৭ ফেব্রুয়ারি না’গঞ্জে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ করবে জামায়াত
Published: 5th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ও জেলা জামায়াতের আয়োজনে আসছে ৭ ফেব্রুয়ারি করতে যাচ্ছে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ। হাসিনা সরকারের পতনের পর জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে উজ্জীবন এসেছে, তা এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নেতৃবৃন্দ ।
জামায়াতে নেতারা জানান, এই সমাবেশ একটি ঐতিহাসিক উপলক্ষ। এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক সংকট, নিপীড়ন, এবং অধিকার হরণ মোকাবিলা করার পর, দলটি জনগণের মাঝে আবার তাদের পুরোনো গ্রহণযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছে।
এই সমাবেশের মাধ্যমে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পটভূমি তুলে ধরা হবে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভবিষ্যত কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে। সমাবেশে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মহানগরী ও জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ জানায়, জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন এই সমাবেশ সফল করার জন্য। সমাবেশের স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রস্থলে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ১ লাখের বেশি মানুষের অংশগ্রহণের আশা করা হচ্ছে।
সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ আবদুল জব্বার এর সভাপতিত্বে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও জামায়াতের আমীর ডা: শফিকুর রহমান সহ কেন্দ্রেীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে দলটির অবস্থান স্পষ্ট করা হবে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কীভাবে জামায়াত ভূমিকা রাখতে চায় তা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হবে এই গণসমাবেশে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব ল দ শ জ ম য ত ইসল ম ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
রাশেদুল ইসলাম (৬১) পাঁচ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরছেন। তাঁর ওয়ারিশান সনদ দরকার। এই সনদ ছাড়া তিনি জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছেন না। এই কাজের জন্য গতকাল সোমবারও এসেছিলেন তিনি। একইভাবে ফিরে গেছেন।
নানা প্রয়োজনে এসে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে রাশেদুলের মতো অনেক মানুষকে প্রতিদিনই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এই ইউপিতে সব নাগরিক সেবা চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জনগণ প্রায় ৩০ ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, গ্রাম আদালত, কয়েক ধরনের ভাতা, ভিজিডি ও ভিজিএফের খাদ্যপণ্য বিতরণ, ট্রেড লাইসেন্স উল্লেখযোগ্য। বাজুবাঘা ইউপিতে এর সব কটি সেবাই বন্ধ। ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে চেয়ারম্যানের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে সেবা কার্যক্রম চালুর দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ফিরোজ আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। সরকার ১০ ডিসেম্বর তাঁর স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ওই প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হাইকোর্ট একটি রিট করেন। শুনানির পর আদালত প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এ জন্য প্রশাসক কোনো কাজ করতে পারছেন না। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে।
২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ফিরোজ আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। সরকার ১০ ডিসেম্বর তাঁর স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ওই প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হাইকোর্ট একটি রিট করেন।বাজুবাঘা ইউনিয়নের নাগরিক সেবায় ভোগান্তি লাঘবে অতিদ্রুত প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে বাজুবাঘা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়। এই কর্মসূচিতে দাবি করা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ (রঞ্জু) ইউনিয়ন পরিষদে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ক্ষমতার লোভে ইউনিয়ন প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন। এতে জনগণ ইউনিয়নের সব ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গতকাল সোমবার জেলার বাঘা উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামে বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের বারান্দায় কয়েকজন গ্রাম পুলিশ বসে আছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষ খোলা। তিনি সেবাগ্রহিতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কেন সেবা দেওয়া যাচ্ছে না, এর কারণ জানাচ্ছেন। চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ লেখা কক্ষটিতে তালা লাগানো।
সেখানেই কথা হয় কয়েকজন সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে। জোতরাঘোব গ্রামের সুমন হোসেন (২৮) ছেলের জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি তো জানি নি যে ইউনিয়ন পরিষদের এই অবস্থা হয়্যা আছে। আজ গা জাননু, সব কামই নাকি পাড়ি আছে। কিছুই হচ্ছে না।’
ছেলের জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছিলেন বাজিতপুর গ্রামের রুবেল হোসেন (৩০)। তাঁকেও হতাশ হতে হয়েছে। এক গ্রাম পুলিশ যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কাজ শুরু হলে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থা সম্পর্কে বারান্দায় বসে থাকা গ্রাম পুলিশের দফাদার মকলেছুর রহমান জানান, ‘প্রতিদিন আমরা পালাক্রমে ডিউটি করছি। কার্যক্রম স্থগিতের প্রথম দিকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন লোক আসত। এখনো ১০ থেকে ১৫ লোকজন আসেন। তবে এখন বেশির ভাগ লোকজন ফোনে খবর নেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, দেশের পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী ঘরানার পৌর মেয়র, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে যান। পরে বর্তমান সরকার সেবা কার্যক্রম সুচারু রূপে পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেন। ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ‘যেহেতু আমার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়নি। সে জন্য বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছি। মহামান্য আদালত ছয় মাসের জন্য এই ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেন। জনগণের ভোগান্তি হোক, এটা আমি চাই না। তবে এটার দ্রুত সমাধান আশা করছি।’
চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ লেখা কক্ষটিতে তালা লাগানো। গতকাল সোমবার তোলা