নতুন নিয়মে হবে দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ। এই নিয়মে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড-৯ (আইএফআরএস-৯) পদ্ধতি অনুসরণ করবে দেশের ব্যাংকগুলো। আইএফআরএস-৯ পদ্ধতি অনুসরণ করে ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষতির কমিয়ে আনতে নতুন নিয়মে প্রভিশনিং সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে,  দেশের ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা বাড়াতে আইএফআরএস-৯ পদ্ধতি অনুসারে ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার নতুন নিয়মে হিসাব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা এবং হিসাবমান পর্যালোচনা করে প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে নিজেদের তৈরি করবে। এ জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও বাড়াবে। এ ছাড়া ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠন করতে হবে ‘আইএফআরএস-৯ বাস্তবায়ন কমিটি’। এই কমিটি ঋণের ক্ষতির মডেলগুলোর ব্যবস্থাপনা, পর্যালোচনার তত্ত্বাবধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, রিপোর্টিংয়ের কাজ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রভিশনিং সম্পর্কে আইএফআরএস-৯ অনুযায়ী করার যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে তা ব্যাংকগুলো আগামী মার্চের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদে তুলবে। সক্ষমতা গড়ে তুলতে নিজেরা প্রস্তুতি নেবে। তারপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গাইডলাইন দেবে। পর্যায়ক্রমে আইএফআরএস-৯ বাস্তবায়ন হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার অনুসারে, আগামী এপ্রিল থেকে ঋণ স্ট্যান্ডার্ড হলে ব্যাংক বকেয়া ঋণের উপর ১ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে। স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টের ঋণ শ্রেণিকৃত হলে বকেয়া ঋণের উপর ৫ শতাংশ, ঋণ সাব স্ট্যান্ডার্ড হলে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হিসেবে শ্রেণিকৃত হলে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা লোকসানি ঋণ হিসেবে শ্রেণিকরণ হলে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে।  

অপরদিকে, আগামী এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণ তিন মাস বকেয়া থাকার পর খেলাপি হবে। আগে এ সময় ছিল ছয় মাস। এছাড়া সব ধরনের ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে হলে নিম্নমান,  ৬  থেকে ১২ মাসের মধ্যে সন্দেহজনক ও ১২ মাস বা এর অধিক হলে মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকরণ হবে।

ঢাকা/এনএফ/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরিতে না ফেরালে রাজপথ ছাড়বেন না ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা

পাঁচ মাস ধরে বেতন নেই। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেউ, কেউ আবার চাকরির বয়সসীমা পার করে এখন আর নতুন কোথাও আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই প্রকল্প শেষের অজুহাতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা—যারা ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই অবস্থায় নিজেদের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং অবিলম্বে বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মীরা। 

আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি হলো স্থায়ীকরণের মাধ্যমে চাকরি বহাল রাখতে হবে এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেইসঙ্গে গত চার মাসের বকেয়া ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে অবস্থান কর্মসূচি চলবে, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বিক্ষোভরত কর্মীদের একজন বলেন, সরকারের ডাকেই তো আমরা এসেছিলাম। ভয়ঙ্কর সময় ছিল সেটা। তখন যদি পেছনে না ফিরে মানুষকে সেবা দিতে পারি, আজ যখন একটু স্থিতি এসেছে—তখন কেন আমরা উপেক্ষিত হবো? ৫ মাস ধরে একটা টাকাও পাইনি, পরিবার চালানো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিপসমে কর্মরত ইআরপিপির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর এই প্রকল্পে কাজ করেছি। এখন বয়স ৩৫ ছাড়িয়েছে। সরকারি চাকরির আবেদনের শেষ সীমা পেরিয়ে গেছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ জনবল নেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা শুধু অবিচার না, আমাদের মর্যাদায় আঘাত।

ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি সেন্টারের ডাটা অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা, স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। স্ত্রী-সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি। করোনার সময় এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাকেই আমি কাজে গিয়েছিলাম, এখন সেই অধিদপ্তরের সিঁড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে দাবি আদায়ের জন্য।

ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় কর্মরত এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, করোনার সময় গড়ে তোলা আরটি-পিসিআর ল্যাব, ডেডিকেটেড আইসিইউ বা আইসোলেশন ইউনিটে তারাই প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ তাদের বাদ দিয়ে সেই পদে নতুন লোক নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। 

তারা বলছেন, আমরা চাকরি ভিক্ষা চাই না। আমরা যেটুকু প্রাপ্য, সেটুকু চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চলবে, তবে আমাদের চাকরি কেড়ে নেয়া হলো কেন? আমাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করে অন্যদের সুযোগ দেওয়া মানে অবিচারকে পুরস্কৃত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ