মিয়ানমারের আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ দখল করে নিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। সোমবার এক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি কর্তৃক বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ দখল করার দাবিটি সঠিক নয়। কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ ছাড়াই ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুতে আলোচিত দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে কতিপয় ভারতীয় এক্স হ্যান্ডেলে অন্তত ৩০ ডিসেম্বর থেকে উক্ত দাবিটি প্রচার হতে দেখা যায়। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি কর্তৃক বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ দখল কিংবা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মির অনুপ্রবেশের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে মিয়ানমারের গণমাধ্যম দ্য ইরাবতির ওয়েবসাইটে গত ৯ ডিসেম্বর ‘আরাকার আর্মি টেকস কমপ্লিট কনট্রোল অব মিয়ানমার-বাংলাদেশ বর্ডার আফটার সিজিং মংডু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর দেশটির মংডু শহর দখলের পর আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই বিষয়টি নিয়ে জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ১৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক মতামত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

প্রায় নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বর্তমানে ক্রিয়েতি ডট ইন নামের যে এক্স  অ্যাকাউন্টটি থেকে ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে, সেই একই অ্যাকাউন্ট থেকে গত মাসে আরাকান আর্মি কর্তৃক বাংলাদেশের টেকনাফ অঞ্চল দখলের আরেকটি ভুয়া দাবিও প্রচার করা হয়েছিল। সে সময় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, মিয়ানমারের আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ দখল করে নিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ