সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘সব্যসাচী’ নামক এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী বিপণিকেন্দ্রে যেই ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা কেবল নিন্দনীয়ই নহে; যথেষ্ট উদ্বেগজনক বটে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক দল ব্যক্তি নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রয়ের অভিযোগ তুলিয়া হট্টগোলের সূচনা করে। প্রকাশক শতাব্দী ভব প্রতিবাদ করিলে হট্টগোলকারী জনতা তাঁহার উপর হামলা করিতে উদ্যত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসিয়া প্রকাশককে স্বীয় জিম্মায় লইয়া বিপণিকেন্দ্রটি বন্ধ করিয়া দেয়। সামাজিক মাধ্যমে বিস্তৃত ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, পুলিশের সুরক্ষা অবস্থাতেই কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি শতাব্দী ভবের উপর হামলা চালায়। গ্রন্থ বিপণনের ফলস্বরূপ এহেন দলবদ্ধ হট্টগোল ও হামলায় আমরা উদ্বিগ্ন না হইয়া পারি না। আমরা মনে করি, যেই কোনো গ্রন্থ লইয়া যে কাহারও ভিন্নমত বা আপত্তি থাকিতে পারে। দেশে সেই ভিন্নমত বা আপত্তি প্রকাশের আইনসংগত রীতিও প্রচলিত। আমরা মনে করি, কোনো অপছন্দনীয় লেখা বা শিল্পকর্মের জবাব লেখনী বা বক্তব্য পেশের মধ্য দিয়া প্রদান করাই উত্তম। তবে কেহ উক্ত বিষয়ে প্রচলিত আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিলে আপত্তির কিছু নাই। কারণ সেই ক্ষেত্রে বিষয়টি আদালতে যুক্তি-তর্কের মধ্য দিয়াই ফয়সালা হইবে। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে যেইভাবে প্রকাশকের উপর হামলা করা হইয়াছে; সংবিধানস্বীকৃত মতপ্রকাশের অধিকার বা চিন্তাচর্চার জন্য উহা অশনিসংকেতস্বরূপ। 

স্পষ্টত, মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকাশকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে ব্যর্থ হইয়াছে। স্মরণ করা যাইতে পারে, একুশে গ্রন্থমেলায় বই বিক্রয়ের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রহিয়াছে। ‘সব্যসাচী’ সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করিলে মেলা কর্তৃপক্ষ তাঁহার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিত। তাহা না করিয়া কার্যত উক্ত প্রকাশককে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হস্তে তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। কারণ, সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তসলিমা নাসরিনের গ্রন্থ বিক্রয়ের জন্য বিপণিকেন্দ্রটি গুঁড়াইয়া দিবার হুমকি পূর্বেই দেওয়া হইয়াছিল। অর্থাৎ গ্রন্থমেলায় সৃষ্ট আলোচ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা বা পরিহার কিংবা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করিতে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সময় পাইয়াছিল। এই সুযোগ কেন গৃহীত হয় নাই– সেই প্রশ্নের জবাব কর্তৃপক্ষকে দিতেই হইবে। স্মরণে রাখিতে হইবে, প্রকাশকের এইরূপ হেনস্তা ও হামলা কেবল একটি বিপণিকেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ থাকিবার নিশ্চয়তা কেহ দিতে পারে না; গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রকাশকেরও নির্বিঘ্নে থাকিবার নিশ্চয়তা নাই।
এইবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হইতেছে এমন রাজনৈতিক বাস্তবতায়, যথায় শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পূর্বেকার সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খাইতেছে। এই প্রেক্ষাপটে অনাকাঙ্ক্ষিত যেই কোনো পরিস্থিতি পরিহারের লক্ষ্যে অধিকতর সতর্কতা কাম্য ছিল। কেহ যাহাতে আইন স্বীয় হস্তে তুলিয়া লইতে না পারে, সেই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা জরুরি ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে। অবশ্য সোমবার রাত্রিতে প্রদত্ত বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আলোচ্য ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাইয়া বলিয়াছেন, একুশে গ্রন্থমেলা এই দেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মিলনস্থল। তথায় এই প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুণ্ন করে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে। তিনি পুলিশ ও বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে এই ঘটনার তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনিবার যেই নির্দেশ দিয়াছেন, উহা দ্রুত প্রতিপালিত হইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ত প হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবেশ রক্ষায় ‘বীজ বোমা’

পরিবেশ রক্ষায় অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইলের তরুণ পরিবেশকর্মী ও সংগঠক মুঈদ হাসান তড়িৎ। সামাজিক সংগঠন ‘যুবদের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন তিনি। ‘বীজ বোমা’ নামের এক বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃক্ষরোপণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তড়িৎ। 

সাধারণত মাটি দিয়ে ছোট বলের আকারে তৈরি করা হয় ‘বীজ বোমা’। এর ভেতরে থাকে বীজ, সার ও পুষ্টিকর উপাদান। এগুলো যেকোনো উন্মুক্ত স্থানে ছুড়ে দিলেই বৃষ্টির পর তা থেকে গাছ জন্ম নিতে পারে।

মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেছেন, “আমাদের চারপাশে অনেক অনাবাদি জমি পড়ে আছে। এই জমিগুলোতে যদি আমরা সহজ পদ্ধতিতে গাছ লাগাতে পারি, তাহলে দ্রুত সবুজায়ন সম্ভব। সে ভাবনা থেকেই এই ‘বীজ বোমা’। যুবদের জন্য ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে বীজ বোমা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।”

এ উদ্যোগের মাধ্যমে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তারা একত্রিত হয়ে শহরের নানা স্থানে বীজ বোমা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে যেমন গাছ বাড়ছে, তেমনই পরিবেশ সম্পর্কে তরুণদের সচেতনতাও তৈরি হচ্ছে।

পরিবেশবিদ ও সুশীলসমাজের সদস্যরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। পরিবেশকর্মী ডা. মুজিব রহমান বলেছেন, “কম খরচে ও সহজ উপায়ে সবুজায়নের কার্যকর পদ্ধতি বীজ বোমা। যদি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ উদ্যোগে সহায়তা করে, তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”

এছাড়া, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মাত্র ১০ টাকায় ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন তড়িৎ ও তার সংগঠন। শতাধিক মানুষ পছন্দের গাছ মাত্র ১০ টাকায় ক্রয় করেছেন এ উদ্যোগ থেকে। 

তড়িতের এ উদ্যোগ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকে প্রশংসা করছেন এই অভিনব চিন্তার এবং একে আরো বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পরিবেশ রক্ষায় এক পা সামনে এগিয়েছে তড়িতের ‘বীজ বোমা’। এখন সবার এগিয়ে আসার সময়।

ঢাকা/কাওছার/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ