ট্রাম্পের ‘অন্যায্য’ শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে ট্রুডোর কড়া প্রতিক্রিয়া
Published: 12th, February 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যা ‘সম্পূর্ণরূপে অন্যায্য’ বলে দাবি করেছে কানাডা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তার সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় ও স্পষ্ট’ জবাব দেবে।
মঙ্গলবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিষয়ক এক সম্মেলনে ট্রুডো এই মন্তব্য করেন। পরে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের জবাব নিশ্চিতভাবেই দৃঢ় ও স্পষ্ট হবে।’
ট্রাম্প তার দেশে প্রবেশ করা সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর ২৫% এবং ১০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার তিনি এ সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা আগামী ১২ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ। ফলে এই নতুন শুল্কের সবচেয়ে বড় প্রভাব কানাডার ওপরই পড়বে। তবে দুই দেশের হাতে এখনো এক মাস সময় রয়েছে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর জন্য।
ট্রুডো বলেন, ‘নতুন শুল্ক সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। অথচ এই সিদ্ধান্ত আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।’
কানাডা থেকে প্রতিবছর প্রায় ৬০ লাখ টন ইস্পাত এবং ৩০ লাখ টনের বেশি অ্যালুমিনিয়াম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকর হলে আমদানিকারকদের বাড়তি কর দিতে হবে, যা সরাসরি কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের দাম বেড়ে যাবে, যা মার্কিন ভোক্তাদের জন্য আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
তারা আরও সতর্ক করেছেন, পণ্য আমদানির ব্যয় বাড়লে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন, যা মুদ্রাস্ফীতি এবং চাকরির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এটি কয়েক দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা সৃষ্টি করল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র
এছাড়াও পড়ুন:
সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা
দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।
সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।
দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক
ছোট্ট হাতে সংসারের হাল
পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন।
কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।”
গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।”
একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”
সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।”
সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”
পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।
ঢাকা/মাসুম/রফিক