গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এবং গ্যাস লাইনের লিকেজ হইতে সৃষ্ট আগুনে মৃত্যুর মিছিল কিছুতেই থামানো যাইতেছে না। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার ঢাকার নিকটবর্তী সাভারের আশুলিয়ায় একটি আবাসিক ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণে শিশুসহ অন্তত ১১ জন দগ্ধ হন, তন্মধ্যে দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারাইয়াছেন। তদুপরি, অন্যদেরও অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নহে, যাহাদের অদিকাংশের শ্বাসনালি দগ্ধ হইয়াছে। সমকালের অপর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবারই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এক সিএনজি স্টেশনে গ্যাস পূর্ণকরণকালে অকস্মাৎ গাড়িতে আগুন লাগিয়া অভ্যন্তরে থাকা শিশু দগ্ধ হইয়া প্রাণ হারাইয়াছে। উপরন্তু, ৯ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হন একই পরিবারের তিনজন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, গত পাঁচ বৎসর গ্যাসলাইন ও সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ হইতে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে ৪৪ জন মৃত্যুবরণ করিয়াছেন; আহত হইয়াছেন শতাধিক। স্মরণ করা যাইতে পারে, অতীতের এহেন ঘটনায় আমরা সম্পাদকীয় লিখিয়াছি। সচেতন মহলও উক্ত বিপদ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে সতর্কীকরণ, তৎসহিত জনসচেতনতা গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়াছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সকলই কার্যত অরণ্যে রোদন। বিগত সময়ে সংঘটিত অনুরূপ দুর্ঘটনার পর উহা প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গৃহীত হইলে শুক্রবারের বিয়োগান্ত ঘটনাবলি সম্ভবত পরিহার করা যাইত।
এই প্রশ্নও গুরুতর যে, প্রাণঘাতী এই প্রতিবেশীর সহিত আমরা কতদিন বসবাস করিয়া যাইব? স্বীকার্য, প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বল্পতার কারণে সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে রন্ধনকার্যে জনপ্রিয় হইয়া উঠা ‘সিলিন্ডার গ্যাস’ তথা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস-এলপিজি ব্যবহারের বাস্তবতা অস্বীকার করা যাইবে না। কিন্তু বিশেষত মানহীন সিলিন্ডার ও নিরাপদ ব্যবহারবিধি সম্পর্কিত গ্রাহকের অজ্ঞতার কারণে উহা এক প্রকার মৃত্যুদূতে পরিণত হইয়াছে। একই কারণে ফিলিং স্টেশনে পরিবহনে গ্যাস পূর্ণকরণের সময়ও দুর্ঘটনা ঘটিতেছে।
শহরব্যাপী বিস্তৃত গ্যাসের পুরাতন জীর্ণ পাইপলাইনগুলিও মৃত্যুফাঁদ হইয়া উঠিয়াছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিবেশিত তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশে সাড়ে ৪ কোটির অধিক এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহৃত হইতেছে। বাসাবাড়ি ব্যতীত পরিবহন ও ক্ষুদ্র শিল্পের জ্বালানিরূপেও অনেকে এলপিজি ব্যবহার করিতেছেন। এই দুই খাতের বাহিরে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের প্রায় অর্ধলক্ষ সিলিন্ডার রহিয়াছে। কিন্তু সমস্যা হইল, একটা নির্দিষ্ট বিরতিতে এই সকল সিলিন্ডার পরীক্ষা করার নিয়ম থাকিলেও তাহা কদাচিৎ পালিত হয়। এমনকি স্থানীয় পর্যায়ে অনেক ব্যবসায়ী অনুমোদনের তোয়াক্কা না করিয়া নিজেরাই সিলিন্ডারে গ্যাস পূর্ণ করিয়া বিক্রয় করিতেছেন। যদিও এই গ্যাস পূর্ণকরণের সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। অন্যদিকে পুরাতন লাইনের পাশাপাশি আছে অবৈধ সংযোগ, নিম্নমানের পাইপের ব্যবহার।
অপরিকল্পিতভাবে সড়ক খননকার্য চলে সমগ্র বৎসর। এই সকল কারণে গ্যাসের সম্পূর্ণ বিতরণ নেটওয়ার্ক বিপৎসঙ্কুল হইয়া উঠিয়াছে। এদিকে এলপিজি ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটিলেও প্রতিবেদনমতে, উহা তদারকিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা অদ্যাবধি গড়িয়া উঠে নাই। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সিলিন্ডার পরীক্ষণে মাত্র একটি পরীক্ষাগার রহিয়াছে, তাহাও চট্টগ্রামে। বেসরকারি কোম্পানিগুলি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিলিন্ডার পরীক্ষা করে। সার্বিকভাবে বলা যায়, এত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি সত্ত্বেও সিলিন্ডার ও পাইলাইনের গ্যাস ব্যবহারে যথাযথ তদারকি ব্যবস্থা গড়িয়া না তোলার দায় সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলি উপেক্ষা করিতে পারে না। তাহাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
আমরা মনে করি, শুক্রবারের ঘটনাসমূহ দিয়াই উক্ত প্রক্রিয়া আরম্ভ হইতে পারে। যাহাদের উদাসীনতার কারণে উক্ত প্রাণঘাতী ঘটনাসমূহ ঘটিয়াছে, তাহাদের যদ্রূপ আইনের আওতায় আনিতে হইবে, তদ্রূপ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে। সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলিকে পুনর্বিন্যস্ত করিবার পদক্ষেপও সময়ের দাবি বলিয়া আমরা মনে করি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র পর ক ষ এলপ জ র ঘটন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
আরো পড়ুন:
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল
সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন
মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
ঢাকা/শরিফুল/রফিক