পশ্চিম তীরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল
Published: 21st, January 2025 GMT
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর বাইডেনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে বাইডেনের জারি করা নির্বাহী আদেশ ১৪১১৫ বাতিল করেছেন। এই সিদ্ধান্তের পরই বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাদের নেতৃত্বে এই হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২১ ফিলিস্তিনি। হোয়াইট হাউসের নতুন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
বাইডেনের ওই নির্বাহী আদেশে পশ্চিম তীরের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। বসতি স্থাপনে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদও জব্দ করেছিল বাইডেন প্রশাসন। এমনকি তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের লেনদেনও নিষিদ্ধ করা হয়। এখন ট্রাম্প ক্ষমতায় বসেই বাইডেন প্রশাসনের একটি প্রধান নীতিগত পদক্ষেপ পুরোপুরি উল্টে দিলেন।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা পশ্চিম তীরের জিনাসফুট গ্রাম পরিষদ প্রধান জালাল বশিরের বরাত দিয়ে জানায়, কালকিলিয়ার পূর্বে জিনাসফুট ও ফান্ডুক গ্রামে বসতি স্থাপনকারীরা হামলা চালায়। হামলাকারীরা ফিলিস্তিনি বাড়িঘর, নার্সারি ও কর্মশালায় আগুন দেয়। পুড়ে যায় কয়েকটি গাড়িও। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দক্ষিণ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা মাসাফের ইয়াত্তা এলাকায় বাড়িঘরে হামলা চালায়। হেবরনের দক্ষিণে কয়েক ডজন বসতি স্থাপনকারী ফিলিস্তিনি যানবাহনে পাথর ছুড়ে আক্রমণ করে। এসব ঘটনায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলিদের এই হামলা নতুন করে সহিংসতার ঢেউ ছড়াতে পারে বলেও শঙ্কা করা হয়েছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির পর গাজা পুনর্গঠন করতে গিয়ে পথে পথে মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসি জানায়, গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে ১০ হাজার মৃতদেহ চাপা পড়া অবস্থায় থাকতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদ্ধারকারীরা বলছেন, গাজাজুড়ে ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ গৃহহীন। তাদের এখন কোনো জীবিকা নেই। বেঁচে থাকার জন্য তারা ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দু’দিনে গাজায় ১ হাজার ৫৪৫টি ত্রাণবাহী লরি প্রবেশ করেছে, যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ত্রাণ প্রবেশের ঘটনা।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় ৪৬ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
এদিকে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের হামলার পরও গাজায় যুদ্ধবিরতি বহাল থাকার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংস্থা হামাস। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা ৯০ জনের বেশি ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে বলে জানিয়েছে।
এ ছাড়া গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির কাতার প্রতিনিধি শেখ আলিয়া আহমেদ বিন সাইফ আল থানি। জাতিসংঘে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও ধর্মীয় পবিত্রতা লঙ্ঘনের যে কোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কাতারের স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল স থ পনক র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ