পাকিস্তান কেন জেতা ম্যাচ হারে, হারা ম্যাচ জেতে
Published: 15th, February 2025 GMT
কখন কী হবে, ঠিক নেই! কখনো প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচে অবিশ্বাস্য বিপর্যয়ে হার, কখনো আবার হারতে থাকা ম্যাচে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়—এই যদি হয় আনপ্রেডিক্টিবিলিটির (অননুমেয়তার) সংজ্ঞা, তাহলে ক্রিকেটে সবচেয়ে ধারাবাহিক ‘আনপ্রেডিক্টেবল’পাকিস্তান ক্রিকেট দল। নামের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া এই তকমার সার্থকতা দলটি পূরণ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
এবার যেমন সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৫২ রান নজিরবিহীনভাবে ৬ উইকেট ও ৬ বল হাতে রেখেই টপকে গেছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। পাকিস্তানের পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ওয়ানডে ইতিহাসে এমনটি ঘটেছে এবারই প্রথম।
আবার সেই একই দল পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে আড়াই শর নিচেই অলআউট হয়ে গেছে। এ তো গেল ম্যাচের ফল। এ ছাড়া ম্যাচের ভেতরেও খুব ভালো অবস্থা থেকে বাজে অবস্থায় আর বাজে অবস্থা থেকে ভালো অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ তো প্রতিনিয়তই দেখা যায়।
এটা শুধু আমাদের ক্রিকেটের দোষ নয়, আমাদের সংস্কৃতি সব সময়ই এমন ছিল। এমনকি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।মোহাম্মদ রিজওয়ানপাকিস্তান ক্রিকেট দল ‘আনপ্রেডিক্টেবল’, এটা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে এমন অননুমেয় হয়ে ওঠার কারণ কী?
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর এক সংবাদিক পাকিস্তানের অননুমেয়তা নিয়ে অধিনায়ক রিজওয়ানকে জিজ্ঞেস করেন। বিশেষ করে বেশির ভাগ ম্যাচেই পাকিস্তান দলের জয় বা হারের দোলাচলে দুলতে দুলতে তারপর এক দিকে হেলে যাওয়া, একতরফাভাবে জিততে না পারার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই সাংবাদিক।
আরও পড়ুনভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে ৫ স্পিনার কেন, প্রশ্ন অশ্বিনের১ ঘণ্টা আগেজবাব দিতে গিয়ে পাকিস্তান অধিনায়ক যা বলেছেন, তা এ রকম—‘যদি আমাদের ক্রিকেটের দিকে তাকান, সেটা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোক, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোক বা আজকের ম্যাচেই হোক, সব সময়ই এই অননুমেয়তা ছিল। আমরা একতরফাভাবে খুব কমই ম্যাচ জিতি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
রিজওয়ান এখানেই থামেননি। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অননুমেয়তার কারণ শুধুই ক্রিকেটীয় নয় বলেও দাবি করেছেন, ‘কিন্তু এটা শুধু আমাদের ক্রিকেটের দোষ নয়, আমাদের সংস্কৃতি সব সময়ই এমন ছিল। এমনকি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।’
পাকিস্তানের জেতা ম্যাচ হারা আর হারার ম্যাচে জেতার কারণ তাহলে এটাই!
আরও পড়ুনছন্দহীন বাবর আজমও রেকর্ড ছুঁতে পারেন৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র স অনন ম য় র জওয় ন অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত
আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি।
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম।
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি।