ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নের শড়াতলা গ্রামে বাদ্যযন্ত্র, হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিষিদ্ধ করে দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো সব নোটিশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওই গ্রাম পরির্দশনে যান। এর পর সেখান থেকে নোটিশগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। পরে নোটিশে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে ভুল স্বীকার করেন।

শড়াতলা গ্রামের কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগে গ্রামের কিছু যুবক উচ্চ স্বরে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে অনুষ্ঠান করছিল। পাশেই অসুস্থ এক বৃদ্ধ এতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন। তাই গ্রামের কয়েকজন ওই যুবকদের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ঘটনার পর আলোচনা করে সমাজপতিরা সিদ্ধান্ত নেন, গ্রামে বাদ্যযন্ত্র, হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। 

শড়াতলা মসজিদ কমিটির সভাপতি এনামুল হকের নেতৃত্বে গ্রামের মসজিদে বসে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২৫ দিন আগে গ্রামের অন্তত ১০টি দোকানে ও কয়েকটি বাড়ির দেয়ালে ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ফটোকপি সাঁটানো হয়।

নোটিশের শেষ অংশে ‘গ্রামবাসীর পক্ষে’ ১৮ জন সই করেছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি, শিক্ষক ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। নোটিশে সইয়ের অংশের প্রথমে হাতে লিখে ইউএনওর সরকারি নম্বরও দেওয়া হয়। 

সই করা ১৮ জনের মধ্যে রয়েছেন– শড়াতলা পশ্চিম পাড়া মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী এনামুল হক, শড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাশিউর রহমান, স্থানীয় দোকানি সাজেদুল, শিক্ষক আবু সালেহ, হরিণাকুণ্ডু কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী, ফলসী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা (পদ নেই) তৌহিদুর রহমান টুটুল, ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাব্বত আলী, বলরামপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল মালেক, সালেহা বেগম মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয় বিএনপি নেতা (পদ নেই) ইন্তাজুল হক, ফলসী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, তাঁর ভাই ব্যবসায়ী নজরুল মোল্লা, ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী ও দলিল লেখক আজিম উদ্দিন, শড়াতলা জামে মসজিদের সাবেক সভাপতি ও জামায়াত কর্মী সুলতান, আওয়ামী লীগ সমর্থক ও দোকানি মশিউর, আওয়ামী লীগের সমর্থক ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা, বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল ফাত্তাহ (রুমি)।

বাদ্যযন্ত্র, হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে গতকাল সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শড়াতলা গ্রামে যান ইউএনও বি এম তারিক-উজ-জামান। সেখানে তিনি নোটিশে সই করা ব্যক্তিদের খোঁজ করেন। তাদের কাউকে না পেয়ে কার্যালয়ে ফিরে হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বাদ্যযন্ত্র, হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সাঁটানো নোটিশে সই করা ব্যক্তিদের ইউএনও কার্যালয়ে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর সই করা ১৮ জনের মধ্যে চারজন বিকেল ৩টার দিকে সেখানে যান। তাদের সঙ্গে গ্রামের আরও চারজন ছিলেন। 

জানা গেছে, নোটিশে সই করা চারজন ইউএনওর কাছে ভুল স্বীকার করেন। ইউএনও তাদের নির্দেশ দেন, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ১৮ জনকেই হাজির হতে হবে এবং এ ঘটনার লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে। এর পর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

ইউএনও কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘আমি চাপে আছি’। সেখানে থাকা মসজিদ কমিটির সভাপতি এনামুল হক বলেন, ‘আমরা অনেকেই এই ঘটনার সময় বৈঠকে ছিলাম। তবে এটা করা আমাদের ভুল হয়েছে।’

শড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাশিউর রহমান বলেন, ‘বিধিবহির্ভূত কাজের সঙ্গে থাকা আমার ঠিক হয়নি।’

জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা বলেন, উপজেলা প্রশাসন তদন্ত করে সত্যতা পেলে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ফলসী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এ ধরনের ঘটনা সমর্থন করি না। সমর্থক-কর্মীদেরও বলে দিয়েছি, এ ধরনের কাজ করা যাবে না। ইউএনও কার্যালয়ে যাওয়ার আগে কয়েকজন আমাদেরও তাদের সঙ্গে যেতে বলে। কিন্তু আমরা জানিয়ে দিয়েছি, এ ধরনের আইনবিরোধী কাজে সহযোগিতা করতে পারব না।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা জামায়াতের আমির বাবুল হোসেনের দাবি, শড়াতলার ঘটনার সঙ্গে তাদের দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

ইউএনও তারিক-উজ-জামান বলেন, শড়াতলা গ্রামের ঘটনাটি জানার পর থেকেই পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরাও কাজ করছি। এরই মধ্যে সব নোটিশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নোটিশে আমার যে নম্বর দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব দ যযন ত র র রহম ন ব যবস থ হক র ও সরক র উপজ ল ব এনপ আওয় ম ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী

অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।

গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।

এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।

আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগে

গতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।

ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’

সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।

আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ৩১টি পরিবার
  • পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী