একুশে বইমেলায় রুহুল আমিনের ‘মোহ কাঠের নৌকা’
Published: 19th, February 2025 GMT
অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে রুহুল আমিনের প্রথম উপন্যাস ‘মোহ কাঠের নৌকা’। বইটি প্রকাশ করছে বাংলানামা প্রকাশনী। বুধবার থেকে বইটি বইমেলার বাংলানামার (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫৬০ নম্বর) স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।
১০ ফর্মার বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কমল ঠাকুর। বইটির বিক্রয় মূল্য ৪৫০ টাকা। এটি লেখকের তৃতীয় গ্রন্থ। আগের দুটি ছিল কাব্যগ্রন্থ।
রুহুল আমিন মূলত কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। একসময় লিটলম্যাগ করতেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ফিচার, গল্প ও প্রবন্ধ লিখে থাকেন। বর্তমানে কাজ করছেন দৈনিক কালবেলা পত্রিকার অনলাইন বিভাগের শিফট ইনচার্জ হিসেবে।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাংলানামার স্বত্বাধিকারী লেখক ও সাংবাদিক হোসেন শহীদ মজনু বলেন, আমরা সবসময় গুণগতমান সম্পন্ন বই প্রাধান্য দেই। লেখকের বয়স বা নাম, খ্যাতি আমাদের কাছে কোনো ফ্যাক্টর নয়, কনটেন্টই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে রুহুল আমিনের ‘মোহ কাঠের নৌকা’ও ব্যতিক্রম নয়। লেখক রুহুল আমিন তার উপন্যাসে একটা নির্দিষ্ট সময়কে সুচারুরূপে উপস্থাপন করেছেন। ছোট ছোট বাক্যে, ছোট ছোট শব্দে মনের গভীর অনুভূতিকে ভিন্নভাবে অনুভব ও উপস্থাপনে সাংবাদিকতা সুলভ সক্রিয় বৈশিষ্ট্য তার উপন্যাসেও বিবৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, রুহুল আমিন নিজেও সাংবাদিক, তাই তার লেখনীতে সাংবাদিকের দৃষ্টিভঙ্গি, দৃষ্টিকোণ প্রাধান্য যেমন পেয়েছে, তেমনি বিশ্লেষিত হয়েছে সাধারণ এক তরুণের চিত্ররূপও! একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের সময় এক তরুণ সাংবাদিকের মনোভাবনা, আবার পেশাগত জীবনের খুব ছোটখাটো বিষয় এবং যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গ মিলেমিশে একাকার হয়েছে মোহ কাঠের নৌকায়। মননশীল, সৃজনশীল ও নির্মেদ তরুণকে যাপিত-জীবনের নাড়িনক্ষত্রসহ সুন্দর-সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। বইটির বহুল প্রচার ও পাঠকপ্রিয়তা প্রত্যাশা করছি।
উপন্যাসটি সম্পর্কে রুহল আমিন বলেন, একজন সংবাদকর্মীর পেশাগত, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখানোর চেষ্টা করছি। একেকজন মানুষের চিন্তা জগৎ একেকরকম। মনোজগৎও ভিন্ন। একটি ঘটনাকে ভিন্ন মানুষ, ভিন্নভাবে দেখে। এই যে দেখার এই ভিন্নতা তারও একটা সৌন্দর্য আছে। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্রও তার জীবনের নানা ঘটনাকে নিজের মতো করে দেখে। সে দেখাটা কেমন হয়েছে তা পাঠকের প্রতিক্রিয়াতেই বুঝতে পারবো। আশা করছি, উপন্যাসটি পাঠকের কাছে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল র হ ল আম ন উপন য স জ বন র ত জ বন
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ