প্রসব–পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় অসুস্থ ছিলেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক নারী। মারা গেছে তাঁর সদ্যোজাত শিশুটিও। এমন অবস্থায় গত কয়েক দিন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন অজ্ঞাতপরিচয়ের ওই নারী।

এ খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ওই নারীকে নিজ বাসায় নিয়ে গেছেন নবাবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা ইসলাম। পরিবার বা স্বজনদের কাছে ওই নারীকে পৌঁছে দিতে চান তিনি।

দিলরুবা ইসলাম বলেন, ‘বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এই নারী শুধু নিজের নাম “জেমি” বলতে পারেন। আর বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে জবাবে গাজীপুরের টঙ্গীর কথা জানান। এর বাইরে আর কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। তাঁকে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’
নবাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা সামসুল ইসলাম খান বলেন, ওই প্রতিবন্ধী নারীর সন্তানের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গতকাল দুপুরে রাজধানী ঢাকার শিশু হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর বিকেলে শিশুটি মারা যায়।

এদিকে ওই নারীকে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে আজ বুধবার সকালে সংবাদকর্মীদের সহযোগিতায় চেয়েছেন ইউএনও দিলরুবা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ওই নারীকে দেখে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে হয়নি। তাঁকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আমার সরকারি বাসায় রেখেছি।’ ওই নারীর পরিবার বা স্বজনদের নবাবগঞ্জ ইউএনও কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বজনদ র ওই ন র ক ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি