মেঘে ঢাকা তারা: মাতৃকূটের জটিল প্রকাশ
Published: 4th, November 2025 GMT
দেশভাগের পর দেশমাতৃকার সঙ্গে নাড়িছেঁড়ার স্মৃতি নিয়ে পূর্ববঙ্গ থেকে কলকাতার এক প্রান্তে গিয়ে আশ্রয় নেয় নীতার পরিবার। সেখানে আরও অনেক উন্মূল মানুষের ভিড়। তারা গঠন করে কলোনি। কলোনির সবাই জানে নীতা অতি নম্র ও পরিশ্রমী মেয়ে। যে টিউশনির সামান্য টাকায় মা-বাবাসহ একাই চার ভাইবোনের সংসার চালায়। দারিদ্র্য তাদের নিত্যসঙ্গী। কলোনির গরিব মুদিদোকানি তাদের পছন্দ করে, কিন্তু বাকিতে সদাই দিতে দিতে সে–ও ক্লান্ত ও অসহায়। দেনার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। তাই দুটো কথা শুনিয়ে দেয় দোকানি। পায়ে থাকা নিতান্ত চপ্পলও যেন শ্রান্ত নীতার অপমান সইতে পারে না, ফটাস করে ছিঁড়ে যায় ফিতা। ভাগ্যের এমন নির্মম পরিহাস ও নীরবে তা সহ্য করে নিতে নিতে একদিন হারিয়ে যায় নীতা। কিন্তু সর্বত্র সে ছড়িয়ে দিয়ে যায় বাঁচার আকুতি। তবে কে তাকে মেরে ফেলল? নিষ্ঠুর যক্ষা? নির্মম নিয়তি? নিজের প্রতিবাদ না করতে পারার অক্ষমতা? নাকি আপন জন্মদাত্রী মায়ের নির্দয় সাংসারিক হিসাব–নিকাশ? আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, নীতার পরিণতির জন্য সব কারণই দায়ী। দায় যার ওপরেই বর্তাক না কেন, মূলকথা হলো যন্ত্রণাভোগ। যে নিজে মোমের মতো জ্বলে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যায়, কিন্তু আলোকিত করে যায় অন্যদের জীবন।
‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০) চলচ্চিত্রে নীতা (সুপ্রিয়া চৌধুরী) এমন এক চরিত্র, যে নিজে মাতৃত্বের স্নেহে ভাইবোনদের আগলে রাখে, কিন্তু আপন-মা হয়ে ওঠে পর। নীতা একমাত্র উপার্জনক্ষম বলে তাকেই নিংড়ে সংসার চালান জন্মদাত্রী মা। অবশ্য অন্য সন্তানদের ভর্ৎসনা করেন না, তা নয়। বড় ছেলে শঙ্কর (অনিল চট্টোপাধ্যায়) সংগীতসাধক, সে শিল্পী। সামান্য চাকরি–বাকরি নয়, সে চায় সংগীতের সাধনা করে একদিন অনেক বড় হবে। কিন্তু মা সেটা বুঝতে পারেন না। নীতা বুঝতে পারে অগ্রজ শঙ্কর আর দশজনের মতো নয়। শঙ্করকে নিয়ে তার এই বোঝাপড়া বিফলে যায়নি। কিন্তু তার আগপর্যন্ত সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া মা নিংড়ে নিতে থাকেন নীতাকে। নীতা মনে মনে কষ্ট পায়। সে আরও কষ্ট পায় যখন প্রেমিক সনৎ বিশ্বাসঘাতকতা করে, ছোট দুই ভাইবোনের স্বার্থপরতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে। এবং শেষ পর্যন্ত যখন শরীরটাও বেঁকে বসে, তখন মুষড়ে পড়ে আজীবন সংগ্রাম করতে থাকা নীতা।
গোটা ছবিতে নীতার মা নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর গোপন অভিপ্রায়ে নীতার সঙ্গে সনতের বিয়ে হয় না। নীতার বোন গীতা যে সনতের দিকে ঝুঁকে পড়ে ও তাকে বিয়ে করে, তার পেছনে কাজ করে মায়ের অভিসন্ধি। কারণ, তিনি চাননি নীতা বিয়ে করে অন্যের সংসারে চলে যাক।মেঘে ঢাকা তারা চলচ্চিত্রে নীতা চরিত্রে অভিনয়শিল্পী সুপ্রিয়া দেবী.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুর ১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন স্থগিত
বিএনপি'র ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণার একদিন পর মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে। রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কারণ হিসেবে 'অনিবার্য কারণ' উল্লেখ করা হয়েছে। মনোনয়ন ঘোষণার পর বঞ্চিত প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেনের অনুসারীরা বিক্ষোভ করলে দল এই সিদ্ধান্ত নেয়।