কুমিল্লায় শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় ২ তদন্ত কমিটি
Published: 22nd, February 2025 GMT
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি কলেজের শহীদ মিনার বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভেঙে ফেলার ঘটনায় দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ পৃথক এই তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এদিকে, ওই ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করা হয়েছে বলে জানান চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারের ছয় প্রতিবেদন জমা, দোষীরা মোড়কবন্দি
গোপালগঞ্জে সমন্বয়কদের ওপর হামলা, তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন
আরো পড়ুন: কুমিল্লায় শহীদ মিনারে ভাঙচুর
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম মীর হোসেন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে, কলেজের পক্ষ থেকে আরো একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক সারোয়ার ওসমানকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কলেজের অপর দুই শিক্ষককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাদের আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে শিক্ষকরা এবং পরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা কলেজ চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সবাই ক্যাম্পাস থেকে চলে যান। রাত ২টার দিকে বিকট শব্দ পেয়ে কলেজের নৈশপ্রহরী শহীদ মিনারের কাছে যান। তিনি দেখতে পান, শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুটি ভেঙে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা।
গুণবতী ডিগ্রি কলেজের কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “কলেজের শহীদ মিনারটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে কেউ না ভাঙলে এভাবে এটির নিচে পড়ে যাওয়ার কথা নয়।”
কলেজের নৈশপ্রহরী শামসুল আলমের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, “রাত প্রায় ২টার দিকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে শহীদ মিনার চত্বরে যান নৈশপ্রহরী। সেখানে গিয়ে দেখেন শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুটি স্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন বলেন, “কলেজের পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করা হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় এখনই ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় ব্যক্তিরাই জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, “শহীদ দিবসে শহীদ মিনারের প্রতি এমন আক্রোশ মেনে নেওয়া যায় না। আশা করব, দ্রুত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জড়িতদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবে। অপরাধীরা রক্ষা পেয়ে গেলে এমন ঘটনা আরো ঘটতে থাকবে।”
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল জ র ঘটন য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।