১৯৯৮ সালে শেষবার দিল্লির মসনদে ছিল বিজেপি। শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ। তারপর কংগ্রেস দিল্লির ক্ষমতা দখল করে। ২০১৩ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে আম আদমি পার্টি (আপ)। ১২ বছরেই মোহভঙ্গ দিল্লিবাসীর। রাজধানীতে হারল আম আদমি পার্টি।

তিন দশকের খরা কাটিয়ে মোদির ম্যাজিকে দিল্লিতে গেরুয়া ঝড়ের দাপট। ২৭ বছর পর ২০২৫ সালে আবার ফিরতে চলেছে বিজেপি।

৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভা ভোটের পর সব এক্সিট পোল বা বুথফেরত জরিপে এগিয়ে রাখা হয়েছিল বিজেপিকে। কংগ্রেস লড়াইয়ে থাকলেও এবার দিল্লি ভোটে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আপ ও বিজেপি। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় লড়েছেন ৬৯৯ জন প্রার্থী। তার মধ্যে ৬০৩ জন পুরুষ ও ৯৬ জন নারী।

আরো পড়ুন:

ঢাকা-দিল্লির পাল্টাপাল্টি তলব

শেখ হাসিনার বক্তব্যের জন্য ভারত দায়ী নয়: রণধীর জয়সওয়াল

গত বুধবার দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) গণনা শুরু হতেই বোঝা যায়, বুথফেরত জরিপের সমীক্ষাই সত্যি হতে চলেছে। গেরুয়া ঝড়ে নাস্তানাবুদ আপ। আর শূন্যের হ্যাট্রিক করল কংগ্রেস।

সর্বশেষ খবরে ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনে এগিয়ে মোদির বিজেপি। অন্যদিকে, গত ২০২০ সালে ৬২ আসনে জেতা কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি মাত্র ২২টিতে এগিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত সব আসনেই তৃতীয় স্থান দখলের চেষ্টায় দৌড়াচ্ছে।

চতুর্থ দফায় জয়লাভ করতে ব্যর্থ দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে হেরে গেলেন তিনি। তাকে হারালেন বিজেপির প্রবেশ সিং। তাদের ভোটের ব্যবধান ৩ হাজার ১৮২। জঙ্গপুরা কেন্দ্রে হেরে গেলেন মণীশ সিসোদিয়াও। প্রায় ৬০০ ভোটে তিনি হারলেন বিজেপির তারবিন্দর সিংয়ের কাছে। হেরেছেন আপ নেতা সত্যেন্দ্র জৈনও।

দিল্লির শকুর বস্তী কেন্দ্র থেকে সত্যেন্দ্র জৈনকে প্রায় ১৮ হাজার ভোটে হারিয়েছেন বিজেপির কর্নেল সিং। আম আদমি পার্টির আরেক বিখ্যাত নেতা সৌরভ ভরদ্বাজও ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজেপির শিখা রায়ের কাছে হেরেছেন।

তবে কালকাজি কেন্দ্রে প্রায় ৪ হাজার ভোটে জিতে মানরক্ষা করলেন দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। পিছিয়ে থেকেও জয় তুলে নিলেন তিনি। শেষ রাউন্ড পর্যন্ত তার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে রমেশ বিধুরীর।

দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিত নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনিও হেরে গিয়েছেন।

এদিন হার নিশ্চিত হওয়ার পর অরবিন্দ কেজুয়াল বলেন, “ক্ষমতায় থাকতে রাজনীতিতে আসিনি, বিরোধী হিসেবেও মানুষের সেবা করবে আপ।”

তিনি বলেন, “আশা করি বিজেপি প্রতিশ্রুতি পালন করবে। বিজেপিকে অভিনন্দন। গত ১০ বছরে আমরা অনেক কাজ করেছি। দিল্লিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জল-সব ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করেছি। দেশের রাজধানীর পরিকাঠামোগত উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। এখন দিল্লির মানুষের রায় অনুযায়ী আমরা এখানে গঠনমূলক বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করব। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকব।”

তিনি আরো বলেন, “ক্ষমতার লোভে রাজনীতিতে আসিনি। মানুষের সেবা করতে এসেছিলাম। আগামী দিনেও মানুষের সেবা করব। দলের সব কর্মী, সমর্থককে অভিনন্দন। অনেক পরিশ্রম করেছেন সবাই।  ভালো লড়াই করেছেন।”

এদিকে ফলাফল সামনে আসতেই খুশির হাওয়া গেরুয়া শিবিরে। শনিবার নির্বাচনী ফলাফলের গতিপ্রকৃতি জয়ের আভাস দিতে থাকায় বিজেপির সদর কার্যালয়ের সামনে হাজির হন শত শত সমর্থক। ঢাকঢোল বাজিয়ে নাচ, আতসবাজির পাশাপাশি লাড্ডু বিলি করেন তারা।

দুপুরে দিল্লি বিজেপি পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, রাত আটটার দিকে বিজেপি সদরদপ্তরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এদিন জয় সুনিশ্চিত হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিপুল জয়কে উন্নয়নের জয়, সুশাসনের জয় বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি।

শনিবার দুপুরে এক্স হ্যান্ডেলে মোদি লেখেন, ‘সবার উপরে জনশক্তি। এই ভোটে বিকাশ জিতেছে, আর দক্ষ সুশাসনের জয় হয়েছে।’

দিল্লিবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “সব ভোটার ভাই-বোনকে আমি প্রণাম জানাই। দিল্লির উন্নয়নের জন্য আমরা কোনো চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা রেখেছি।”

এদিকে, দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি সরকার গঠনের সাফল্যকে মোদির গ্যারান্টি বলে বর্ণনা করছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে তিনি বলেন, “দিল্লিতে মিথ্যাচারের শাসনের অবসান হলো। এই হার অহঙ্কার ও অরাজকতার পরাজয়।” 

এই বিরাট জয়ের জন্য দিল্লিবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শাহ।

ঢাকা/সুচরিতা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম খ যমন ত র ব ধ নসভ ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ