অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েই চলেছে, কমানোর পথ কী
Published: 4th, November 2025 GMT
স্বাধীনতার পর গত প্রায় সাড়ে পাঁচ দশকে বাংলাদেশ প্রায় সব ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু এই সাফল্যের বিপরীতে একটি উদ্বেগের বিষয়ও ক্রমেই বেড়েছে, তা হলো বৈষম্য। সম্পদ, আয়, সুযোগ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে, যা সামাজিক ন্যায়বিচার, অংশগ্রহণ ও স্থিতিশীল উন্নয়নের ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।
২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, ন্যায্যতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে প্রবৃদ্ধির ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। গণ–অভ্যুত্থান একটি মৌলিক প্রশ্ন সামনে এনেছে—কাদের জন্য উন্নয়ন? কারা সিদ্ধান্ত নেবে এবং কারা সুফল পাবে? গণ–অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের সঙ্গেও জড়িত।
কেবল আয় নয়, বৈষম্যের পরিধি অনেক বিস্তৃতবাংলাদেশে বৈষম্য নিয়ে আলোচনা প্রায়ই আয়বৈষম্যের মধ্যে সীমিত থাকে; কিন্তু বৈষম্য অনেক গভীর ও বহুমাত্রিক। প্রবেশাধিকার, মালিকানা, সুযোগ, কণ্ঠস্বর ও মর্যাদা ইত্যাদিসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে বৈষম্য রয়েছে।
আয়বৈষম্যের সূচক গিনি সহগ ০.                
      
				
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য সমাজকে আরেকটি স্তরে ভাগ করে দিয়েছে। সরকারি স্কুল ও হাসপাতালের মান কমে যাওয়ায় সামর্থ্যবানেরা বেসরকারি সেবা গ্রহণ করছেন, দরিদ্ররা নিম্নমানের সেবায় আটকে পড়েছেন।
লিঙ্গ, জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্য এখনো গভীর। নারী শ্রমিকেরা কম মজুরিতে ও অনিরাপদ কর্মপরিবেশে কাজ করছেন; আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রান্তিকতায় ভুগছে। কণ্ঠস্বরের বৈষম্য সবচেয়ে সূক্ষ্ম, কিন্তু বিপজ্জনক। সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজ, শ্রমজীবী মানুষ ও তরুণদের কণ্ঠস্বর প্রায় অনুপস্থিত।
কাঠামোগত বৈষম্যের অর্থনৈতিক শিকড়বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো এমনভাবে গঠিত, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈষম্য পুনরুৎপাদন করে। রাজস্বনীতি, শিল্পনীতি, আর্থিক খাত, শ্রমবাজার—সব ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও দুর্নীতি বৈষম্যকে স্থায়ী করে তুলেছে। রাজস্বকাঠামো বৈষম্যের অন্যতম প্রধান উৎস। রাজস্ব আয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে, যা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে। অন্য দিকে উচ্চ আয়শ্রেণি নানা করছাড় পায়, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক ফাঁকফোকর ব্যবহার করে কর এড়িয়ে যায়। ফলে রাজস্বব্যবস্থার ন্যায্যতা ভেঙে পড়ে।
শিল্পনীতি ও বিনিয়োগ কাঠামোতেও একই প্রবণতা। রাষ্ট্র বড় পুঁজিপতি ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা, করছাড় ও ব্যাংকঋণ বরাদ্দ করে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পান না। খেলাপি ঋণ, ব্যাংক লুট, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ধনীদের সম্পদ সুরক্ষিত করেছে, সাধারণ আমানতকারীর আস্থা নষ্ট করেছে। ব্যাংক খাত কার্যত নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষা ও শ্রমবাজারের দুর্বলতা দরিদ্রদের পিছিয়ে রেখেছে। মানসম্মত শিক্ষার অভাবে তাঁরা দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন না; শ্রমবাজারে তাঁদের মূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। এই বৈষম্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত।
পথই তাঁদের বাসস্থান, তাঁদের রান্নাঘরউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের তাগিদ ডিএসসিসির প্রশাসকের
সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনিযুক্ত প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) নগর ভবনে ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রশাসক এ মন্তব্য করেন।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর ধারা ২৫ ক এর উপধারা (১) এর অনুবৃত্তিক্রমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান কে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে ডিএসসিসির প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করে ২ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর ধারা ২৫ ক এর উপধারা (৩) অনুযায়ী প্রশাসক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এর ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএসসিসির প্রশাসক বলেন, “সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সেবা প্রদানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে সব শ্রেণির নাগরিক জীবনকে প্রভাবিত করে।”
রাজধানী শহরের অংশ হিসেবে কাজের গুরুত্ব ও স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। এ সময় তিনি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে জনসম্পৃক্ততা ও জনমত যাচাইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সব বিভাগীয় প্রধান, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/এসবি