কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি কলেজের শহীদ মিনার বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভেঙে ফেলার ঘটনায় দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ পৃথক এই তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এদিকে, ওই ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করা হয়েছে বলে জানান চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

জামাল হোসেন বলেন, “শহীদ মিনার ভাঙার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। ঘটনা তদন্ত করতে উপজেলা কৃষি অফিসার জোবায়ের আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজারের ছয় প্রতিবেদন জমা, দোষীরা মোড়কবন্দি

গোপালগঞ্জে সমন্বয়কদের ওপর হামলা, তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন

আরো পড়ুন: কুমিল্লায় শহীদ মিনারে ভাঙচুর

কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম মীর হোসেন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে, কলেজের পক্ষ থেকে আরো একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক সারোয়ার ওসমানকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কলেজের অপর দুই শিক্ষককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাদের আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। 

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে শিক্ষকরা এবং পরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা কলেজ চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সবাই ক্যাম্পাস থেকে চলে যান। রাত ২টার দিকে বিকট শব্দ পেয়ে কলেজের নৈশপ্রহরী শহীদ মিনারের কাছে যান। তিনি দেখতে পান, শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুটি ভেঙে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা।

গুণবতী ডিগ্রি কলেজের কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “কলেজের শহীদ মিনারটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে কেউ না ভাঙলে এভাবে এটির নিচে পড়ে যাওয়ার কথা নয়।”

কলেজের নৈশপ্রহরী শামসুল আলমের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, “রাত প্রায় ২টার দিকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে শহীদ মিনার চত্বরে যান নৈশপ্রহরী। সেখানে গিয়ে দেখেন শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুটি স্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন বলেন, “কলেজের পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করা হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় এখনই ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় ব্যক্তিরাই জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, “শহীদ দিবসে শহীদ মিনারের প্রতি এমন আক্রোশ মেনে নেওয়া যায় না। আশা করব, দ্রুত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জড়িতদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবে। অপরাধীরা রক্ষা পেয়ে গেলে এমন ঘটনা আরো ঘটতে থাকবে।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল জ র ঘটন য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ