মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যা ‘সম্পূর্ণরূপে অন্যায্য’ বলে দাবি করেছে কানাডা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তার সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় ও স্পষ্ট’ জবাব দেবে। 

মঙ্গলবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিষয়ক এক সম্মেলনে ট্রুডো এই মন্তব্য করেন। পরে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের জবাব নিশ্চিতভাবেই দৃঢ় ও স্পষ্ট হবে।’ 

ট্রাম্প তার দেশে প্রবেশ করা সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর ২৫% এবং ১০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার তিনি এ সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা আগামী ১২ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।

কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ। ফলে এই নতুন শুল্কের সবচেয়ে বড় প্রভাব কানাডার ওপরই পড়বে। তবে দুই দেশের হাতে এখনো এক মাস সময় রয়েছে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর জন্য।

ট্রুডো বলেন, ‘নতুন শুল্ক সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। অথচ এই সিদ্ধান্ত আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।’

কানাডা থেকে প্রতিবছর প্রায় ৬০ লাখ টন ইস্পাত এবং ৩০ লাখ টনের বেশি অ্যালুমিনিয়াম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকর হলে আমদানিকারকদের বাড়তি কর দিতে হবে, যা সরাসরি কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের দাম বেড়ে যাবে, যা মার্কিন ভোক্তাদের জন্য আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

তারা আরও সতর্ক করেছেন, পণ্য আমদানির ব্যয় বাড়লে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন, যা মুদ্রাস্ফীতি এবং চাকরির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এটি কয়েক দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা সৃষ্টি করল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানীর ছোট ভাই মো. আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি উত্তীর্ণ হন।

আজ বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম আরফান হোসেনের হাতে নিয়োগপত্র হস্তান্তর করেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’ তিনি বলেন, সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।

লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১১ সালে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছিল কিশোরী ফেলানী খাতুন। সীমান্ত হত্যার সেই মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ফেলানীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরমান হোসেনের (২১) এই নিয়োগ যেন দীর্ঘদিনের এক চাপা বেদনার মাঝে আশার দীপ্তি এনে দিয়েছে। পরিবারসহ স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে যাওয়া বোন ফেলানী খাতুনের অসমাপ্ত স্বপ্ন একদিন আরমান হোসেন পূর্ণ করবেন।

এইচএসসি পাস আরফান হোসেন নিয়োগপত্র পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ছেলের এই চাকরি তাঁর যোগ্যতায় হয়েছে, সবার দোয়াও ছিল। তাঁর ছেলে চাকরিজীবনে সততা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে। তাহলে তাঁর মেয়ে ফেলানীর আত্মা শান্তি পাবে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার পর কাঁটাতারে ঝুলে ছিল বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুনের মরদেহ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ