দিল্লির নির্বাচনের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়বে, আশাবাদী বিজেপি
Published: 11th, February 2025 GMT
ভারতের দিল্লি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর বিজেপির নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতবে তাদের দল। ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। আর দলটির তৎপরতা তৃণমূলকে যে ভাবাচ্ছে, তা তাদের আচরণে স্পষ্ট। খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে তাঁর অবস্থানের কথা বলেছেন। তবে দিল্লির নির্বাচনের ফল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটা প্রভাব ফেলেছে এবং এর রেশ নির্বাচনেও থাকতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, দিল্লিতে আম আদমির পরাজয়ের নেপথ্যে যেসব বিষয় কাজ করেছে, সে বিষয়গুলো পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূলের পরাজয়ের কারণ হতে পারে।
দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনের নির্বাচনে বিজেপি এবার ৪৮ আসনে জয় পেয়েছে। এবারের নির্বাচনে বিজয়ী বিজপি যে ইস্যুকে নির্বাচনের হাতিয়ার করে তুলেছিল, তা ছিল দুর্নীতি। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে আবগারি দুর্নীতির অভিযাগ তোলে বিজেপি। আর মানুষ তা গ্রহণও করে। দুর্নীতির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন তৈরির বিষয়টিও ছিল দিল্লিতে বিজেপির তুরুপের তাস।
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে তৃণমূলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের জালে আটকা পড়ে এখনো কারাগারে।
অন্যদিকে কারাগার থেকে সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হওয়ায় সাবেক খাদ্য ও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং বীরভূমের আরেক দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো ও তৃণমূলের ‘সর্বেসর্বা’ হিসেবে পরিচিত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। মমতার পরিবারের সদস্যদের বিলাসবহুল বাড়ির কথাও বলে বিরোধীরা। তৃণমূল দলটি যে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, তা নতুন করে বলার নেই। তাই আগামীতে এসব দুর্নীতিকে বড় ইস্যু করে বিজেপি নির্বাচনের বাজার মাত করতে পারে, এমন ধারণা বিশ্লেষকদের।
এরপর রয়েছে আর জি কর–কাণ্ডে নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ইস্যু। সেই সঙ্গে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। তিনিও এখন সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে।
দিল্লির নির্বাচনে আম আদমির পরাজয়ের পেছনে ‘শাসকের প্রতি বিতৃষ্ণা’ একটি বিষয় হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। পশ্চিমবঙ্গেও টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে তৃণমূল। একটি পরিবর্তনের পক্ষে জনমতকে কাজে লাগাতে বিজেপি অনেক তৎপর। আর সে কাজে তারা সফল হতে পারে বলেও মনে করছে তারা।
তবে এসব নানা কারণ থাকলেও বিজেপির কিছু দুর্বলতা আছে। এর মধ্যে প্রধান কারণটি হলো দলের নেতৃত্ব। শুধু এই নেতৃত্বের কারণেই দলটি পরপর দুটি বিধানসভায় হেরে গেছে বলে মনে করা হয়। বিজেপির পক্ষে একটি মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য ‘মুখ’ নেই, যাকে দেখে ভোটাররা আশ্বস্ত হবেন।
দলের সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অনেকটাই টেনে তুলেছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরপর তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে গত বিধানসভায় একজোট হয়েছিল দলটি। তাতে কাজ হয়নি। পুরোনো ও নতুন—এই দুই ভাগে ভাগ হওয়া বিজেপি এখনো শক্ত নেতৃত্ব পায়নি পশ্চিমবঙ্গে।
রাজ্যজুড়ে যখন পরিবর্তনের নানা আলামত স্পষ্ট হচ্ছে, এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল এই রাজ্যের বিধানসভা পরিষদীয় দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ২০২৬ সালের এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল দুই–তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে চতুর্থবারের জন্য এ রাজ্যের শাসনক্ষমতায় আসবে। ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ২১৩টি আসন। বিজেপি ৭৭টি আসন আর ১টি আসন পেয়েছিল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট।
দিল্লিতে বা যমুনা পাড়ের নির্বাচনের প্রভাব গঙ্গপাড়ে বা এই পশ্চিমবঙ্গে পড়বে কি না, তা নির্ভর করছে আগামী দিনে বিজেপি নিজেদের কতটা গোছাতে পারে তার ওপর, এমন ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। এর কারণ হলো, গেরুয়া দলটি কিন্তু এখনো ততটা সংগঠিত নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য অর্ধেক পেরোতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। ‘সক্রিয় সদস্য’ সংগ্রহ অভিযানও তেমন আশানুরূপ নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য় র জ য ব ধ নসভ ম খ যমন ত র মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন
সরকারি পর্যায়ে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি চুক্তি অব্যাহত রাখা এবং চট্টগ্রাম জেলার ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জি টু জি চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ইউরিয়া সারের আমদানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
প্রান্তিক চাষিদের মাঝে ইউরিয়া সারের সাপ্লাইচেইনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সারের যোগান বজায় রাখতে জি-টু-জি ভিত্তিতে সৌদি আরব থেকে চুক্তির মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। সাবিক-সৌদি আরবের সাথে বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ ৩০/০৬/২০২৫ শেষ হয়। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে নিরবচ্ছিন্ন ইউরিয়া সার সরবরাহের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে সর্বমোট ৬ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরের নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। দেশটি থেকে প্রতি লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয় করা হবে।২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে থেকে মোট ৩০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায়, চট্টগ্রাম জেলার ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ১৯৬১ সালে ৫৪.৯৯ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়।১৯৭২ সালে মিলটি জাতীয়করণ করা হয় এবং পরিচালনার দায়িত্ব বিটিএমসির অধীনে ন্যস্ত হয়।পরবর্তীতে মিলটি বেসরকারি খাতে পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হলেও চুক্তি ভঙ্গ করার কারণে পুনরায় পুনঃগ্রহণ করে বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করা হয়। চট্টগ্রাম এরিয়ায় বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য বিটিএমসির জলিল টেক্সটাইল মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের অনুরোধ করে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সেনাবাহিনী প্রধান আলোচনা ও মৌখিক সম্মতি গ্রহণ করেন।
‘গত ২৪/১২/২০১৮ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জমি বিক্রয়ের অনুমোদনের প্রস্তাব করা হলে মিলটির অব্যবহৃত জমি বিক্রয় না করে সরকারের উন্নয়নমূলক/জনহিতকর কাজে উক্ত জমি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।’ মিলের জমিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হলে মিলের জমি সরকারের উন্নয়নমূলক ব্যবহৃত হবে।
এমতাবস্থায়, জলিল টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড এর ৫৪.৯৯ একর জমি মিলের কাছে সরকারি পাওনা বাবদ ১৭ কোটি ৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বিটিএমসিকে প্রদানপূর্বক মিলের জমি প্রতীকী মূল্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তরের নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। বর্ণিত ৫৪.৯৯ একর জমির মৌজা মূল্য প্রায় ১১১ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৫ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি