গত সপ্তাহে পাকিস্তানে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলবার্ট খোরেভ রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, তাঁর দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, রাশিয়া দুই পক্ষকেই দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উপায়ে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করে।

এ বক্তব্য যে ইঙ্গিত দেয়, তা হলো পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসায় মধ্যস্থতা করার আকাঙ্ক্ষা আছে রাশিয়ার। চীন এরই মধ্যে সেই প্রচেষ্টা চালালেও কিছু অর্জন করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার সফল হওয়ার ভালো সুযোগ আছে।

ইউরেশিয়ার অংশ হিসেবে অঞ্চলটি ঘিরে রাশিয়ার মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটি হচ্ছে মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে একই সঙ্গে কানেকটিভিটি (সংযোগজাল) ও জ্বালানি করিডর তৈরি।

সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে রাশিয়াকে অবশ্যই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে। দেশ দুটির মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনেও উদ্যোগ নিতে হবে। এরপর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নতিতেও কাজ করতে হবে।

দেখেশুনে মনে হচ্ছে, রাশিয়া এখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান—দুই দেশকেই তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ওপর ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত, রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়া, যাতে করে আফগানিস্তানের মাটি থেকে পাকিস্তানে সব ধরনের সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায়। দ্বিতীয়ত, তালেবান সদস্যদের অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা ও তাদের বিশেষ বাহিনীকে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া।

এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রথম পদক্ষেপটা এরই মধ্যে অর্জন করেছে রাশিয়া। গত গ্রীষ্মে রাশিয়া তালেবানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এরপর ডিসেম্বর মাসে সম্পদের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি করে।
দ্বিতীয় ধাপ অর্জন করাটা অনেক বেশি কঠিন হবে। কিন্তু পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টায় রাশিয়ার সমর্থন আছে, রাষ্ট্রদূত খোরেভের এ বক্তব্যের পেছনে অন্তর্নিহিত কারণ আছে।

একদিকে খোরেভ স্বীকার করে নিয়েছেন আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের জন্য আসা সন্ত্রাসী হামলার হুমকির ব্যাপারটি, অন্যদিকে আবার এর জন্য পাকিস্তান যেভাবে তালেবানকে দায়ী করে, তিনি সেটা করেননি। এর বদলে তিনি ‘প্রয়োজনীয় সহায়তা’ দেওয়ার অস্পষ্ট একটা পথ বেছে নেন।

দেখেশুনে মনে হচ্ছে, রাশিয়া এখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান—দুই দেশকেই তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ওপর ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত, রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়া, যাতে করে আফগানিস্তানের মাটি থেকে পাকিস্তানে সব ধরনের সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায়। দ্বিতীয়ত, তালেবান সদস্যদের অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা ও তাদের বিশেষ বাহিনীকে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া।

যা–ই হোক, রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক ছিলেন। পাকিস্তান দাবি করে আসছে, টিটিপি (পাকিস্তানি তালেবান) ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে আফগানিস্তানের তালেবান। রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে একটি কথাও বলেননি। যা–ই হোক, এ অবস্থান থেকেই বোঝা যায়, রাশিয়া খুব সতর্কতার সঙ্গে দুই পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে।

এটা নিশ্চিত যে চীন এরই মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বিরোধে মেটাতে এই নীতি প্রয়োগ করেছে। চীনের সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে একে অন্যের ভূখণ্ড ব্যবহারের দরকার হয় না। তার প্রথম কারণ হলো, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড মহা–উদ্যোগের পতাকাবাহী প্রকল্প হলো চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। দ্বিতীয়ত, মধ্য এশিয়ার ভেতর দিয়ে চীনের রেল প্রকল্প।

সুতরাং চীন যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়, কিন্তু সেটার জন্য ভূ–অর্থনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার দরকার নেই।

রাশিয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা পুরোপুরি ভিন্ন। কারণ, রাশিয়ার যে ভূ-অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সেখানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সমস্যার সমাধান করা অপরিহার্য। কেননা রাশিয়ার কানেকটিভিটি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুতের করিডর শেষ পর্যন্ত ভারতে গিয়ে শেষ হবে।

এ কারণেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তান স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারে, মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে রাশিয়ার অংশীদারত্ব আরও বেশি।

আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের কেউই চীনের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে না। সে কারণে দুই দেশের উত্তেজনা সমাধানে চীনের সুযোগ কম। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে পাকিস্তান যোগাযোগ এবং জ্বালানি খাতে আরও সহায়তা পেতে পারে।

একইভাবে এই অবকাঠামো ও করিডরগুলো যদি ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, তাহলে আফগানিস্তানও লাভবান হবে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিরোধ মীমাংসায় বেইজিং যদি সফল হয়, তাহলে এ ধরনের কোনো সুবিধা চীনের কাছ থেকে দুই দেশ পাবে না।

যা–ই হোক, কী ঘটবে, তার ভবিষ্যদ্বাণী এখন করাটা বেশি আগাম হয়ে যাবে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে রাশিয়া। আর রাশিয়ার এ প্রচেষ্টা চীনের প্রচেষ্টা থেকে অর্থবহ হতে পারে।

আন্ড্রু কোরিবকো রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ও প ক স ত ন র প ক স ত ন ও আফগ ন স ত ন র আফগ ন স ত ন র ম ন আফগ ন স ত ন র জন য প

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’

বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’ 

পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।

২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
  • ১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
  • নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক
  • টাকার জন্য দেশে ছেড়েছি, এখন টাকা খরচের সময় নেই: পিয়া বিপাশা
  • মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা