সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায় বিএনপির সহযোগী দুটি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ‘যুবলীগ’নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় এ সংঘর্ষ হয়। তারা একে অপরের পৃথক দুটি ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করে।

এ ঘটনায় গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপজেলার মধ্যনগর বাজার ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।

মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় নিরাপত্তার স্বার্থে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আবদুস শহীদ (৩৭) ও মধ্যনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক সুজন মিয়ার (৪৭) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।

মধ্যনগর থানার পুলিশ জানায়, উপজেলার আটাইশা মাছিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান (৩২) মধ্যনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি। গত বছরের ২৭ নভেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা একটি মামলায় গতকাল বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই আসামিকে বিএনপির কর্মী দাবি করে থানা থেকে ছাড়াতে আসেন যুবদল নেতা আবদুস শহীদ। আসামিকে না ছাড়ায় ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁর নেতৃত্বে লোকজন নিয়ে মধ্যনগর বাজারে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

মধ্যনগর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে সুজন মিয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ূমের ব্যক্তিগত কার্যালয় ও আসবাব ভাঙচুর করেন আবদুস শহীদের সমর্থকেরা। রাত ৯টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আবদুস শহীদের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের আসবাব ভাঙচুর করেন সুজন মিয়ার সমর্থকেরা। রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সুজন মিয়া বলেন, ‘যাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তিনি একজন যুবলীগ নেতা। আমি তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সহায়তা করিনি।’ আবদুস শহীদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁর এক সমর্থক বলেন, ‘যাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি বিএনপির সক্রিয় কর্মী। সুজন মিয়া তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে উৎসাহিত করেছে।’

মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সজীব রহমান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর স ন মগঞ জ স জন ম য় ব এনপ র স ঘর ষ য বল গ উপজ ল র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত

লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। 

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। 

জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা। 

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। 

বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো। 

আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।

ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। 

আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’  

উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ