেন। এ বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান ছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর হাতিরঝিল–সংলগ্ন পুলিশ প্লাজার সামনে একটি ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়ে দস্তগীর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। তিনি ওই বিক্ষোভ মিছিল ফেসবুক লাইভে শেয়ার করেন। তাঁর বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় হত্যাসহ পাঁচটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে আজ বেলা আড়াইটার দিকে মিরপুর–১১ মেট্রোরেল স্টেশন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ককট ল ব ন এল ক আতঙ ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ; ভাঙচুর, আগুন
নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে গভীর রাতে সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভের পর সকালে প্রাচীর টপকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন শতাধিক ব্যক্তি। পুলিশ কর্মকর্তা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের কথায়ও তাঁরা সরছিলেন না। পরে পুলিশ জোর করে তাঁদের তুলে দেয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে হটিয়ে দেওয়ার পর তাঁরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান; ভাঙচুর করেন পুলিশের বাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি, আগুন জ্বালান সড়কে। দুই ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে বিকেলের আগে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বিক্ষুব্ধদের ঢিল ছোড়াছুড়ি, পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ফাটানোর মধ্যে উভয় পক্ষের অন্তত ২৭ জন আহত হন।
এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে ওই মঞ্চেই জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়, যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা যোগ দেন। পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যদেরও তার আগে ওই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে দেখা যায়।
এর আগে দুপুরেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার একটি ধারা সংশোধনের কথা জানান। ওই ধারাটি নিয়ে আপত্তি ছিল ‘জুলাই যোদ্ধা’দের।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজানোর মধ্যে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে শতাধিক মানুষ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসংলগ্ন ফটকে অবস্থান নেন। জুলাই আন্দোলনে অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসন বাস্তবায়নের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা। তাঁদের বেশির ভাগই একই রঙের পোশাক ও টুপি পরা ছিলেন।
পুলিশ জানায়, সকালে এই বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের সেই ফটক (১২ নম্বর গেট) টপকে ভেতরে ঢুকে মঞ্চের সামনে অতিথিদের চেয়ারে বসে স্লোগান দিতে থাকেন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ একবার এসে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর ধারাটি সংশোধনের কথা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারাও তাঁদের অনুষ্ঠানস্থল ছাড়ার অনুরোধ করেন। তারপরও বিক্ষোভকারীরা অনুষ্ঠানস্থল ছাড়ছিলেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সোয়া একটার দিকে মঞ্চের সামনে থেকে জুলাই যোদ্ধাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। বাধা দিলে পুলিশ সদস্যরা তাঁদের লাঠিপেটাও করেন। সংসদ গেট থেকে বের করে দেওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে পুলিশের ওপর ইট ছুড়তে শুরু করেন। তাঁরা পুলিশের অন্তত পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর করেন।
একপর্যায়ে বিক্ষোভের মধ্য থেকে একদল লোক আবার মঞ্চের দিকে ঢুকে পড়েন। পুলিশ আবার তাঁদের সরিয়ে দেয়। তারপর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলতে থাকে।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে বিক্ষোভকারীরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও ফার্মগেট খামারবাড়ি মোড় গোলচত্বরের পাশে সড়কে থাকা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের প্রতিবন্ধক, টায়ার ও কাঠে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। বিক্ষোভকারীদের আরেকটি দলকে আসাদ গেটের দিকে হটিয়ে দেয় পুলিশ।
সেনাবাহিনী ও পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে দুই ঘণ্টা পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।
বেলা সাড়ে তিনটার সময় খামারবাড়ির দিকে থাকা বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে মাজহারুল ইসলাম আপন নামের একজন এসে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, আন্দোলনকারী আর কেউ ইট ছুড়বেন না। পুলিশ যাতে আর সামনে না যায়। তাঁরা জিয়া উদ্যানের দিকে যেতে চান। তবে তাৎক্ষণিক পুলিশ তাঁদের জিয়া উদ্যানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
বিক্ষোভকারীদের আরেকটি অংশ আসাদ গেটের দিকে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। তাদের পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত নিয়ে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হলে পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। একসময় বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। একটি অংশকে আসাদ গেটের দিকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় সেখানে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষের পর আসাদ গেট ও ফার্মগেট এলাকায় সেনাসদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করা হয়েছে। পুলিশের পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন।
নিজেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে রুবেল নামের এক ব্যক্তি বলেন, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিপেটায় তাঁদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আহত ব্যক্তিরা হলেন আতিকুল গাজী (২০), সাইফুল ইসলাম (২৬), লাইলী আক্তার (২৫), কামরুল হাসান (২৯,) শরিফুল ইসলাম (২৯), সিনথিয়া (২১), আশরাফুল (২০), হাবিবউল্লাহ (৩০), শফিউল্লাহ (৩২), শাকিব (২৫), মো. লিটন (৩২), তানভীর (২২), দুলাল (৩০), কামাল (৩২), ওমর ফারুক (২৭), নুরুল হুদা (২৫), আখের উদ্দিন (২৮), মিজান (২৮), মোস্তাক বিপ্লব (২৭), আল আমিন (৩৪)।
আহত ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ জন নিজেদের জুলাই যোদ্ধা বলে দাবি করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনকারীদের হামলায় একজন উপকমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে বাধ্য হয় জানিয়ে উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান বলেন, তবে সংঘর্ষের সময় কাউকে আটক করা হয়নি।