বেতন কম হলেও প্রাণীদের মায়ায় চাকরি ছাড়তে পারেন না মাসুদ
Published: 14th, February 2025 GMT
বয়স যখন ২০ বছর, তখন থেকেই প্রাণীদের সঙ্গে সখ্য শুরু মাসুদ হাওলাদারের। এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রাণীদের সঙ্গেই কাটে তাঁর। কখনো খাঁচায় বন্দী প্রাণীদের খাবার দেন, অসুস্থ হলে শুশ্রূষা করেন। কোথাও বন্য প্রাণী ধরা পড়লে উদ্ধার করতে ছুটে যান। শুশ্রূষার মাধ্যমে সেটিকে সুস্থ করে অবমুক্ত করেন মুক্ত পরিবেশে।
মাসুদ হাওলাদারের বয়স এখন ৩৮ পেরিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ বছরই কাটিয়ে দিয়েছেন প্রাণীর সেবায়। তিনি সিলেটে বন বিভাগের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের (টিলাগড় ইকোপার্ক) ‘অ্যানিমেল কিপার’ হিসেবে কর্মরত।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার হরিপাশা গ্রামে মাসুদের বাড়ি। এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। সিলেটের টিলাগড় ইকোপার্কে প্রায় ৯ বছর ধরে কাজ করছেন। এই ৯ বছরে মাত্র দুইবার ছুটি নিয়েছেন। বাকি সময় কাটিয়েছেন ইকোপার্কে থাকা প্রাণীর সেবায়। যা বেতন পান, তার পুরোটাই চলে যায় অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, মেয়ের ভরণপোষণ আর সংসার খরচে। বেতন-ভাতা কম হওয়ায় একাধিকবার চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে চেয়েছিলেন; কিন্তু প্রাণীগুলোর মায়ায় পড়ে তিনি সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় মাসুদ। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁর ছোট ভাই এলাকায় দিনমজুরির কাজ করেন। মাসুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়েছেন। জীবিকার তাগিদে তিনি ২০০৩ সালের দিকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় যান। এরপর বিভিন্ন কাজ করতে করতে একপর্যায়ে ২০০৭ সালের দিকে একটি মাছের হ্যাচারিতে কাজ শুরু করেন। সে সময় মাছের পোনা ও রেণু সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর পাখির দোকানে কাজ নেন। পরবর্তী সময়ে ওই পাখির দোকানের মালিকের মাধ্যমে ২০০৯ সালে গাজীপুরের সাফারি পার্কে প্রাণী রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সে সময় বাঘ, সিংহ, হরিণসহ নানা প্রাণী দেখভাল করতেন তিনি। একদিন হরিণের শিংয়ের আঘাতে হাতের একটি রগ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এরপর থেকে এক হাতে কম শক্তি পান; কিন্তু ৯ বছরেও স্থায়ী না হওয়ায় একপর্যায়ে ক্ষোভে চাকরি ছেড়ে দেন।
তবে প্রাণী ছেড়ে দূরে থাকতে পারেননি মাসুদ। ২০১৭ সালে সিলেট বন বিভাগ থেকে ডাক পড়ে মাসুদের। প্রাথমিকভাবে চুক্তিভিত্তিক এবং পরে স্থায়ীকরণের কথা বলে সিলেট বন বিভাগের আওতায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। এতে সায় দেন তিনি। প্রথমে ১১ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করেন সিলেট বন বিভাগে। এরপর তাঁর বেতন বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের দিকে করোনার সময়ে বেতন আবার কমিয়ে ১০ হাজারে নামিয়ে আনা হয়। এতে ক্ষোভ হয়েছিল মাসুদের। একাধিকবার চাকরি ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন; কিন্তু সংরক্ষণ কেন্দ্রে থাকা প্রাণীগুলোর প্রতি তাঁর আলাদা মায়ার কারণে আর ছেড়ে যেতে পারেননি।
দিনের বেশির ভাগ সময় প্রাণীদের সঙ্গে কাটে মাসুদ হাওলাদারের। চলে নানা খুনসুটিও। বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ বন ব ভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (নোবিপ্রবিসাস) এক যুগে পদার্পণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে।এতে ফিচার ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা সাংবাদিক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন নেউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের প্রতিনিধি মো. শফিউল্লাহ।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র্যালি, কেককাটা, আলোচনা সভা ও প্রকাশনা উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়।
দিনব্যাপী উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল নোবিপ্রবিসাসের বার্ষিক মুখপত্র ‘ফাউন্টেনপেন’-এর তৃতীয় সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মোড়ক উন্মোচন করেন।
আরো পড়ুন:
নোবিপ্রবিতে ১৩১ প্রজাতি বন্যপ্রাণী শনাক্ত
গোবিপ্রবির সায়েন্স ফেস্টে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সাফল্য
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক এবং নোবিপ্রবিসাসের উপদেষ্টা এ. এফ. এম. আরিফুর রহমান।
সভার সভাপতিত্ব করেন নোবিপ্রবিসাসের সভাপতি মো. ইমাম হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা সাংবাদিকের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় মঞ্চে সাংবাদিক সমিতি ও অন্য শিক্ষকরা ছিলেন।
বর্ষসেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন আমার দেশ-এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি নাহিদুল ইসলাম এবং আরটিভি-এর প্রতিনিধি মো. রিয়াদুল ইসলাম।
বর্ষসেরা বিশেষ প্রতিবেদন (প্রিন্ট) ক্যাটাগরিতে দৈনিক ইনকিলাব -এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মুস্তাকিম সাদিক এবং অনলাইন ক্যাটাগরিতে সময়ের কণ্ঠস্বর প্রতিনিধি তৌফিক আল মাহমুদ পুরস্কার অর্জন করেছেন।
ফিচার ক্যাটাগরিতে সেরা সাংবাদিকের পুরস্কার পেয়েছেন রাইজিংবিডি ডটকম-এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মো. শফিউল্লাহ।এবং সেরা কন্ট্রিবিউটরের পুরস্কার পেয়েছেন এশিয়ান টিভি-এর প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল তৌহিদ।
অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই সাংবাদিক সমিতি রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার চর্চা করেন। নোবিপ্রবির সাংবাদিকরাও জুলাই আন্দোলনের সময় সাহসিকতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করেছেন— যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ইতিহাস দীর্ঘ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এই ধারা শুরু। বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ফেক নিউজ। এই ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ক্লাবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
তিনি বলেন, “সত্য প্রকাশে সাহসী হতে হবে, মিথ্যা তথ্যের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির এক যুগ পূর্তিতে আমি শুভেচ্ছা জানাই। জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের সাহসী শিক্ষার্থীদের গল্পগুলো লিখে রাখুন— এগুলোই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হবে।”
নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকতা আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব অনেক গুণ বেড়ে গেছে। একটা সময় ছিল, যখন সত্য নিউজ প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। তবে এখন সময় এসেছে, সত্যকে সামনে নিয়ে আসার এবং ন্যায়ভিত্তিক সাংবাদিকতা করার।”
ঢাকা/শফিউল্লাহ/রাসেল