চীন নয়, পাকিস্তান-আফগানিস্তান বিরোধ মেটাবে রাশিয়া!
Published: 14th, February 2025 GMT
গত সপ্তাহে পাকিস্তানে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলবার্ট খোরেভ রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, তাঁর দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, রাশিয়া দুই পক্ষকেই দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উপায়ে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করে।
এ বক্তব্য যে ইঙ্গিত দেয়, তা হলো পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসায় মধ্যস্থতা করার আকাঙ্ক্ষা আছে রাশিয়ার। চীন এরই মধ্যে সেই প্রচেষ্টা চালালেও কিছু অর্জন করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার সফল হওয়ার ভালো সুযোগ আছে।
ইউরেশিয়ার অংশ হিসেবে অঞ্চলটি ঘিরে রাশিয়ার মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটি হচ্ছে মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে একই সঙ্গে কানেকটিভিটি (সংযোগজাল) ও জ্বালানি করিডর তৈরি।
সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে রাশিয়াকে অবশ্যই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে। দেশ দুটির মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনেও উদ্যোগ নিতে হবে। এরপর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নতিতেও কাজ করতে হবে।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, রাশিয়া এখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান—দুই দেশকেই তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ওপর ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত, রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়া, যাতে করে আফগানিস্তানের মাটি থেকে পাকিস্তানে সব ধরনের সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায়। দ্বিতীয়ত, তালেবান সদস্যদের অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা ও তাদের বিশেষ বাহিনীকে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া।এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রথম পদক্ষেপটা এরই মধ্যে অর্জন করেছে রাশিয়া। গত গ্রীষ্মে রাশিয়া তালেবানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এরপর ডিসেম্বর মাসে সম্পদের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি করে।
দ্বিতীয় ধাপ অর্জন করাটা অনেক বেশি কঠিন হবে। কিন্তু পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টায় রাশিয়ার সমর্থন আছে, রাষ্ট্রদূত খোরেভের এ বক্তব্যের পেছনে অন্তর্নিহিত কারণ আছে।
একদিকে খোরেভ স্বীকার করে নিয়েছেন আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের জন্য আসা সন্ত্রাসী হামলার হুমকির ব্যাপারটি, অন্যদিকে আবার এর জন্য পাকিস্তান যেভাবে তালেবানকে দায়ী করে, তিনি সেটা করেননি। এর বদলে তিনি ‘প্রয়োজনীয় সহায়তা’ দেওয়ার অস্পষ্ট একটা পথ বেছে নেন।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, রাশিয়া এখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান—দুই দেশকেই তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ওপর ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত, রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়া, যাতে করে আফগানিস্তানের মাটি থেকে পাকিস্তানে সব ধরনের সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায়। দ্বিতীয়ত, তালেবান সদস্যদের অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা ও তাদের বিশেষ বাহিনীকে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া।
যা–ই হোক, রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক ছিলেন। পাকিস্তান দাবি করে আসছে, টিটিপি (পাকিস্তানি তালেবান) ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে আফগানিস্তানের তালেবান। রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে একটি কথাও বলেননি। যা–ই হোক, এ অবস্থান থেকেই বোঝা যায়, রাশিয়া খুব সতর্কতার সঙ্গে দুই পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে।
এটা নিশ্চিত যে চীন এরই মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বিরোধে মেটাতে এই নীতি প্রয়োগ করেছে। চীনের সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে একে অন্যের ভূখণ্ড ব্যবহারের দরকার হয় না। তার প্রথম কারণ হলো, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড মহা–উদ্যোগের পতাকাবাহী প্রকল্প হলো চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। দ্বিতীয়ত, মধ্য এশিয়ার ভেতর দিয়ে চীনের রেল প্রকল্প।
সুতরাং চীন যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়, কিন্তু সেটার জন্য ভূ–অর্থনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার দরকার নেই।
রাশিয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা পুরোপুরি ভিন্ন। কারণ, রাশিয়ার যে ভূ-অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সেখানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সমস্যার সমাধান করা অপরিহার্য। কেননা রাশিয়ার কানেকটিভিটি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুতের করিডর শেষ পর্যন্ত ভারতে গিয়ে শেষ হবে।
এ কারণেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তান স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারে, মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে রাশিয়ার অংশীদারত্ব আরও বেশি।
আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের কেউই চীনের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে না। সে কারণে দুই দেশের উত্তেজনা সমাধানে চীনের সুযোগ কম। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে পাকিস্তান যোগাযোগ এবং জ্বালানি খাতে আরও সহায়তা পেতে পারে।
একইভাবে এই অবকাঠামো ও করিডরগুলো যদি ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, তাহলে আফগানিস্তানও লাভবান হবে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিরোধ মীমাংসায় বেইজিং যদি সফল হয়, তাহলে এ ধরনের কোনো সুবিধা চীনের কাছ থেকে দুই দেশ পাবে না।
যা–ই হোক, কী ঘটবে, তার ভবিষ্যদ্বাণী এখন করাটা বেশি আগাম হয়ে যাবে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে রাশিয়া। আর রাশিয়ার এ প্রচেষ্টা চীনের প্রচেষ্টা থেকে অর্থবহ হতে পারে।
আন্ড্রু কোরিবকো রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ও প ক স ত ন র প ক স ত ন ও আফগ ন স ত ন র আফগ ন স ত ন র ম ন আফগ ন স ত ন র জন য প
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।