ঢাকায় ‘অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক’ বায়ুদূষণ আজ, স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারির পরামর্শ
Published: 10th, February 2025 GMT
কোথাও যদি বায়ুমান ৩০০–এর বেশি হয়, তবে সেখানে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি আছে বলে ধরা হয়। যদি পরপর তিন দিন তিন ঘণ্টা করে এমন অবস্থা থাকে, তবে ওই এলাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা হয় সাধারণত। আজ রাজধানীর বায়ুর মান জানেন? আজ সোমবার সকাল ১০টার আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুর মান ৫৪২। এমন অবস্থাকে ‘অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক’ বলছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তাঁদের বক্তব্য, দূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কার্যত ব্যর্থ। এখন তাদের উচিত রাজধানীতে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা। এতে নাগরিকদের কিছুটা হলেও সুরক্ষা হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
আজ সকালে বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে। বায়ুদূষণে ঢাকার এ অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার।
প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করে। ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এ সময়ে এত বায়ুদূষণ সত্যি অস্বাভাবিক। এখানে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই দূষণ পরিস্থিতি বাড়তে থাকে। রাতে ৫০০ পার হয়ে যায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দূষণের মান ৫০০–এর ওপরে থাকে। পরিস্থিতি আজ সত্যিই খুব নাজুক।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি সকালে ঢাকার বায়ুমান ছিল ৫১৮। তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, সেদিনের দূষণ অস্বাভাবিক। ওই দূষণ এই নতুন বছরে সর্বোচ্চ।
আজ সেই ‘অস্বাভাবিক’ মানের চেয়ে দূষণের মান বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলছিলেন, আজকের দূষণ অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগগুলো আসলে কোনো কাজ দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট। এখন অবশ্যই ঢাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা দরকার। তাহলে মানুষ অন্তত সচেতন হবে।
রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে যেসব এলাকায় বায়ুর মান মারাত্মক দূষিত, সেগুলোর মধ্যে আছে মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং (১১২৭), তেজগাঁওয়ের শান্তা ফোরাম (৭৬৯) ও সাভারের হেমায়েতপুর (৬৩৩)।
আজ আইকিউএয়ারের দেওয়া সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীর উদ্দেশে পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬৯ গুণ বেশি।
রাজধানীতে অনেক আগেই স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি দরকার ছিল বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য–বিশেষজ্ঞ ডা.
গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে একটি দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারিতে দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ঢাকায় গত জানুয়ারিতে একাধিক দিন বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি হয়েছে। আজ অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর বায়ুর মানও নাজুক। এর মধ্যে বায়ুর মান চট্টগ্রামে ১৫৩, রাজশাহীতে ১৯৬ ও খুলনায় ১৮৭।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?