কুষ্টিয়ায় ১২০ জন অসহায় শীতার্ত পেলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল
Published: 13th, January 2025 GMT
‘রাত্রিরে টালা (কুয়াশা) পরে, শীত লাগে। কম্বলে আরাম হবিনি।’ নতুন কম্বল হাতে পেয়ে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী আমোদ আলী শেখ।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর নিয়ে আমোদ আলী লাঠিতে ভর দিয়ে এসেছিলেন কম্বল নিতে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, দহপাড়া, মুলগ্রাম ও খর্দ ভালুকা এলাকায় ১২০ অসহায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।
প্রথম আলো কুষ্টিয়া বন্ধুসভার সদস্যরা শীতবস্ত্র বিতরণে সহযোগিতা করেন। এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা এলাকায় খোঁজ করে অসহায় মানুষের তালিকা তৈরি করেন। কৃষ্ণপুর গ্রামের পল্লিচিকিৎসক তায়জাল আলীর বাড়ির আঙিনায় কম্বল তুলে দেওয়া হয়।
৭৭ বছর বয়সী আনোয়ারা বেগমের স্বামী মারা গেছেন। তিনিও এসেছিলেন কম্বল নিতে। তিনি বলেন, ‘পতম (প্রথম) আলো পিরাই ১২ বছর আগি একবার আইছিল এহেনে (এখানে) কম্বল দিতি (দিতে)। সিবার একখান দিছিল, আজ আবার দিলে, আল্লাহর কাছে কাছে দোয়া করি।’
কম্বল বিতরণে সহায়তা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক পদায়নে নীতিমালা লঙ্ঘন কোথাও বাড়তি, কোথাও ঘাটতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক পদায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৪০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক পদায়নের কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে তা মানা হয়নি। কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক কম, কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক বেশি। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। এমন চিত্র বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ভিত্তিক চাহিদা নির্ণয়, সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন করার কথা থাকলেও কোনো নিয়ম মানা হয়নি বাঞ্ছারামপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক পদায়নে। নিজস্ব পছন্দ, ব্যক্তিগত লাভ ও রাজনৈতিক চাপের কাছে জলাঞ্জলি দিয়েছেন নীতিমালা। অনেক নারী শিক্ষককে ২৩ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে, যা যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পুরুষ শিক্ষকের ক্ষেত্রে নীতিমালায় দূরবর্তী এলাকায় পদায়নের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে, কয়েকজন শিক্ষককে নিজের এলাকায় পদায়ন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৪৫ জন সহকারী শিক্ষকের পদের বিপরীতে ফাঁকা ছিল ১১২টি। এসব শূন্য পদ পূরণ করতে গত ১৩ মার্চ নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন বিদ্যালয় পদায়ন করা হয়। একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯টি বিদ্যালয়ে। একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। ২৮টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ ফাঁকা থাকলেও কোনো নতুন শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি। নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫২ শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনকে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলি হওয়াদের স্থলে পদায়ন করা হয়েছে। ৯টি বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে ২৭ জনকে।
তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬৬ জন। প্রধান শিক্ষকসহ সাতটি শিক্ষকের পদ রয়েছে। চারটি শূন্য পদের বিপরীতে চারজনকে পদায়ন করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা অতিরিক্ত। উলুকান্দি উত্তর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯২ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের সাতটি পদে কর্মরত ছিলেন পাঁচজন। শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকার পরও নতুন একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় দুটি। এর মধ্যে কালাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রাথমিকে ২৪৯ ও মাধ্যমিকে ১১৭ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিলেন ১০ জন। নতুন করে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রম থাকবে না। চরশিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিকে ৫১০ জন ও নিম্ন মাধ্যমিকে ২৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ১৩টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের পাঁচটি শূন্য পদে পাঁচজনকে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যাবে।
ডোমরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৪ জন। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন ছয়জন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও আরও একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। চরমানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০৩ জন। এখানে কর্মরত ছিলেন পাঁচ শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি পদ শূন্য থাকলেও নতুন করে মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
দরিয়া দৌলত দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৮। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন আটজন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন করে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩২। এখানে কর্মরত ছিলেন চারজন। প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদ শূন্য। এখানে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে, তাও আবার প্রতিস্থাপনকৃত বদলি হয়ে থাকা শিক্ষককে ছাড় করার জন্য। বর্তমানে দুটি পদ শূন্য।
দড়িকান্দি পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩৭। কর্মরত রয়েছেন ছয়জন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদ শূন্য থাকলেও একজনকেও পদায়ন করা হয়নি। শেখেরকান্দি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮০। প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত রয়েছেন ছয়জন। একটি পদ শূন্য থাকলেও কাউকে পদায়ন করা হয়নি। পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০৮। প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিলেন তিনজন। তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।
উপজেলায় মেধা তালিকা প্রথম স্থান অধিকার করা জুয়েল রানাকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম মরিচাকান্দি থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাহারিয়াকান্দি গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌসকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরের তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয় না করে ইচ্ছেমতো পদায়ন করায় শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। কাছাকাছি পদায়ন করলে অনেক ভালো হতো, কারণ আসা-যাওয়ায় শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
সহকারী শিক্ষক জুয়েল মিয়া জানান, তিনি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন। ভেবেছিলেন কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হবে, কিন্তু দেওয়া হয়েছে গ্রাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে।
নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন পদায়ন হওয়া শিক্ষক শাহ আলী বলেন, ‘নতুন মাত্র চাকরি পেয়েছি, তারপরও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। আমি কাজের কিছুই বুঝি না। বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক। অফিসের কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গেলে পাঠদান ব্যাহত হয়।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, তারা তালিকা পাঠিয়েছিলেন, সেই হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট রয়েছে এমন বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন না করে থাকলে তাঁর কিছু বলার নেই, কারণ পদায়ন করেছে ডিপিও অফিস।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, নীতিমালা অনুসরণ করেই শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে অন্য জায়গা থেকে শিক্ষক দিয়ে তা পূরণ করা হবে।