দিল্লিতে মুসলিমশূন্য মন্ত্রিসভা গড়ল বিজেপি
Published: 23rd, February 2025 GMT
দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর পর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরেছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর এই নির্বাচনে প্রথমবার বিধায়ক পদে জয় পেয়েই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দলটির নারী নেত্রী রেখা গুপ্ত।
এবারে দিল্লির শালিমার বাগ আসন থেকে বিধায়ক পদে জয়ী হন তিনি। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে ২৯ হাজার ৫৯৫ ভোটে জেতেন রেখা। আম আদমি পার্টির (আপ) বন্দনা কুমারীকে হারিয়ে দেন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেত্রী।
সম্প্রতি রেখাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করান দিল্লির লেফট্যানেন্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও আরও ছয়জন বিধায়ক মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
আরো পড়ুন:
কোহলির ফিফটি, দেড়শ পেরিয়ে ভারত
মহারণের আগে সব বিভাগেই পিছিয়ে ‘আনপ্রেডিকটেবল’ পাকিস্তান
কিন্তু বিজেপিশাসিত এই রাজ্যে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি থাকলেও একজনও মুসলিম মন্ত্রী নেই। যদিও তথ্য বলছে, দিল্লিতে সংখ্যালঘু মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১২ শতাংশ।
এর আগে জাতীয় কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি (আপ) সরকারের মন্ত্রিসভায় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও এবার বিজেপি শাসনামলে মুসলিমশূন্য মন্ত্রিসভা গঠন হয়েছে।
মূলত, যে কোনো ইস্যুতেই লাগাতার সংখ্যালঘু উন্নয়নের বার্তা দেয় বিজেপি। কিন্তু চলতি বছরে শেষ হওয়া দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনে সেই বিজেপির প্রার্থী তালিকাতেই ছিল না কোনো মুসলিম মুখ।
এমনকি দিল্লির যেসব বিধানসভা কেন্দ্র সংখ্যালঘু মুসলিম প্রভাবিত এলাকা হিসেবেই পরিচিত, অর্থাৎ তুঘলকাবাদ, সিলমপুর, ওয়াজিরপুর, মুস্তাফাবাদ, বাবরপুরের মতো দিল্লির বেশ কয়েকটি বিধানসভা আসন।
সেইসব আসনে কোনো মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করায়নি বিজেপি। ফলে স্বভাবতই জয়ী হওয়ারও কোনো প্রশ্নই নেই। ফলে এবারে দিল্লির সরকারে নেই কোনো মুসলিম প্রতিনিধি।
১৯৯৩ সালে প্রথমবার দিল্লিতে ক্ষমতা এসেছিল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মদন লাল খুরানা। সেবারও সেই মন্ত্রিসভায় কোনো মুসলিম সদস্য ছিলেন না। যদিও সেবার কোনো মুসলিম প্রার্থী ওই নির্বাচনে জয় পাননি।
এরপর ১৯৯৮ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতায় আসে জাতীয় কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শীলা দীক্ষিত।
তার শাসনামলে দিল্লি মন্ত্রিসভায় মুসলিম মন্ত্রী ছিলেন পারভেজ হাশমি। পরিবহন ও পাবলিক ওয়ার্কসের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০০৩ সালে দিল্লিতে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হন শীলা দীক্ষিত। ওই মন্ত্রিসভায় বালিমারান কেন্দ্র থেকে জয়ী কংগ্রেস বিধায়ক হারুন ইউসুফকে জায়গা দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস এবং তখনও শীলা দীক্ষিতের মন্ত্রিসভায় মুসলিম মুখ হিসেবে মন্ত্রী করা হয় হারুন ইউসুফকে। এরপর অবসান ঘটে কংগ্রেস জামানার।
২০১৩ সালে দিল্লিতে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে প্রথমবারের জন্য ক্ষমতায় আসে আপ। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন সেই সরকারে কোনো মুসলিম মন্ত্রী ছিল না। যদিও সেই সরকারের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৪৯ দিন।
কিন্তু ২০১৫ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আপ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রী করা হয় আসিম আহমেদ খানকে। খাদ্য সরবরাহ, পরিবেশ এবং সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী করা হয় তাকে। কিন্তু পরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে বরখাস্ত করা হয়, তার জায়গায় মন্ত্রী করা হয় ইমরান হোসেনকে।
২০২০ সালে দিল্লিতে ফের আপ ক্ষমতায় আসার পর কেজরিওয়াল মন্ত্রিসভায় জায়গা পান ইমরান হোসেন এবং শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব সামলান।
এবারে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে মোট ৭০ আসনের মধ্যে বিজেপি জয় পায় ৪৮ আসনে। বাকি ২২ আসনে জয় পায় আম আদমি পার্টি।
ঢাকা/সুচরিতা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম খ যমন ত র র মন ত র ব ধ নসভ ক ষমত য সরক র শপথ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের যত ঘুঘু
মনিরা হাঁসের (বৈকাল টিল) সন্ধানে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বটতলা ঘাট থেকে ছেড়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আধঘণ্টায় সিমলা পার্কের উল্টো পাশের চরের কাছে আসতেই একটি ঘুঘুকে পাড়ে বসে থাকতে দেখলাম। দ্রুত একটি ছবি তুলে ওটির পরিচয় নিশ্চিত হলাম। এই দুল৴ভ পাখিটি প্রথম দেখি ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ কুয়াশাভরা সকালে হবিগঞ্জের কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে। এরপর ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি সুন্দরবনের করমজলে।
পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর কাছ থেকে ভালো ছবি তোলার আশায় ধীরে ধীরে নৌকা পাখিটির কাছাকাছি নিতে থাকি। তবে নৌকা যতই কাছে যাক না কেন, সেটি কিন্তু অবিচল—একটুও নড়ছে না, চুপচাপ বসে আছে। কৌতূহলবশত নৌকা থেকে পাড়ে নামলাম, পাখিটির একদম কাছে চলে গেলাম। এরপর সেটি ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করল। আমরাও পিছু নিলাম। কিছুক্ষণ পর অনেকটা অনিচ্ছায় উড়াল দিল পাখিটি।
ঘুঘু পাখি কবুতরের মতো একই গোত্র কোলাম্বিডির (কপোত) সদস্য। ঘুঘুর দেহ কবুতরের মতোই তুলনামূলক ভারী, মাথা ছোট, চঞ্চু ও পা খাটো। ওড়ার পেশি শক্তিশালী। তাই দ্রুত ও দীর্ঘক্ষণ উড়তে সক্ষম। লেজ হাতপাখার মতো বিস্তৃত। তবে আকারে কবুতরের চেয়ে ছোট হয়। এরাও স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষ পিত্তথলিতে উৎপন্ন ক্ষীরের মতো অর্ধতরল দুধ খাইয়ে ছানাগুলোকে বড় করে তোলে, যা ‘পায়রা বা ঘুঘুর দুধ’ নামে পরিচিত। এদেশে এই গোত্রের যে ১৮টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ১০টি কবুতর ও ৮টি ঘুঘু রয়েছে। প্রায় অর্ধেকের বেশি প্রজাতি সারা বছর প্রজনন করে। আয়ুষ্কাল চার থেকে ছয় বছর। এখানে এ পাখির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।
রামঘুঘু (ওরিয়েন্টাল টার্টল ডাব): ফিচারের শুরুতে লালচে বাদামি বর্ণের যে ঘুঘুর গল্প বললাম, সেটি এ দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি রাম, কইতর বা গোলাপ ঘুঘু। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বহু দেশে এর দেখা মেলে। প্রাপ্তবয়স্ক ঘুঘুর দেহের দৈর্ঘ্য ৩৩ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬৫ থেকে ২৭৪ গ্রাম।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় উড়ন্ত ধবল ঘুঘু