উদীচীর সম্মেলনে হট্টগোল ‘হামলায়’ আহত ৭ জন
Published: 9th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর তিন দিনব্যাপী ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের কাউন্সিল অধিবেশনে হট্টগোল হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এ অধিবেশনে হামলায় সাতজন আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নতুন কমিটি নিয়ে সম্মেলনস্থলেই প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়া দুই পক্ষের একটি অংশ অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও অমিত রঞ্জন দে-কে সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত করে। অন্য অংশ অধ্যাপক বদিউরকে সভাপতি পদে রেখে জামশেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করার ঘোষণা দেয়। পাল্টাপাল্টি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের এমন ঘোষণায় দেশের ঐতিহ্যবাহী এ সাংস্কৃতিক সংগঠনে ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচীর জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়। শুক্র ও শনিবার শিশু একাডেমি মিলনায়তনে সম্মেলনের সাংগঠনিক বা কাউন্সিল অধিবেশন ছিল।
এতে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হওয়া নির্বাচনী অধিবেশনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি পদে বিদায়ী সভাপতি বদিউরকে পুনর্নির্বাচিত করার বিষয়ে কারও আপত্তি না থাকলেও গোল বাধে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। এক পক্ষ বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জনকে এই পদে রাখার পক্ষে থাকলেও আরেক পক্ষ জামশেদ আনোয়ার তপনকে আনতে চাইছিল। এ নিয়ে উত্তেজনা ও হট্টগোলের মধ্যেই নির্বাচনী অধিবেশনের সভাপতি হাবিবুল আলম বিকেলে ‘সাবজেক্ট কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী’ বদিউরকে সভাপতি ও তপনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এর পর এই কমিটিকে শপথও পড়ান তিনি। তবে অন্য প্রতিনিধিরা এই ঘোষণা ও শপথ গ্রহণের প্রতিবাদ শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে আরেক দফা উত্তেজনা ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হাবিবুল ও তপনের নেতৃত্বাধীন অংশটি মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করে। তাদের সঙ্গে বদিউর রহমানও সম্মেলন ছেড়ে চলে যান।
একটি অংশ সম্মেলনস্থল ছেড়ে যাওয়ার পর পরই অপর অংশ থেকে বদিউরকে সভাপতি ও অমিতকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান উদীচীর গত ২৫ বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম।
উদীচীর কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কংকন নাগ সমকালকে বলেন, ‘সম্মেলন ছেড়ে যাওয়ার আগে হাবিবুল-তপনের নেতৃত্বাধীন অংশের ২০-৩০ জন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এতে আমাদের সাতজন আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান।’ এমন হামলার কথা অস্বীকার করে অন্য অংশটি।
রাতে দুই অংশের পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। কংকন নাগের স্বাক্ষরে উদীচীর প্যাডে বদিউরকে সভাপতি ও অমিতকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার কথা জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়েছে, নবগঠিত ৯১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির বাকিদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
রাতেই উদীচীর প্যাডে পাঠানো আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বদিউরকে সভাপতি ও তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠনের দাবি করা হয়। এই বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন সংগঠনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। যেখানে ৯১ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির ৮৭টি পদে (৪টি সদস্য পদে কো-অপশনের জন্য ফাঁকা রেখে) নির্বাচিতদের নাম সম্মেলনস্থলেই অনুমোদন হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম রাতে তাঁর ফেসবুকে আইডিতে এক স্ট্যাটাসে বদিউর-তপন কমিটিকে অভিনন্দন জানান। প্রবীণ বামপন্থি এই নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে মন্তব্য শুরু করেন সিপিবির গণসংগঠন হিসেবে পরিচিত উদীচীর বর্তমান ও সাবেক নেতারা। কেউ কেউ সম্মেলনস্থলে হামলাসহ অনেকের আহত হওয়া এবং বদিউরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি জানান। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দু’পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় ছিল।
এ বিষয়ে অমিত রঞ্জন দে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলনের কাউন্সিল ও নির্বাচনী অধিবেশন চললেও একপক্ষ হুট করে এক ধরনের ‘মব’ সৃষ্টির মাধ্যমে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে। এটি উদীচী ও আমাদের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা।
আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন হয়েছে। সেখানে হামলা বা কারও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ক ন দ র য় কম ট কম ট র সদস য স গঠন গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫