গোলবন্যা, পেনাল্টি, লাল কার্ডের ক্লাসিকো শেষে সুপার কাপ বার্সেলোনার
Published: 13th, January 2025 GMT
বার্সেলোনা ৫ : ২ রিয়াল মাদ্রিদ
ম্যাচটা আসলে শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধেই।
৫টা গোল হয়ে গেছে ততক্ষণে। প্রথমটা ঢুকেছে বার্সেলোনার জালে, পরের ৪টা খেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচটার স্মৃতি তখন উঁকি মারছে। গত বছর অক্টোবরে লা লিগায় সেই ম্যাচে রিয়ালকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল বার্সা।
গতকাল জেদ্দার ম্যাচটা অবশ্য লিগের ছিল না, ছিল স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনাল। সেই ম্যাচে ৪-১ গোলে এগিয়ে থেকে বার্সা যখন বিরতিতে যাচ্ছে, ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্যও যেন লেখা হয়ে গেছে।
নাটক অবশ্য বিরতির পরেও হলো। বার্সেলোনা ব্যবধান আরও বাড়াল, তারপর আবার রিয়াল সেটা কমাল। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন বার্সা গোলকিপার ভয়চেক সেজনি, শেষের প্রায় ৪০ মিনিট বার্সা খেলল ১০ জন নিয়ে। তবে সুযোগটা নিতে পারল না রিয়াল মাদ্রিদ। জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালটা শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা জিতে নিল ৫-২ গোলে। এ নিয়ে টানা দুটি এল ক্লাসিকোতে রিয়ালের জালে ৪ বা এর বেশি গোল দিল হান্সি ফ্লিকের দল।
শুরু থেকেই রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে ব্যস্ত রাখে বার্সেলোনা। চার মিনিটের মধ্যেই কোর্তোয়া দুটি সেভ করেন, দুটি কর্নারের বিনিময়ে। তবে দ্বিতীয় কর্নারের পর হঠাৎ ধাক্কা খায় বার্সা। কর্নার থেকে আসা বল বার্সা মিডফিল্ডার মার্ক কাসাদোর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যান রিয়াল ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। একটু এগিয়ে তিনি পেয়ে যান ডানে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে, পাস বাড়ান তাঁর দিকে।
সেই পাস ধরে এক দৌঁড়ে এমবাপ্পে চলে যান বার্সার ডি-বক্সে। তারপর বার্সা ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে তাঁর ডান পায়ে নেওয়া নিচু শট গোলরক্ষক ভয়চেক শেজনিকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় বার্সার জালে। একেবারেই খেলার ধারা বিপরীতে এগিয়ে যায় রিয়াল, ১-০।
বার্সা অবশ্য গোল খেয়ে ঝিমিয়ে পড়েনি, বরং আরও বেশি আক্রমন করতে থাকে। তবে রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগ ছিল অটল। তবে বেশিক্ষণ বার্সাকে আটকে রাখতে পারেনি তারা। জুলস কুন্দের কাছ থেকে বল পেয়ে মাঝমাঠে থাকা রবার্ট লেভানডফস্কি প্রথম ছোঁয়াতেই পাঠিয়ে দেন লামিনে ইয়ামালের কাছে। রিয়ালের রক্ষণভাগে ঢুকে ফাঁৱলা মেন্দি ও চুয়ামেনিকে কাটিয়ে বাঁ পায়ে দারুণ এক শট নেন, ডানদিকের পোস্ট ঘেষে বল চলে যায় রিয়ালের জালে, ১-১।
এরপর বার্সেলোনাকে আটকানো মুশকিল হয়ে পড়ে রিয়ালের জন্য। ৩৪ মিনিটে নিজেদের বক্সের ভেতর বলের দখল নিতে গিয়ে বার্সা মিডফিল্ডার গাভিকে ফাউল করে বসেন রিয়াল মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। ভিএআর এর সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি, কামাভিঙ্গা দেখেন হলুদ কার্ড। দুর্দান্ত এক স্পট কিক থেকে ৩৬ মিনিটে বার্সাকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন লেভানডফস্কি।
তবে রিয়ালের দুর্ভোগ সেখানেই শেষ হয়নি। ৩৯ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে কুন্দে লম্বা এক পাস বাড়ান রিয়ালের বক্সের দিকে এগোতে থাকা আনমার্ক রাফিনিয়ার দিকে। লাফিয়ে করা দুর্দান্ত এক হেডে ব্যবধান ৩-১ করেন রাফিনিয়া।
বেশ কিছুটা সময় নষ্ট হওয়ায় প্রথমার্ধে বাড়তি সময় যোগ করা হয় প্রায় ১০ মিনিটের মতো। রিয়াল চতুর্থ গোলটা খায় সেই যোগ হওয়া সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে। রিয়ালেরই একটা কর্নার থেকে বল পেয়ে গিয়ে পাল্টা আক্রমনে যান লামিয়ে ইয়ামাল এবং দারুণ এক পাস দেন রাফিনিয়াকে। বক্সের কাছাকাছি গিয়ে রাফিনিয়া রিয়াল মিডফিল্ডার ফেদে ভালভার্দেকে নিজের দিকে এনে বল বাড়ান অ্যালেক্স বালদের দিকে। দারুণ এক শটে ৪-১ করেন বালদে। এরপর এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে বিরতির পর অবিশ্বাস্য কিছু করতে হতো রিয়াল মাদ্রিদকে।
নাটক অবশ্য বিরতির পরেও কম হয়নি। মাঠে ফেরত আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে রিয়াল ফরোয়ার্ড রদ্রিগোর শট ফিরে আসে বাঁ দিকের পোস্টে লেগে। ঠিক পরের মিনিটেই মার্ক কাসাদোর দারুণ এক পাস থেকে বল পেয়ে রাফিনিয়া এগিয়ে যান রিয়ালের বক্সের দিকে। তারপর আন্তোনিও রুডিগার ও চুয়ামেনিকে কাটিয়ে যে শটটা নেন, সেটা ঠেকানোর সাধ্য ছিল না কোর্তোয়ার, ৫-১।
একেবারেই ধসে পড়া রিয়াল কিছুটা প্রাণ ফিরে পায় ম্যাচের ৫৬ মিনিটে হয়ে যাওয়া এক নাটকে! বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ঠেকাতে পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে আসেন বার্সা গোলরক্ষক সেজনি। বক্সের ঠিক বাইরে ফাউল করেন এমবাপ্পেকে। প্রথমে ডাইভ দিয়েছেন ভেবে এমবাপ্পেকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। তবে ভিএআর দেখার পর সত্যিই ফাউল নিশ্চিত হয়ে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত বদলান এবং সরাসরি লাল কার্ড দেখান সেজনিকে। ডি-বক্সের সীমানায় ফ্রি-কিক পায় রিয়াল। গাভির বদলে নামা দ্বিতীয় গোলরক্ষক ইনাকি পেনা ঠেকাতে পারেননি রদ্রিগোর ফ্রি-কিক, ব্যবধান কমিয়ে ৫-২ করে রিয়াল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করছে জার্মানির একটি স্টেট, কেন
সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফটের টিমসসহ বেশ কয়েকটি সফটওয়্যারের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেট। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আগামী তিন মাস পর পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহার করতে পারবেন না। তথ্য সংরক্ষণে বিদেশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
স্টেট গভর্নমেন্টের ডিজিটাল রূপান্তরবিষয়ক মন্ত্রী ডির্ক শ্রোয়েডটার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাই। এ জন্যই মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছি।’ নতুন সিদ্ধান্তের আওতায় প্রাথমিকভাবে শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেটের ৬০ হাজার সরকারি কর্মচারীর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী এই পরিবর্তনের আওতায় আসবেন। পরবর্তী ধাপে আরও প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষককে একই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্টেট গভর্নমেন্ট ২০২৪ সাল থেকেই ধাপে ধাপে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে অফিস ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও এক্সেলের পরিবর্তে ‘লিব্রে অফিস’ এবং ই–মেইল ও ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাপনায় ‘মাইক্রোসফট আউটলুক’–এর জায়গায় ‘ওপেন-এক্সচেঞ্জ’ ব্যবহার শুরু হয়েছে।
পরবর্তী ধাপে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাদ দিয়ে একটি লিনাক্সভিত্তিক বিকল্প চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ডির্ক শ্রোয়েডটার জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে জ্বালানিনির্ভরতা নিয়ে যেমন সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তেমনি ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘এই যুদ্ধ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমরা শুধু জ্বালানিতেই নয়, তথ্যপ্রযুক্তিতেও কতটা নির্ভরশীল। এখন সময় এসেছে এসব নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার।’ স্টেট গভর্নমেন্ট জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনো ক্লাউড সেবার বদলে জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ক্লাউড প্ল্যাটফর্মেই তারা সরকারি তথ্য সংরক্ষণ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ইউরোপের নির্ভরতা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছে। বিশেষত মাইক্রোসফটের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি প্রতিযোগিতাবিষয়ক তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ ছিল, মাইক্রোসফট তাদের ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে টিমস সফটওয়্যার বান্ডিল করে বিক্রি করে, যা বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমিয়ে দেয়। ডির্ক শ্রোয়েডটার বলেন, ‘শেলসভিগ-হোলস্টেইনের নেওয়া এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া