এলপি গ্যাসের ভ্যাট বাড়ল নাকি কমল
Published: 14th, January 2025 GMT
এলপি গ্যাসের ভ্যাট বাড়ল নাকি কমল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ৯ জানুয়ারির অধ্যাদেশ ঘেঁটে দেখা যায়, এলপি গ্যাসের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়িয়ে ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ২ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় গ্রাহক পর্যায়ে এলপি গ্যাসের ক্ষেত্রে ভ্যাটের চাপ কিছুটা বাড়ল।
গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ উৎপাদন পর্যায়ে এলপি গ্যাসের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের আদেশ জারি করেছে। ৯ জানুয়ারি থেকে এই নতুন ভ্যাট কার্যকর হবে। আদেশে বলা হয়, উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি হলো, ৯ জানুয়ারি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এলপি গ্যাসের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি তুলে দিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ৫ শতাংশ ভ্যাট তুলে দেওয়ার ফলে কম হারের ভ্যাটের তফসিল থেকে এলপি গ্যাসে বের হয়ে গেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হারের শ্রেণিতে চলে গেছে।
একই অধ্যাদেশে উৎপাদন পর্যায়ে যেহেতু ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, সেহেতু এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ আইনি রীতি মানতে গতকাল নতুন আদেশ জারি করে।
এনবিআরের আদেশে বলা হয়েছে, বর্তমানে এলপি গ্যাস বাসাবাড়িতে রান্নার জ্বালানি, অটো গ্যাস স্টেশনে যানবাহনের জ্বালানি ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কর্তৃক গ্যাস সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস অপ্রতুল হওয়ায় পোশাক খাতসহ বিভিন্ন প্রকার শিল্পকারখানায় এলপি গ্যাসের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার সহজ করার লক্ষ্যে নতুন ভ্যাট হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে এলপি গ্যাসের ভ্যাট তুলে দেওয়া হয়েছে। এত দিন এলপি গ্যাসের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট হার ২ শতাংশ ছিল। গত ৯ জানুয়ারি এই ভ্যাট তুলে নেওয়া হয়। ফলে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়লেও স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট থাকছে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’
নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।
বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’
হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’
তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপকাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।
এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।
সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।
তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।
নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল