বয়স যখন ২০ বছর, তখন থেকেই প্রাণীদের সঙ্গে সখ্য শুরু মাসুদ হাওলাদারের। এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রাণীদের সঙ্গেই কাটে তাঁর। কখনো খাঁচায় বন্দী প্রাণীদের খাবার দেন, অসুস্থ হলে শুশ্রূষা করেন। কোথাও বন্য প্রাণী ধরা পড়লে উদ্ধার করতে ছুটে যান। শুশ্রূষার মাধ্যমে সেটিকে সুস্থ করে অবমুক্ত করেন মুক্ত পরিবেশে।

মাসুদ হাওলাদারের বয়স এখন ৩৮ পেরিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ বছরই কাটিয়ে দিয়েছেন প্রাণীর সেবায়। তিনি সিলেটে বন বিভাগের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের (টিলাগড় ইকোপার্ক) ‘অ্যানিমেল কিপার’ হিসেবে কর্মরত।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার হরিপাশা গ্রামে মাসুদের বাড়ি। এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। সিলেটের টিলাগড় ইকোপার্কে প্রায় ৯ বছর ধরে কাজ করছেন। এই ৯ বছরে মাত্র দুইবার ছুটি নিয়েছেন। বাকি সময় কাটিয়েছেন ইকোপার্কে থাকা প্রাণীর সেবায়। যা বেতন পান, তার পুরোটাই চলে যায় অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, মেয়ের ভরণপোষণ আর সংসার খরচে। বেতন-ভাতা কম হওয়ায় একাধিকবার চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে চেয়েছিলেন; কিন্তু প্রাণীগুলোর মায়ায় পড়ে তিনি সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।

দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় মাসুদ। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁর ছোট ভাই এলাকায় দিনমজুরির কাজ করেন। মাসুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়েছেন। জীবিকার তাগিদে তিনি ২০০৩ সালের দিকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় যান। এরপর বিভিন্ন কাজ করতে করতে একপর্যায়ে ২০০৭ সালের দিকে একটি মাছের হ্যাচারিতে কাজ শুরু করেন। সে সময় মাছের পোনা ও রেণু সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর পাখির দোকানে কাজ নেন। পরবর্তী সময়ে ওই পাখির দোকানের মালিকের মাধ্যমে ২০০৯ সালে গাজীপুরের সাফারি পার্কে প্রাণী রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সে সময় বাঘ, সিংহ, হরিণসহ নানা প্রাণী দেখভাল করতেন তিনি। একদিন হরিণের শিংয়ের আঘাতে হাতের একটি রগ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এরপর থেকে এক হাতে কম শক্তি পান; কিন্তু ৯ বছরেও স্থায়ী না হওয়ায় একপর্যায়ে ক্ষোভে চাকরি ছেড়ে দেন।

তবে প্রাণী ছেড়ে দূরে থাকতে পারেননি মাসুদ। ২০১৭ সালে সিলেট বন বিভাগ থেকে ডাক পড়ে মাসুদের। প্রাথমিকভাবে চুক্তিভিত্তিক এবং পরে স্থায়ীকরণের কথা বলে সিলেট বন বিভাগের আওতায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। এতে সায় দেন তিনি। প্রথমে ১১ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করেন সিলেট বন বিভাগে। এরপর তাঁর বেতন বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের দিকে করোনার সময়ে বেতন আবার কমিয়ে ১০ হাজারে নামিয়ে আনা হয়। এতে ক্ষোভ হয়েছিল মাসুদের। একাধিকবার চাকরি ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন; কিন্তু সংরক্ষণ কেন্দ্রে থাকা প্রাণীগুলোর প্রতি তাঁর আলাদা মায়ার কারণে আর ছেড়ে যেতে পারেননি।

দিনের বেশির ভাগ সময় প্রাণীদের সঙ্গে কাটে মাসুদ হাওলাদারের। চলে নানা খুনসুটিও। বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে