দুর্নীতির তদন্তের মধ্যেই এমডি হন সাইফুল
Published: 16th, February 2025 GMT
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্তে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গত ৭ নভেম্বর পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আব্দুল মান্নান পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে। ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন মাস পার হলেও প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি। উল্টো তদন্ত চলাকালেই পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণাঙ্গ এমডি হয়েছেন সাইফুল।
গত ২ সেপ্টেম্বর এমডির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সচিবের কাছে আবেদন করেন জোবায়দুর রহমান ও মোর্শেদ আলম নামে দুই ব্যক্তি। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে এমডির দায়িত্ব পান সাইফুল। আগে তিনি খনির জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার টু কন্ট্রাক্টের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।
জানা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষের প্রায় ১ হাজার কোটির টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি টাকা দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী রয়েছে। তার পরও একই ব্যাংকে ২০২৩ সালে আরও ২ কোটি টাকা এফডিআর করা হয়। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে বেসরকারি চারটি ব্যাংকে ১১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
এদিকে খনির ২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) ব্যয় দেখানো হয় ৩৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে খনির ১৮২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকার বিছানার চাদর ও ছাতা ক্রয় দেখানোসহ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব বিলের ভাউচারগুলো এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
ভাউচারগুলো যাচাই করে দেখা যায়, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে মালপত্র কেনা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। সাইফুল মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে ২৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিধি অনুযায়ী কোম্পানির প্রফিট বোনাসের টাকা এমডির পাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ তিনি চাপ প্রয়োগ করে প্রফিট বোনাস হাতিয়ে নেন। এমনকি খনির পাথর বিক্রিতে অভিনব কায়দায় কমিশন আদায় করেন। তার প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান এই টাকা সংগ্রহ করেন।
অন্যদিকে এমডি সাইফুল ইসলামের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে (সোনালী ব্যাংক, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শাখা) অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। গত পাঁচ বছরে একটি হিসাব নম্বরে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি শুধু নগদ অর্থ জমা করা হয়েছে। আর লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ নিয়েও দুদকে অভিযোগ দেওয়া আছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল মান্নান পাটওয়ারী জানান, নানা কারণে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগির প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
অভিযুক্ত এমডি সাইফুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে সমকালকে বলেন, অভিযোগকারী জোবায়দুর রহমানকে তিনি চেনেন না। সুবিধা না পাওয়া কিছু ব্যক্তি ও খনি অভ্যন্তরের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, কোনো উৎকোচের বিনিময়ে নয়, ওপর মহলের মৌখিক নির্দেশনায় তা করা হয়েছে।
কোম্পানির ২৪তম এজিএম নিয়ে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে সাইফুল বলেন, কেনাকাটাসহ যাবতীয় ব্যয় ও কার্য সম্পাদনের জন্য পাঁচজন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখানে এমডির কোনো হাত থাকে না। কমিশন গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, ওপর মহলের চাপে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর স্থানান্তর করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম তদন ত এমড র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।