সোনারগাঁয়ের লোকজ উৎসবে ‘সুবর্ণগ্রাম সংস্কৃতি অঙ্গন’-এর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
Published: 15th, February 2025 GMT
সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁও জাদুঘর) আয়োজিত লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে ‘সুবর্ণগ্রাম সংস্কৃতি অঙ্গন’-এর উদ্যোগে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মী শংকর প্রকাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ‘সুবর্ণগ্রাম সংস্কৃতি অঙ্গন’-এর সভাপতি কবি শাহেদ কায়েস। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সোনারগাঁও সাহিত্য নিকেতনের সাবেক সভাপতি কবি রহমান মুজিব।
শাহেদ কায়েস তাঁর বক্তব্যে বলেন— ‘সুবর্ণগ্রাম গত প্রায় দুই দশক যাবত সোনারগাঁয়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি সংস্কৃতিই সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।
সূচনাকাল থেকেই সংস্কৃতি, বিশেষ করে লোকসংস্কৃতি মানব সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। লোককাহিনীগুলোর মাধ্যমেই মানুষেরা সমাজের মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছায়।
সময়ের বিবর্তনে লোককাহিনী বিভিন্ন রূপ ধারন করে। যেমন মিথ, কিংবদন্তি, লোককাহিনী এবং প্রবাদ। যদিও লোককাহিনীর এই রূপগুলির প্রতিটিই স্বতন্ত্র, কিন্তু এই লোককাহিনী একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই বিকাশ লাভ করে।
যে বিশেষ গুনটি লোককাহিনীকে বিশেষ করে তোলে তা হলো এর মানবতাবাদী সুর।’ রহমান মুজিব বলেন, “লোক সঙ্গীত বাংলাদেশের সঙ্গীতের একটি অন্যতম ধারা। এটি মূলত বাংলার নিজস্ব সঙ্গীত। গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনের কথা, সুখ-দুঃখের কথা ফুটে ওঠে এই সঙ্গীতে।”
সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর ‘কল কল ছল ছল নদী করে টলমল/ ঢেউ ভাঙ্গে ঝড় তু'ফানে তেৃ’ এই দলীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। দলীয় সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করেন— উমা রায়, দোলন রানী, ভাবনা সূত্রধর, প্রিয়ন্তি আমিন পিউ, অমৃতা বর্মণ, স্নিগ্ধা বর্মণ, সেঁজুতি বর্মণ, রুপন্তি সরকার, দ্বৈতা দাস, সায়না সরকার, সান্ত্বনা চক্রবর্তী, স্মরণ চক্রবর্তী ও শংকর প্রকাশ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন— দোলন রানী, ভাবনা সূত্রধর, প্রিয়ন্তি আমিন পিউ, অমৃতা বর্মণ, রুপন্তি সরকার ও স্নিগ্ধা বর্মণ। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে শিশুশিল্পী হুমাইরা জেসনিন ও সেঁজুতি বড়ুয়া, ছড়া-কবিতা আবৃত্তি করে রেহনুমা সাহরিন রিহা, মোহাম্মদ আদেল রহমান, আবরার হোসাইন পরশ ও পারিশা পারভেজ আঁখি। অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনা ছিল মূকাভিনয়।
উজ্জ্বল উচ্ছ্বাসের রচনা ও নির্দেশনায় পর পর দু’টি মূকাভিনয়— ‘ভিজুয়াল লাইফ’ এবং ‘মব জাস্টিস সিঁধচোর’ পরিবেশন করে ‘মাইম ফেইস- নারায়ণগঞ্জ’।
মূকাভিনয় দু’টিতে অংশ নেন মূকাভিনয়শিল্পী উজ্জ্বল উচ্ছ্বাস, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, আবদুল হান্নান সোহান, আব্দুল জব্বার, মৌন লাকি, কাসেম আলী ও মায়শা হক পাপড়ি।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অন ষ ঠ ন পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।